মুরগির রানীক্ষেত রোগ- লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ। মুরগির রানীক্ষেত রোগ হচ্ছে ভাইরাস থেকে সৃষ্ট মোরগ মুরগির মারাত্বক সংক্রামক রোগ। সর্বপ্রথম মুরগির রানীক্ষেত রোগ ইংল্যান্ডের নিউক্যাসেল নামক স্থানে দেখা গিয়েছিল বলে এ রোগকে Newcastle Disease বলা হয়।
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি খামারে এই রোগ টি দেখা যায়। তবে রানীক্ষেত হচ্ছে ভারতের একটি জায়গার নাম। এ উপমহাদেশে সর্বপ্রথম ঐ স্থানে দেখা গিয়েছিল বলে এ রোগের নাম রানীক্ষেত রোগও বলা হয়।
আমাদের দেমে ওমারগ-মুরগিতে এ রোগ দেখা যায়। বছরের সব সময়ই এ রোগ দেখা দিতে পারে। তবে সাধারণত শীত ও বসন্তকালে এ রোগের প্রকপ বৃদ্ধি পায়। এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রায় সব মোরগ মুরগি মারা যায়। বাচ্চা মুরগি আক্রান্ত হলে ১০০% মৃত্যু হয়ে থাকে।
রানীক্ষেত রোগ প্রাদুর্ভাব হওয়ার কারণ
ভাইরাসযওক্ত খাদ্য ও পানি পান করার ফলে এ রোগ সুস্থ মোরগ বা মুরগি এবং মুরগির বাচ্চাদের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে।
এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত মুরগি যেখানে সেখানে ফেললে তা বন্য পশু-পাকির মাধ্যমে এই রোগ সংক্রমিত হয়।
আক্রান্ত ফার্ম বা এলাকা হতে কোন মানুষ, পশু-পাখির শরীর, পায়ে, বিছানা-পত্র বা জামাকাপড়ের সাথে এ রোগের জীবাণু অন্য যেকোন সুস্থ মুরগির খামারে প্রবেম করতে পারে।
টিকাদানের মাধ্যমে এ রোগজীবাণু এক মুরগির কামার থেকে অন্য মুরগির খামারে ছরিয়ে পড়েতে পারে।
হাটবাজার বা অন্য কোন স্থান হতে অসুস্থ মুরগি কিনে খামারে প্রবেশ করালে সুস্থ মুরগি আক্রান্ত হতে পারে।
বাতাসের মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে।
মুরগির রানীক্ষেত রোগের লক্ষণ
হাঁচি, কাঁশি, শ্বাসকষ্ট, গলায় ঘড়ঘড় আওয়াজ এ রোগের প্রথম লক্ষণ।
শ্বাসযন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্র বিশেষভাবে আক্রান্ত হয়। শ্বাসযন্ত্র আক্রান্ত হওয়ায় শ্বাসকষ্ট হয়, ফলে হা করে শ্বাস টানে। স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হওয়ার পরবর্তি পর্যায়ে প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাত দেখা দেয়।
সাদা চুনের মত পাতরা পায়খানা করে।
ঘাড়, ডানা ও পা অবশ হয়ে পড়ে।
কোন কোন রানীক্ষেত রোগে আক্রান্ত মুরগি অস্থির অবস্থায় পেছনের দিকে হেলে পড়ে বা চক্রাকারে ঘুরতে থাকে।
খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে আড়ালে গিয়ে মাথা একদিকে বাঁকিয়ে রেখে অথবা পিছন ফিরে ডানায় মাথা গুজেঁ রাখে।
উৎপাদন হঠাৎ কমে যায়।
ময়নাতদন্ত রিপোর্ট
প্রোভেন্টিকুলাসে রক্তের ফোঁটা পাওয়া যায়।
অন্ত্রনালীতে প্লাগ গঠিত হয়।
শ্বাসনালীতে রক্ত দেখা যেতে পারে।
শ্বাসনালী ফুলে যেতে পারে।
প্রধান শ্বাসনালীতে মিউকাস থাকে।
মুরগির রানীক্ষেত রোগ
চিত্র- প্রোভেন্টিকুলাসে রক্তের ফোঁটা
চিকিৎসা ব্যবস্থা বা রোগ দমন
মুরগির রানীক্ষেত রোগের কোন চিকিৎসা নেই। রোগের প্রাদূর্ভাব হওয়ার সাথে সাথে মুরগি গুলোকে লাসোটা ভ্যাকসিন পানির সাথে খাওয়ারে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। সতটা সম্ভব অসুস্থ মোরগ ও মুরগিগুলোকে আলাদা করে রাখতে হবে।
ঘরটিকে জীবাণুনাশক দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। খাবার পাত্র ও পানির পাত্র জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
গৌতম বুদ্ধ দাস, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, চট্টগ্রাম সরকারী ভেটেরিনারী কলেজ এর একটি পরামর্শ এখানে উল্লেখ করার মত। জেন্টামাইসিন ৫% (ব্রেমমার ফার্মা কর্তৃক প্রস্তুত) ১ মিলি ঔষুধ ১৯ মিলি পরিশোধিত পানিতে মিশিয়ে ১ সিসি করে মুরগিকে ৩ দিন পর্যন্ত রানের মাংসে ইনজেকশন দিলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
নিয়মিত মোরগ মুরগিকে রানীক্ষেত রোগের ভ্যাকসিন বা টিকা দিতে হবে। সময়মত টিকা প্রয়োগ করলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কাছাকাছি এলাকায় রাণীক্ষেত রোগ দেখাদিলে প্রতিষেধক টিকা দানের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বদা খামারে উত্তম স্বাস্থ্যকর অবস্থা বজায় রাখতে হবে।
রাণীক্ষেত রোগ নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি
খামারের সকল মুরগি ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
জীবাণুনাশক দিয়ে খামার ও জিনিসপত্র পরিষ্কার করতে হবে।
মৃত মুরগি সঠিক নিয়মে পুঁতে ফেলতে হবে বা নষ্ট করে ফেলতে হবে।
খামার থেকে পোকামাকড় দমন করতে হবে।
মুরগির খামার থেকে সকল মুরগি সরিয়ে নতুন মুরগি আনতে কমপক্ষে ২১ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
মানুষের অনিয়ন্ত্রিত আনাগোনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২৩ নভেম্বর ২০২১