মুরগির ফুট-বার্ন, খামারীদের করণীয়

1433

23167693_299403167225423_59

অনেক ব্রয়লার খামারে এই রকম পায়ের পাতা (চিত্র দেখুন) দেখা যায়। এটিকে ফুট বার্ন বা ফুট প্যাড ডার্মাটাইটিস বলে।

এটা এতোই কমন যে, খামারীরা ভাবে এটাই স্বাভাবিক পায়ের পাতা। স্বাধারণত ব্রয়লার, লেয়ার (ফ্লোর), টার্কি ইত্যাদিতে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

ফুড-বার্ন কেন হয়?
১. ভেজা বা স্যাঁতস্যাঁতে লিটার:
পানির পাত্রে যদি ছিদ্র থাকে তবে তা থেকে পানি লিটারে পড়ে লিটার ভিজে পারে। বা পানির পাত্র যদি উঁচু করে দেয়া না হয় বা বাতাসে যদি আদ্রর্তা বেশি থাকে বা অন্য যেকোনো কারণে যদি লিটার ভিজে যায় তবে তা থেকে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। লিটারে যদি ৩০% এর চেয়ে বেশি আদ্রর্তা থাকে তবে তা ফুট বার্ন বা ফুট প্যাড ডার্মাটাইটিস সমস্যা সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখে।

এছাড়া লিটার যদি দলা পাকিয়ে যায় তবে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে।

কন্ট্রোল সেডের ক্ষেত্রে পানির পাইপ লাইন যদি লিটার থেকে উঁচু করে না দেয়া থাকে বা ড্রিংকারের নিপল যদি ঠিকমতো সেট করা হয় হয় বা পানির পাইপ লাইনে হাই প্রেসার থাকলে পানি পড়ে লিটার ভিজে যেতে পারে যা থেকে ফুট বার্ন বা ফুট প্যাড ডার্মাটাইটিস হতে পারে।

ডিপ লিটারের ক্ষেত্রে যেগুলো ৪ ইঞ্চি পুরু করে লিটার দেয়া থাকে সেগুলোর পানি শোষন ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে ফলে ফুট বার্ন হবার সম্ভাবনাও কম থাকে।

২. তাপমাত্রা ও বায়ুপ্রবাহ:
কন্ট্রোল হাউজের ক্ষেত্রে যদি তাপমাত্রা ও বায়ুপ্রবাহ ঠিক মত নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তবে লিটার স্যাঁতসেঁতে হতে পারে যা ফুট বার্ন সমস্যার হার অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।

৩. ঘনত্ব:
ব্রয়লারের ক্ষেত্রে মুরগির ঘনত্ব বেশি হলে ফুট বার্ন বা ফুট প্যাড ডার্মাটাইটিস হতে পারে।

৪. মুরগির ওজন:

কম ওজনের মুরগির চেয়ে বেশি ওজনের মুরগিতে এমন সমস্যা বেশি দেখা যায়। ব্রয়লারের ক্ষেত্রে ফিমেল ব্রয়লার চেয়ে মেল ব্রয়লারের ওজন বেশি থাকে বিধায় মেল ব্রয়লারে ফুট বার্ন বা ফুপ প্যাড ডার্মাটাইটিস বেশি দেখা যায়।

৫. ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা:
মুরগি যদি প্রচুর পাতলা পায়খানা করে তবে লিটার দ্রুত স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায় যার ফলে এমন সমস্যা হতে পারে।

ফুট বার্নের ক্ষতিকর দিকঃ

১. পায়ের পাতা শক্ত ও খসখসে হয়ে যায়। অনেক সময় পায়ের পাতা ফুলে যায় ও পায়ের পাতাতে ক্ষত হতে পারে। যা থেকে ন্যাকরোসিস হতে পারে।
২. আক্রান্ত মুরগি হাটতে পারে না বা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটতে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বসে থাকার কারণে পরবর্তীতে হাঁটু (হক জয়েন্ট) ও বুকে (ব্রেস্ট মাসল) ডার্মাটাইটিস দেখা দেয়।
৩. আক্রান্ত মুরগি ঠিকমতো চলাফেরা করতে না পারার কারণে পরিমাণমতো খাদ্য ও পানি গ্রহণ করতে পারে না। ফলে কাঙ্খিত ওজন আসে না। অনেক ক্ষেত্রে ওজন কমে যায়।
৪. মুরগির পা শুকিয়ে যায়। ও বাহ্যিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।
৫. পায়ের তলায় ক্ষত হলে তা জীবানুর প্রবেশ করার রাস্তা তৈরি করে দেয়। যা থেকে বিভিন্ন রোগ যেমন- স্ট্রেফ ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

প্রতিকারঃ
১. লিটার শুষ্ক রাখতে হবে। লিটার ভিজে গেলে বা দলা পাকিয়ে গেলে দ্রুত তা সরিয়ে ফেলে নতুন শুকনো লিটার দিতে হবে। কন্ট্রোল হাউজের ক্ষেত্রে ৪-৬ ইঞ্চি পুরু করে লিটার দিতে হবে।
২. ফ্লোর স্পেস সঠিক ভাবে হিসাব করে বাচ্চা তুলতে হবে যেন ঘনত্ব বেশি না হয়।
৩. পানির পাত্র বা পাইপ লাইন ফ্লোর থেকে উঁচুতে ঝুলিয়ে দিতে হবে। পানির পাত্র সঠিক সংখ্যায় দিতে হবে। এবং খেয়াল রাখতে হবে মুরগিগুলো যেন পানি খেতে প্রতিযোগিতা না করে।
৪. কন্ট্রোল হাউজের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা, আদ্রর্তা, বায়ুপ্রবাহ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

চিকিৎসা:
ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী।

লেখক: ডা. শুভ দত্ত।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম