মুরগি বিক্রির আগেই কিভাবে ২৫হাজার টাকা লাভ করবেন?

941

নতুন খামারীদের ফার্ম করার আগে কি জানতে ও বুঝতে হবে এবং কি কি লাগবে।মুরগি বিক্রির আগেই কিভাবে ২৫হাজার টাকা লাভ করবেন

১.ফার্ম টি উচু জায়গা,প্রয়োজনে মাটি দিয়ে ১ফুট করে করতে হবে,এতে লিটার ভিজবে না।আমাশয় হবে না।

সেডের বাহিরের ১-৩ফুট জায়গা ও মাটি দিয়ে উচু করে নিলে ভাল,যদি সম্বব হয় পাকা করলে ভাল হবে কারণ লিটার ভাল থাকবে,ইদুর ঢুকতে পারবে না ফলে সালমোনেলা,ইকলাইও কলেরা কম হবে।

যদি ফ্লোর কাচা হিয় তাহলে ফ্লোরের ৬ইঞ্চি নিচে পলিথিন দিয়ে মাটি দিতে হবে।এতে লিটার শুকনা থাকবে।

খামারের জমিঃপোল্ট্রি বাজার থেকে ৫০ কিলো মিটার দূরে হলে ভাল।

বিমান বন্দর,রেলস্টেশন,বাস ডিপো থেকে দূরে থাকতে হবে।মূল জমি থেকে মিনিমাম১ফুট উচু হতে হবে।

আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

সেমি কন্টোল সেড হলে যে কোন জায়গায় করতে পারবেন খুব বেশি সমস্যা হবে না।

লিটার সরানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে।বায়ো গ্যাস করা যেতে পারে।ছোট ১টা বায়োগ্যাস করতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা লাগে।

বিশ্বস্থ কর্মচারী থাকতে হবে।অনেকেই ঠিক মত কাজ করেনা, কেউ কেউ ডিম চুরি করে।যদিও এদের সংখ্যা খুব কম।

সেডের উচ্চতা পিলার ৯-১০ফুট,তুলি ১৩-১৫ফুট হলে ভাল এতে গরম কম লাগে।প্রস্থ লেয়ারের ক্ষেত্রে ২ লাইন হলে ২৪ ফুট আর ১লাইন হলে ১৩ ফুট।১লাইনের মুরগিতে প্রডাকশন ভাল হয়, মুরগি ভাল থাকে কারণ গ্যাস কম হয়,আলো ভাল পায়।

ব্রয়লার বা সোনালী হলে প্রস্থ ২৫ ফিটের বেশি করা ঠিক না। যদি করতে হয় ৩০ফুটের বেশি না।তবে প্রস্থ বেশি হলে উচ্চতা ও বেশি দিতে হবে।৩০ফুট প্রস্থ হলে উচ্চতা ১৫ফুটের কম করা যাবে না।

লেয়ারের সেডের ক্ষেত্রে ১ পিরামিড হলে ১২-১৩ ফুট প্রস্থ আর ২পিরামিড হলে ২৪ফুট প্রস্থ রাখতে হবে।

লম্বায় ২৫০ ফুটের বেশি করা ঠিক না.৮০০-১০০০ মুরগির জন্য পার্টিশন দিতে হবে যদি ল্পম্বা বেশি হয়।

একই সময়ে একই বয়সের মুরগি পালন করা ভএল যদি ২ ব্যাচ পালন করতে হয় তাহলে আলাদা কর্মচারী নিতে হবে এবং সেড টা ১০০ ফুট দূরে করা ভাল যদি একই বয়সের হয় তাহলে পাশাপাশি প্রস্থের দিগূন জায়গা রেখে কয়েক টা করতে পারবেন।

লেয়ারের ক্ষেত্রে লম্বা বেশি হলে পানির লাইনের সুবিধার জন্য ৮৫ ফুটের চেয়ে বেশি লম্বা পানির লাইন দেয়া ঠিক হবে না।এতে পানির লেভেল ঠিক হবে না।

লেয়ারের প্রস্থ যদি ২৪ ফিটের চেয়ে বেশি হয় তাহলে খাচার লাইন দক্ষিণ উত্তর কএ করতে হবে যাতে আলো বাতাস ভাল ঢুকে।

যদি ব্রুডার ঘর হয় তাহলে পাশ্ব দেয়াল ১ফুট রাখলে ঘরে ঠান্ডা বাতাস ঢুকতে পারবে না ।বাচ্চা ভএল থাকবে।গ্রোয়িং ঘরে পাশ্ব দেয়াল ১-২ ইট দেয়া যায়/উচু বেশি দিলে বৃস্টির পানি ঢুকে না কিন্তু গ্যাস বেশি হয়।

