মুরগির ঘর তৈরির নিয়ম বা মুরগি ঘর কেমন হয়া উচিৎ সে সম্পর্কে আমরা আজ জানব, মুরগির ঘর সাধারণত একটি অভ্যন্তরীণ অঞ্চল যেখানে মুরগিরা ঘুমাতে এবং বাসা বেঁধে থাকতে পারে, পাশাপাশি একটি বেড়া অভ্যন্তরীণ বাইরের অঞ্চল যেখানে মুরগিরা বেশিরভাগ সমায় ব্যয় করবে। খাঁচা প্রতি দুই সপ্তাহ পরে পরিষ্কার করা উচিত। রাতে, খাঁচাটির ভিতরে থাকা সমস্ত মুরগি তালাবদ্ধ করা উচিত, যাতে তারা শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা পায়।
মুরগির খাঁচার ভিতর ও বাইরে উভয় জায়গা গুলি ভালো ভাবে খিয়াল রাখতে হবে যাতে করে কোন সমস্য না হয় এবং চারি পাশ নেট বা কাঠ দিয়ে ঘিরতে হবে যাতে করে ভালোভাবে বায়ুচলাচল সরবরাহ করে।
আপনি যদি ঘর তৈরিতে নতুন হন, মুরগি বাসস্থান তৈরি, মুরগি ঘর কেমন হওয়া উচিৎ এবং এটি নিজেই তৈরী করার প্রকল্প গুলি যান্তে চান তাহলে, এই নিচের তথ্য ভালো ভাবে পড়ুন যা বিস্তারিতভাবে পদক্ষেপগুলি বলে হবে। আপনি সেটি সুন্দর ভাবে ব্যবহার করতে বা সেই পরিকল্পনা গুলি ব্যবহার করে তৈরি করতে পারেন।
মুরগি ঘরের প্রাকৃতিক বর্ণনাঃ
আপনার ঘর নির্মাণের জন্য তাড়াহুড়া করবেন না। আপনার কাছে পরিকল্পনা, স্কেচ রয়েছে এবং কোপ-ব্যয়, আকার, বহনযোগ্যতা এবং চলমান রক্ষণাবেক্ষণের সাথে জড়িত সমস্ত বিষয় গুলি সম্পর্কে ভেবে দেখেছেন তা নিশ্চিত করুন। আপনার সকল বিষয় নিয়ে বিবেচনা করুন।অন্যথায়, আপনার মুরগি সুস্থ থাকবে কিনা জায়গা টি সুন্দর কিনা সেটি ভাবুন। বায়ুচলাচল সম্পর্কে চিন্তা করুন, সম্ভবত এই গরমের দিনগুলির জন্য কিছু ফ্যান যুক্ত করুন। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষ্য হল, আপনি এই ঘরে সর্বাধিক সংখ্যক মুরগি রাখার ব্যাবস্থা করুন।
স্থান নির্বাচনঃ
মুরগির বাসস্থান এমন হয়া উচিৎ যেন সেখানে অতি সহজে সেখান আলো-বাতাস চলা-ফেরা করতে পারে।জমি নির্ধারনের সময় এমন একটি জায়গা বাছতে হবে যাতে সেখানে অতি সহজে যেন পানি না বেধে থাকে। আবশ্যই জায়গাটি যেন উচু ও খোলামেলা হয় সে দিকে দির্ঘ খিয়াল রাখতে হবে।
মুরগি বাসস্থান তৈরি করতে যে বিষয় বেশি খিয়াল রাখতে হবেঃ
উন্নত জমি যাতে বন্যার সময় ডুবে না যায় তা নির্বাচন করা উচিত।
বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা থাকতে হবে।
অবশ্যই যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
মাংস ও ডিম বাজারজাত করার সুবিধা থাকতে হবে।
পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকতে হবে।
নিকাশী ব্যবস্থা থাকতে হবে।
চারপাশটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া উচিত।
একটি উন্মুক্ত এবং নির্জন পরিবেশ থাকতে হবে।
মুরগি ঘর কেমন হয়া উচিৎ
মুরগি ঘর কেমন হয়া উচিৎ
কেন সুন্দর মুরগি বাসস্থান তৈরি করতে হবেঃ
একটি আরামদায়ক পরিবেশ প্রদান।
পোল্ট্রি খারাপ আবহাওয়া থেকে রক্ষা করা।
বিভিন্ন ধরণের সংক্রামক ও সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করা।
পশুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা।
চোরের অনুপ্রবেশ থেকে রক্ষা করা।
খাবারের সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য।
ঘরের অবস্থানঃ
পৃথিবির প্রায় সকল দেশে সনাতন পদ্ধতি বা খোলামেলা পদ্ধতিতে মুরগি পালন করা হয়।
ঘরের মধ্যে অবাদ আলো, বাতাস চলাচল করতে পারে সেই জন্য ভেন্টিলেশন সুবিধা তৈরি করতে হবে,এবং ঘর তৈরীর সময় ঘর কে উত্তর-দক্ষিণ দিকে খুলা রাখতে হবে।
এই ঘর টি সুন্দর ভাবে ঘিরে রাখতে হবে যাতে করে কোন মুরগির বাইরের প্রাণী সমস্যা না করতে পারে।
ঝড়-বৃষ্টির সময় যাতে করে পানি ও অতিরিক্ত বাতাস যাতে ভিতরে নাযাতে পারে সে জন্য খোলামেলা স্থানে পর্দার ব্যাবস্থা করতে হবে।
লিটার পদ্ধতিতে মুরগি পলনের সুবিধার্থে মেঝের চার পাশে ১ থেকে ১.৫ ফুট উচু করে দেওয়াল দিয়ে ঘিরে দিতে হবে।
মাচা পদ্ধতিতে মুরগি পালনের সমায় ঘরের মাচার উপর থেকে সিলিং পর্যন্ত তারের জাল দিয়ে ঘিরে দিতে হবে
মুগির মাচার নিচে খালি রাখতে হবে কারণ তাদের মল মুত্র যাতে নিচে পরে জায় ।
মেঝে থেকে মাচার উচ্চতা ৩ ফুট (৬০ সেঃমিঃ) দিতে হয় কারন যাত করে খুব সহজে মাচার নিচে জমা ময়লা ভালো ভাবে পরিষ্কার করা যায় ।
শীতে সময় যাতে করে কনো ভাবে বাতাস যেতে না পারে সে জন্য পলিথিন দিয়ে ভালো ভাবে ঢেকে রাখতে হবে তা না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
মুরগি ঘরের প্রস্থঃ
ঘরের প্রস্থ লিটার পদ্ধতিতে সর্বনিম্ন ১০ ফুট এবং সর্বাধিক ২৫ ফুটকরা হয়।
বৃহৎ আকার বাণিজ্যিক খামারের প্রস্থ সর্ব উচ্চ ৪০ ফুট পর্যন্ত করা যায়। এর বড় ঘর করলে ঘরের ভেন্টিলেটারের সমস্যা হতে পারে।
মাচাতে মুরগি পালন করার জন্য ঘরের মাচার উচ্চতা ৭ ফুট হতে হবে।বেশি উচু না করলে মাচার তলের ময়লা বের করতে সমস্যা হয়।
মুরগি ঘরের দৈর্ঘ্যঃ
আপনি যে কোন পরিমান মুরগি ঘরের দৈর্ঘ্য বড় করে দেওয়া যায়। এটিতে কোন সমস্য়া নাই।
ঘরের সবয়ংক্রিয় খাদ্যের পাত্র প্রদানের জন্য ঘরের একুরেট দৈর্ঘ্য নির্নয় করতে হয় কারণ খামারটি ভালো ভাবে তত্ত্বাবধান করা যায়।
মুরগি ঘরের উচ্চতাঃ
ছোট ঘরের ক্ষেত্রে চালের বা ছাদের উচ্চতা সর্বনিম্ন ৬ ফুট এবং সর্বউচ্চ ১০ ফুট হলে ভালো হয়।
বাণিজ্যিক খামারে জন্য চালের উচ্চতা কেমন হয়া উচিৎ তা নিম্নে দেওয়া হলঃ
ছাদের ঘরের উচ্চতাঃ ১০ – ১২ ফুট ।
দোচালা ঘরের উচ্চতাঃ ৮ – ১৪ ফুট।
ঘরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বেশি হলে চালের উচ্চতা বেশি করা প্রয়োজন কারণ উচ্চতা বেশি না হলে ঘরে ভেন্টিলেটারের সমস্যা হয় ।
মুরগির ঘর নির্মাণ
ঘরের যত্ন এবং জীবাণুমুক্ত করণ পদ্ধতিঃ
ঘরের জীবাণুমুক্ত করার জন্য চুনের মতো জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার এবং জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহার করা উচিত। বাড়ির দেয়াল এবং মেঝে জল দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত। তবে কস্টিক সোডা দিয়ে পরিষ্কার করা ভাল। ধোঁয়া শুরু করার আগে দরজা, জানালা, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি বন্ধ করে দেওয়া উচিত যাতে ঘরে কোন বায়ু প্রবেশ করতে না পারে। বাড়ির প্রতি ২.৮ ঘনমিটার জায়গার জন্য, প্রতি ম্যাঙ্গানেটে ৮ গ্রাম পটাসিয়াম এবং ১২০ মিলি, ফরমালিন (৪০%) দিয়ে ফুমিগেট করুন।
মুরগি বাচ্চার বাসস্থান
