মুরগির বাচ্চার খাবার ও পরিচর্যার গুরুত্বপূর্ণ কৌশল

3

বাচ্চার খাবার ও পরিচর্যাঃ
বাচ্চা জন্মনোর সাথে সাথেই মাকে বাচ্চা থেকে আলাদা করা উচিত নয়। বাচ্চা ফোটার পর অন্তত ৫-৬ ঘন্টা বাচ্চা ও মাকে তা দেওয়ার ঘরেই রাখুন ও উম পেতে দিন। অতঃপর মাসহ বাচ্চাদের তৃতীয় তলার একটি ঘরে স্থানান্তর করুন। তার পূর্বে ঘরের মেঝেতে চট পেতে দিন। বাচ্চা রাখার সাথে সাথেই পানির পাত্র স্থাপন করুণ এবং তার আধা ঘন্টা পরে খাবারের পাত্র স্থাপন করুন। প্রথম চারদিন সাধারণ পানি না দিয়ে একটি মিশ্রণ খাওয়াতে হবে। এক লিটার পানিতে এক গ্রাম রেনামাইসিন পাউডার অথবা যে কোনো টেট্রাসাইক্লিন জাতীয় ওষুধ, এক গ্রাম ডব্লিউএস (WS) ভিটামিন, ১০ গ্রাম আখের গুড় বা চিনি মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।

প্রথম ৩-৪ দিন বাচ্চাদের শুধু এই মিশ্রণ পান করালেই চলবে। প্রথম দিন খাদ্য হিসেবে প্রত্যেক ছানার জন্য ৩-৪ গ্রাম সুষম খাবার দিতে হবে। এক্ষেত্রে ঘরে তৈরি সুষম খাবার দিতে পারেন আবার বাজারের ‘ব্রয়লার স্টার্টার’ খাবারও দিতে পারেন। অতঃপর প্রথম সপ্তাহ জুড়ে মাথাপিছু ১০ গ্রাম হারে খাবার দিতে হবে। প্রতি সপ্তাহে খাবারের পরিমাণ ৫-৭ গ্রাম হারে বাড়াতে হবে। বাচ্চার বয়স চার সপ্তাহ হলে ভাত, গমের গুঁড়া, ভুট্টা ভাঙা, খুদ ইত্যাদি সুষম খাবারের পাশাপাশি অল্প অল্প খাওয়াতে হবে। একইসাথে দিনে ১-২ ঘন্টা বাইরে হাঁটাচলা করতে দিতে হবে। এছাড়াও চার সপ্তাহ পর বাচ্চাকে তৃতীয় তলার একদম বাচ্চা মুরগির কক্ষ থেকে সরিয়ে দ্বিতীয় তলার মাঝারি মুরগির কক্ষে নিয়ে আসুন। এভাবে পর্যায়ক্রমে ঘরগুলো ব্যবহার করুন।

বাচ্চা থেকে মা কে আলাদা করাঃ
বাচ্চা থেকে মা কে আলাদা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। মুরগির উৎপাদন চক্রের সময়কাল কমিয়ে আনার জন্য এটি অপরিহার্য। বাচ্চার বয়স গরমকালে ৫-৭ দিন এবং শীতকালে ১০-১২ দিন হলে মা মুরগিকে বাচ্চা থেকে আলাদা করে ফেলতে হবে। শুধু আলাদা করলেই চলবে না; সম্পূর্ণ চোখের আড়ালে রাখতে হবে। এটি না করা হলে মা ও বাচ্চা মুরগি উভয়েই চেঁচামেচি করবে ও খাবার খাবে না। ফলে উভয়েরই স্বাস্থ্যহানি হবে। তাই নির্দিষ্ট সময়ের পরে মা মুরগিকে খোপের প্রথম তলায় বড় মুরগি রাখার ঘরে নিয়ে যান ও প্রতিদিন ৪০-৫০ গ্রাম হারে সুষম খাবার দিতে থাকুন। ১০ দিন পর থেকে ঘরের সাধারণ খাবার দিলেও চলবে। খেয়াল রাখতে হবে যেনো আলাদা রাখার প্রক্রিয়া মা মুরগি আবারো ডিম দেওয়ার আগ অবধি বজায় থাকে। নাহলে ডিম পেতে অনেক দেরি হবে।

খাদ্য থেকে মাংসে রুপান্তরের অনুপাতঃ
খাদ্য থেকে মাংসে রুপান্তরের অনুপাত এমন একটি জিনিস যা বেশিরভাগ দেশি মুরগি পালনকারীই তেমন গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু ব্যবসা লাভজনক রাখতে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সকল প্রাণীই তার গৃহিত খাদ্যকে ওজনে রূপান্তর করে। বাচ্চা মুরগিও তার গৃহিত খাদ্যকে মাংসে রুপান্তর করে এবং তার একটি অনুপাত আছে। অনুপাতটি হলো ৩ঃ১ । অর্থাৎ প্রতি তিন কেজি খাদ্য খাওয়ালে একটি মুরগির ওজন ১ কেজি বাড়লে সেটি হবে আদর্শ অনুপাত। কিন্তু সবসময় এই অনুপাত বজায় থাকে না। বিশেষত দেশি মুরগির বাচ্চা ৭০ দিন বয়স অবধি খাদ্যকে আদর্শ অনুপাত অনুযায়ী মাংসে রূপান্তর করতে পারে। তাই দেশি মুরগির বাচ্চা ৭০ দিন হওয়ার পরেই বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। বাচ্চাগুলোকে পালার উদ্দেশ্য না থাকলে ৭০ দিনের পরে বিক্রি করে দেওয়া উচিত।

স্বাস্থ্যবিধিঃ
দেশি মুরগির স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে বলতে হলে প্রথমেই বলতে হবে বাচ্চার সুস্থতা বিধানের কথা। কারণ মুরগির বাচ্চা অত্যন্ত দুর্বল এবং এদের রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই প্রত্যেকবার কোনো ঘরে বাচ্চা উঠানোর আগে ঘরটি ব্লিচিং পাউডার অথবা ফিনাইল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত লিটার পরিষ্কার করতে হবে। মুরগিকে চোখে চোখে রাখতে হবে এবং অন্য কোন প্রাণীর সংস্পর্শে আনা যাবে না। নিজেকেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে ও বাচ্চাকে সময়মতো টিকা দিতে হবে। এক্ষেত্রে গুটি বসন্তের টিকা অতি দ্রুত দিতে হবে।

দেশি মুরগি সাধারণত যেসব রোগের শিকার হয় সেগুলো হলো রাণীক্ষেত, গুটি বসন্ত, ক্রিমি, ককসিডিওসিস (রক্ত বমি), কলেরা, সালমোনেলা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। এর মাঝে রাণীক্ষেত ও বসন্ত ভাইরাসজোনিত রোগ। এর কোনো প্রতিকার নেই। প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। অন্যান্য রোগ গুলোর চিকিৎসা থাকলেও সময়মতো টিকা দিয়ে প্রতিকার করাই শ্রেয়। দেশি মুরগিকে রোগমুক্ত রাখতে এর বাসস্থান সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। বিশেষত কৃমি হওয়ার প্রধান কারণ অপরিষ্কার ঘর। এর পাশাপাশি যথাসম্ভব জীবাণু থেকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ি টিকা দিতে হবে এবং মুরগি রোগাক্রান্ত হলে চিকিৎসা করাতে হবে। রোগাক্রান্ত মুরগি দ্রুত আলাদা খোপে সরিয়ে ফেলতে হবে।