সেডের প্রবেশ পথে ফুট বাথ থাকতে হবে।প্রয়োজনে চটের চালা জীবাণুনাশক দিয়ে ভুজিয়ে রাখা যায়।

খাবার রাখার জন্য আলাদা ঘর থাকতে হবে যেখানে কাঠের বা বাশের পাটাতনের উপর বস্তা রাখতে হবে।

মৃত মুরগি ফেলানোর জন্য ১টা গর্ত রাখা উচিত যেখানে ঢাকনা থাকবে।

ব্রুডিং এর জন্য আলাদা ঘর না থাকলে শীতের সময় গ্রোয়িং ঘরেঢ় এক কোনায় পলিথিন বা কাপড় দিয়ে ১টা ঘর বানাতে হবে এবং সেখানে বাচ্চা ব্রুডিং করতে হবে।

টিনের বাড়তি অংশ ৩ফুট রাখা উচিত এতে বৃস্টির পানি সহজে সেডের ভিতরে ঢুকবে না।ফলে লিটার ভিজবে না আমাশয় ও হবে না।তাছারা টিনের সাথে সংযোগ করে বাড়তি ৩-৪ ফুট চালা করা যায়।এতে বৃস্টির পানি বা রোদ ঢুকবে না।

পর্দাটা এমন ভাবে সেট করতে হবে যাতে পর্দাটা নিচ থেকে ইচ্ছে অনুযায়ী উপরে তোলা যায়।

সেডের চারদিকে ৪-৫ফুট দূরে বেড়া দিতে হবে।

পানির উৎস যাতে ভাল থাকে।শিপ্ল কারখানা বা টয়লেটের সাথে যাতে লিংক না থাকে।

বিদ্যুৎও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকতে হবে।

যানবাহনের শব্দ যাতে না থাকে।

সম্বব হলে ব্রুডিং সেড আলাদা করে সেখানে ১০-১২দিন পালন করে গ্রোয়িং সেডে আনলে অনেক ভাল হয় কারণ ব্রুডিং সেডে সাইড ওয়াল ১ফুট উচু করা হয় যাতে বাতাস না লাগে, বাচ্চা ভাল থাকে।কিন্তু গ্রোয়ার ঘরে মাত্র এক ইট দেয়া হয়।

সেডের পাশে দেশি মুরগি/কবুতর/চড়ুই,হাস/টার্কি যাতে না যায় তাই ২০০-৩০০ ফুট দূরে করতে হবে।মেইন রাস্তা/বাজার থেকে ৫০০-৬০০ ফুট দূরে করতে হবে।

২.ফার্মে লস হলে যাতে পরিবারের সমস্যা না হয় সে ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৩.বাকিতে পালন করলে ১০হাজার টাকা লস হবে।খাবার,ভ্যাক্সিন ও মেডিসিন,বাচ্চা ক্রয়, মুরগি বিক্রি সব মিলে ১০হাজার টাকা বেশি লাগবে।

৪.ফার্মে লাভ লস ২টিই হতে পারে সেটা মেনে নিয়েই ফার্ম শুরু করতে হবে।

৫.রোগের কারণে যে কোন সময় সব মুরগি মারা যেতে পারে বা ভাল হতে অনেক টাকা খরচ হবে বা ভাল হতে অনেক সময় লাগতে পারে।মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েই শুরু করতে হবে।

হতাশ বা হার্ট দূর্বল হলে এই ব্যবসায় আসা ঠিক হবে না।

কারণ চোখের সামনে ২-৬লাখ চলে যেতে পারে ৩-৭দিনের মধ্যে।

৬.ফার্ম শুরু করার আগেই থেকেই বায়োসিকিউরিটি মেনে চলতে হবে।সেড কিভাবে করবেন,কোথায় করবেন যা আগে বলেছি সেগুলো বায়োসিকিউরিটির অংশ।১ম যদি সেড তৈরিতে ভুল হয় তাহলে আর সংশোধন এর সুযোগ থাকবে না।সব কিছু ডাক্তার বা মেডিসিন দিয়ে হয় না।

৭.অবশ্য ট্রেনিং নিয়ে ফার্মের ব্যবস্থাপনা(ব্রুডিং,লিটার,পর্দা,ভ্যাক্সিনেশন,ঠোটকাটা,ফার্ম জীবানূমুক্তকরণ,বর্ষা,শীত ও গরমকালীন ব্যবস্থাপনা জানতে হবে)

ট্রেনিং এর জন্য পোল্ট্রি খামারী ট্রেনিং গ্রুপে জয়েন করে অনলাইনে ৩ মাসে সব জানতে পারেন।তাছাড়া চিকিৎসা ফ্রি তে।

৮.১০০০ব্রয়লার/ সোনালী সেডের খরচ প্রায় দেড় লাখ টাকা.

