মুরগির মিনারেল এর অভাবজনিত রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা। মুরগির শরীরে মিনারেলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মুরগির খাদ্যের মাধ্যমে তার জন্য দরকারি মিনারেলের সরবরাহ রাখতে হবে। মুরগির মিনারেলের অভাব থাকলে খামার থেকে আশানুরুপ উৎপাদন আসবে না এবং মুরগি বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হবে।
মুরগির চাহিদা অনুযায়ী মুরগির মিনারেল কে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায় যথা
ম্যাক্রো-মিনারেলস এবং
মাইক্রো-মিনারেলস
ম্যাক্রো মিনারেলস
যে সকল মিনারেল বা খনিজ উপাদান মুরগির জন্য বেশি পরিমান প্রয়োজন হয় তাদের কে ম্যাক্রো-মিনারেলস বলা হয়। এসকল মিনারেল হলো- ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্লোরিন ও সালফার।
মাইক্রো-মিনারেলস
যে সকল মিনারেল বা খনিজ পদার্থ মুরগির দেহে খুব সামান্য পরিমান প্রয়োজন হয় তাদের কে মাইক্রো মিনারেলস বলে। মাইক্রো মিনারেলস গুলো হলো- ম্যাংগানিজ, কপার, আয়োডিন, জিংক ও সেলেনিয়াম।
ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত লক্ষণ
মুরগির মিনারেল এর মধ্যে ক্যালসিয়াম অন্যতম। ক্যালসিয়ামের অভাবে ছোট বাচ্চা মুরগির রিকেটস এবং মুরগির অস্টিওম্যালেসিয়া রোগ হয়, দৈহিক বৃদ্ধি সঠিকভাবে হয় না, মুরগির শরীরে দূর্বলতা প্রকাশ পায়, অস্থিসন্ধির হাড় জোড়া গুলো ফুলে ওঠে, ঠোঁট বাঁকা হয়ে যায়, ডিমের আকৃতি ছোট, ডিমের খোসা নরম পাতলা হয়। অনেক সময় খোসাবিহীন ডিম পাড়ে এবং ডিম উৎপাদন কমে যায়।
ক্যালসিয়াম প্রাপ্তির প্রাকৃতিক উৎস
ক্যালসিয়াম প্রাপ্তির প্রাকৃতিক উৎস হলো- মাছের গুড়া, ঝিনুকের গুড়া, লাইমস্টোন, ডাই ক্যালসিয়াম ফসফেট, হাড়ের গুঁড়ো, গম ও শাকসবজি। প্রতিকার ব্যবস্থা হলো- ঝিনুকের গুড়া খাদ্যে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। ডিম পাড়া মুরগির ঘরে খাদ্য পাত্রের সাথে আলাদা পাত্রে ঝিনুকের গুড়া সরবরাহ করা উচিত।
ফসফরাসের অভাবজনিত লক্ষণ
মুরগির মিনারেলে এর মধ্যে ফসফরাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুরগির ফসফরাসের অভাব থাকলে দৈহিক ওজন হ্রাস পায়, ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, শারীরিক দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায়, বাচ্চা
মুরগির রিকেটস রোগ এবং মুরগির অস্টিওম্যালেসিয়া রোগ হয়, অস্থিসন্ধি জোড়া ফুলে ওঠে এবং গরম হয়ে যায়। ফসফরাস প্রাপ্তির প্রাকৃতিক উৎস গুলো হলো- হাড়ের গুড়ো, ডাই ক্যালসিয়াম ফসফেট, মনো ক্যালসিয়াম ফসফেট, শুটকি মাছের গুড়া, মিট এন্ড বোন মিল, সয়াবিন মিল ইত্যাদি।
সঠিক পরিমাণে হাড়ের গুঁড়ো অথবা ফসফরাস সমৃদ্ধ খাদ্য উপকরণ যথাযথভাবে মিশতে হবে।
মুরগির মিনারেল
মুরগির মিনারেলের অভাবজনিত লক্ষণ
সোডিয়াম এর অভাবজনিত রোগের লক্ষণ
দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার পর ডিম উৎপাদন কমে যাওয়া, সোডিয়ামের অতিরিক্ত অভাবে চোখে ক্ষত বা ঘা দেখা যায়, প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়, মুরগির মধ্যে ঠোকরা-ঠুকরি প্রবণতা ক্যানাবলিজম দেখা যেতে পারে। সোডিয়াম প্রাপ্তির প্রাকৃতিক উৎস সাধারণ লবণ, শাকসবজি ইত্যাদি। সাধারণ লবণ পরিমান 0.25-0.50% সর্বদা সঠিক ভাবে সরবরাহ করা উচিত।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মুরগির মিনারেল বা খনিজ পদার্থের প্রয়োজনীয়তা
পটাশিয়াম
হাঁস-মুরগির দেহে পটাশিয়াম বিশেষ প্রয়োজন। পটাশিয়াম শ্রবণীয় চাপ এবং এসিড ও ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে। শর্করা ও আমিষ জাতীয় খাদ্য বিপাকে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
এটি কিছু এনজাইমকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে সচল রাখে এবং নিয়ন্ত্রণ করে। কাজেই হাঁস-মুরগির খাদ্য যাতে পরিমাণমতো খনিজ পদার্থ থাকে তার দিকে লক্ষ রাখা কর্তব্য।
পটাশিয়ামের অভাব হলে মাংসপেশি বিশেষ করে হৃদপিন্ডের ও শ্বাস-প্রশ্বাসের শক্তিগুলো দুর্বল হয়ে যায় এবং তাদের কার্যক্ষমতা কমে যায়।
ম্যাগনেসিয়াম
ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে বাচ্চা মুরগি তে দৈহিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। প্রথমে নড়াচনা কম করে এবং পড়ে খিঁচুনি দিয়ে মারা যায়। ডিম পাড়া মুরগির ডিমের আকার ছোট এবং ডিম উৎপাদন কমে যায়।
ক্লোরিন ও সালফার
দৈহিক বৃদ্ধি ক্লোরিন এর ভূমিকা অপরিসীম। মুরগির দেহে ক্লোরিন এর অভাব হলে দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায়। পানিশূন্যতা এবং রক্তের পরিমাণ কমে যায়। সালফার মুরগির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল। সালফারের অভাবে মুরগির শরীরে আমিষের অভাব সূচিত হয়। সঠিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়
ম্যাঙ্গানিজ
ম্যাঙ্গানিজ এর অভাবে মুরগি ডিম পাড়া বা মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যায়। ডিম থেকে বাচ্চা ওঠার হার কমে যায়। বাচ্চা মুরগির বিকৃত আকৃতির মাথা, পা ফাটা, ঠোঁট বাঁকা হয় অস্থিসন্ধি ফুলে যায় এবং পিরোসিস দেখা দেয়। ফলে মুরগি হাঁটতে পারে না ডিম পাড়া মুরগি নরম ডিম পাড়ে।
আয়রন বা লৌহ ও কপার
লৌহের অভাবে রক্তশূন্যতা এবং পালকের রং নষ্ট হতে দেখা যায়। কপার এর অভাবে তীব্র রক্তশূন্যতা, ডায়রিয়া, ক্ষুধামান্দ্য, ওজন কমে যাওয়া, নির্জীব হয়ে পড়া, ডিম ও মাংস উৎপাদন কমে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়। ডিম পাড়া মুরগি নরম ডিম দেয়।
আয়োডিন
আয়োডিনের অভাব হলে মুরগির থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যায় ডিম পাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যায়। শরীরের চর্বি জমতে থাকে সব প্রকার বিপাকীয়, শারীরিক, স্নায়বিক এবং প্রজনন সম্পর্কিত প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।
জিংক
মুরগির জিংকের অভাবে দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, পালক ছোট এবং পাতলা হয়ে থাকে, মুরগির হাটুর হাড়ের গিরা ফুলে যায় এবং খুঁড়িয়ে হাঁটে, পালক গজানো বন্ধ হয়ে যায়, পায়ের পাতার ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং সেটি ঘা পরিণত হয়। ডিম পাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যায়। ডিম হতে বাচ্চা ফোটার হারও কমে যায়। ডিমের ভিতর ভ্রূণের এর মৃত্যু ঘটে। খাদ্যে ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ বেশি থাকলে জিংক এর অভাব প্রকট আকার ধারণ করে।
কোবাল্ট ও সেলিনিয়াম
কোবাল্ট এর অভাবে রক্তশূন্যতা, ক্ষুধামন্দা, ওজন কমে যাওয়া এবং অবসন্ন হয়ে পড়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়। সেলেনিয়াম এর তীব্র অভাবে দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায় এবং বাচ্চার মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। এ পদার্থের অভাবে মুরগিতে মাংসপেশির অবক্ষয় এবং একজনের সাথে দেখা দেয় প্রধানত হৃদপিণ্ড এবং মাংসপেশিতে এধরনের দেখা যায় একে হোয়াইট মাসেল ডিজিজ বলা হয়ে থাকে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম খাদ্যে থাকলে এরূপ সমস্যা হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
মুরগির মিনারেল এর অভাব জনিত লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত মাল্টি মিনারেল ঔষধ খাবার বা পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। মুরগির মিনারেল এর ঘাটতি যাতে না হয় তার জন্য খাবারের সাথে সঠিক মাত্রায় মিনারেল সরবরাহ রাখতে হবে।