খামারের মুরগি ভাইরাসজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এসব রোগের মধ্যে গামবোরো অন্যতম।
মুরগির বয়স ২ মাস হলে গামবোরো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সঠিক সময়ে মুরগির গামবোরো রোগের চিকিৎসা না করা হলে খামারের সব মুরগি মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা যায়, সর্বপ্রথম আমেরিকার সাসেক্সের গামবোরো নামক স্থানে ১৯৬২ সালে এটি প্রথম শনাক্ত হয়।
গামবোরো হলে মুরগির লসিকা গ্রন্থি বারসাকে আক্রান্ত করে বলে একে ইনফেকসাস বারসাল ডিজিজ-ও বলা হয়।
মুরগির গামবোরো রোগ বিরনা নামক ভাইরাসের ফলে হয়ে থাকে। যদিও এর দুটি সেরোটাইপ আছে তবে, একটিই (সেরোটাইপ-১) প্রোল্ট্রির ক্ষতির কারণ। ভাইরাসটি মুরগির ‘বারসা ফেব্রিসিয়াস’ কে আক্রান্ত করে।
এর ফলে মুরগির প্রতিরোধ ক্ষমতা, খাদ্য রূপান্তর দক্ষতা কমে যায়। সাধারণত শতকরা ৩০ ভাগ মুরগির এ রোগ হলে মৃত্যু হয়। মুরগি মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হলে সে ক্ষেত্রে এর চেয়েও পরিমাণে মারা যেতে পারে।
সেরোটাইপ-১ শধুমাত্র মুরগিকে আক্রান্ত করে। সেরোটাইপ-২ মুরগী, টার্কি, পেঙ্গুইনসহ বেশ কিছু বন্য পাখির হতে দেখা যায়। তবে এটির তেমন কোনো প্রভাব নেই।
গামবোরো বা ইনফেকসাস বারসাল ডিজিজ একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। সাধারণত সংক্রামিত বা আক্রান্ত মুরগি থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ে। এবং খুব দ্রুতই সমস্ত ফ্লকে এটি বিস্তার লাভ করে। ভাইরাসটি সহজেই একটি শেড বা ফার্ম থেকে অন্য শেডে যেতে পারে। অধিক ঘনত্বে মুরগি পালন, বিভিন্ন বয়সের মুরগি একসঙ্গে রাখা, দুটি ব্যাচের মাঝের সময় শেড খালি না রাখা ও বায়োসিকিউরিটিসহ বেশ কিছু কারণে গামরোরো হতে পারে। প্যারেন্টস থেকে বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও গামবোরো রোগের কারণ হতে পারে।
মুরগির গামবোরো রোগ হলে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন মুরগি দুর্বল, নিস্তেজ ও ডিহাইড্রেট হয়ে পড়ে। মুরগি পাতলা পায়খানা করে এবং পায়াখানা সাদা চুনের মতো দেখায়। এক জায়গায় বসে থাকে, নড়াচড়ায় অনীহা প্রকাশ করে। মুরগির পালক উস্কোখুস্কো থাকে। মুরগির শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। হঠাত করেই শুরু হয় ও মৃত্যুহার বেড়ে যায়। ভেজা মলদ্বার দেখা যায়।
এছাড়াও এই রোগ হলে মুরগির অভ্যন্তরীণ কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। যেমন পা ও রানের মাংসের ওপর ছোপ ছোপ রক্তের ছিটা দেখা যায়। মুরগির বারসা ফুলে যায় এবং বার্সা কাটলে ভিতরে রক্তের ছিটা দেখা যায়। কলিজা বেশ বড় ও ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কিডনি বড় হয়ে যায়।
গামবোরো হলে মুরগির ডিহাইড্রেশন হয়। ফলে মুরগির প্রচুর ইলেক্ট্রোলাইট ঘাটতি পড়ে। এজন্য স্যালাইন পানি বা অনেকে গুড়ের পানি সরবরাহের কথা বলে থাকেন। দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য এন্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৭আগস্ট ২০২২