নার্সারি অবশ্যই একটি উঁচু স্থানে উপরে তৈরি করা উচিত যাতে কোনও পরিস্থিতিতে বাড়ির ভিটি ভিজে না যায় বা স্যাঁতসেঁতে না হয়। বাড়ির মেঝে পাকা করা ভাল। শুকনো চালের কুঁচি বা শুকনো কাঠের গুঁড়ো মেঝেতে ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে ছড়িয়ে দিতে হবে। নীচে থেকে মেঝে ভিজতে পেতে, প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২-৩ বার, আপনাকে লিটারটি উল্টাতে হবে এবং চুন মেশাতে হবে। এটি লিটার শুকিয়ে যাবে, জীবাণু মেরে ফেলবে এবং গন্ধ দূর করবে। কোনও পরিস্থিতিতে ঘরের মেঝেতে বৃষ্টির জল যাতে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি কখনও লিটার ভিজে যায় তবে তা ফেলে দিতে হবে । লিটার ভিজা হয়ে গেলে তা ফেলে দিতে হবে এবং তাত্ক্ষণিকভাবে শুকনো লিটার দিতে হবে। বাচ্চা সংগ্রহের পরে তাদের প্রথমে ভিটামিনের সাথে মিশ্রিত জল দেওয়া উচিত। তারপরে শুকনো খাবার সামান্য দিতে হবে।
শিশুকে দিনে কমপক্ষে ৩-৪ বার খাওয়ানো উচিত এবং প্রতিটি শিশুকে ৫-১০ গ্রাম সুষম খাদ্য দেওয়া উচিত । লক্ষ করা উচিত যে একটি ছোট বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময়, অবশ্যই প্রথমে জলের পাত্র রাখতে হবে,এবং অবশ্যই জল দিয়ে দিতে হবে কারন শুকনো খাবার শিশুর গলায় আটকে যেতে পারে এবং শিশু মারা যেতে পারে। এক দিনের বাচ্চাদের জন্য অবশ্যই ব্রুডিং প্রয়োজন। প্রথম সপ্তাহে ঘরের তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট হবে, তবে প্রতি সপ্তাহে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট হ্রাস করতে হবে। সাধারণত গ্রীষ্মে ২ সপ্তাহ এবং শীতকালে ৩ সপ্তাহ – শিশুকে উষ্ণ করা দরকার। তবে চরম খরা বা প্রচণ্ড শীতে এটি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশের অনেক গ্রামাঞ্চলে এখনও বিদ্যুৎ নেই, তবে এটি পর্যাপ্ত পরিমাণে না হলেও, ওই অঞ্চলের ছোট ছোট খামারগুলি ছানা গরম করতে হারিকেন, হাজাকলাইট, কেরোসিন ব্যবহার করতে পারে।
মুরগির ব্যবস্থাপনাঃ
স্বাস্থ্যকর এবং রোগমুক্ত মুরগি বা ছানা সংগ্রহ করা প্রয়োজন। মুরগির শেড, মেঝে, দেয়াল, বেড়া, ছাদ, ডিমের বাক্স, ডিমের ট্রে, জলের পাত্রে এবং খাবারের পাত্রে নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। মাঝে মাঝে জীবাণুনাশক স্প্রে করা উচিত। জীবাণুনাশক মিশ্রিত জল খামারের প্রবেশ পথ এবং মুরগির ঘরের দরজায় রাখতে হবে। অহেতুক যানবাহনকে খামারে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। হাঁস-মুরগিকে পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখতে হবে। বন্য পাখিদের পোল্ট্রি পালন এলাকায় যাতে না আসতে পারে সে ব্যবস্থ্য নিতে হবে । খাদ্য এবং জলের পাত্রে নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা এবং রোদে শুকানো দরকার। ঘরের লিটার পরিষ্কার এবং মাঝে মাঝে চুন জাতীয় জীবাণুনাশক দ্বারা নির্বীজিত হওয়া উচিত। ঘরের দেওয়াল, মেঝে এবং সরঞ্জামগুলি জল দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত এবং ঘরটি ভালভাবে ধুয়ে ফেলা উচিত।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৭জুন ২০২২