১০০০ব্রয়লারের পালন খরচ আড়াইলাখ টাকা যার মধ্যে খাবার ৫০ ব্যাগ দাম প্রায় ১ লাখ ৪০হাজার টাকা।

সোনালীর খরচ প্রায় ব্রয়লারের মত কিন্তু পালতে হবে ৬০-৭০দিন।

১টা ব্যাচ পাল্পতে এক সাথে টাকা লাগে না কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে যখন ই টাকা লাগে তখন ই যাতে ম্যানেজ করা যায় সে ব্যবস্থা থাকতে হবে।অঙ্কেই শুরু করে মাঝ পথে টাকা না থাকায় অনেক কিছুই মিস করে ফলে বিভিন্ন সমস্যা হয়।

৯.১ম ৫০০-১০০০ বাচ্চা দিয়ে শুরু করতে হবে।

অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।

১০। বড় প্রজেক্ট করলে ফার্মের লোক দিয়ে ঠোটাকাটা,ভ্যাক্সিন দিতে হবে।

১১.১ম দিকে লাভ হলে অনেক খামারী বিভিন্ন বয়সের মুরগি ফার্মে পালতে শুরু করে।কাছাকাছি শেড বানাতে থাকে এতে করে রিক্স বেড়ে যায় এবংআগের লাভের টাকা চলে যায়।

১২.২টা ব্যাচের বেশি সেড থাকা ঠিক না তবে যদি দূরে হয় সমস্যা নাই।

১৩.ধৈর্য্য থাকতে হবে ।

১৪.একজন ডাক্তারের পরামর্শঅনুযায়ী ফার্ম পরিচালনা করতে হবে।

১৫।সামর্থ্য অনুযায়ী সেড করতে হবে।কারো টাকা বেশি থাকে তাহলে সেমি কন্টোল সেড করতে পারে।সেমি কন্টোল হলে লোকেশন বা সাইজ খুব বেশি সমস্যা হবে না।

ছোট খামারই হলে ১০০০-২০০০ ক্যাপাসিটি করতে হবে এবং ওপেন হাউজ করবে।

আগেই চিন্তা ভাবনা করে নামতে হবে কারণ সেড তৈরি হয়ে গেলে তখন আর কিছু করার থাকবে না।

১৫.

লেয়ারের সেড প্রায় আড়াইলাখ,খাচা ১লাখ ৪০হাজার,খাবার ও পানির পাত্র ১০হাজার।খাবারে যাবে প্রায় ৩লাখ।মেডিসিন ভ্যাক্সিন প্রায় ১ লাখ।কর্মচারী বেতন ৫০হাজার।

বাচ্চার দাম সোনালী ১০-৩০টাকা

রেডি মুরগি ১৫০-২৫০টাকা

ব্রয়লার ১০-৭০টাকা

রেডি ব্রয়লার ৮০-১৩০টাকা

লেয়ার ১০-৬০ টাকা

রিজেক্ট লেয়ার ১৫০-২২০ টাকা কেজি।

ডিম ৪-৮টাকা

কখনো কখনো ১-১০০ টাকা পর্যন্ত বাচ্চার দাম হয়ে থাকে।

দাম বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম। দামের উপর আমাদের হাত নেই কিন্তু কিছু বিষয় আমাদের হাতে যেমন

মেডিসিন খরচ হাজারে ১০-১৫ হাজার খরচ সেটা আমরা ৫-১০ হাজারে নিয়ে আসতে পারি।

বাকিতে না পালন করলে মাসে ১০হাজার টাকা সেভ হবে।

ভাল চিকিৎসা করলে মর্টালিটি কমাতে পারব।

ওজন বাড়াতে পারলে।প্রতি মুরগিতে ১০০ গ্রাম ওজন বেশি হলে হাজারে ১০০কেজি (১০০ টাকা কেজি হলেও ১০হাজার টাকা।মিনিমাল ৫ হাজার হবে যদি ৫০গ্রাম বেশি ওজন আসে)

তাছাড়া নিজে পালন করলে ১০হাজার টাকা কম লাগবে।

তাহলে দেখা যাচ্ছে আমাদের হাতে প্রায় ৩০হাজার টাকা আছে যা আমরা বেশি লাভ করতে পারি।

এমন কি বিক্রির আগেই ১৫ হাজার লাভ করতে পারি( যদি নগদ পালি ১০হাজার+মেডিসিন খরচ কম ৫হাজারঃ১৫হাজার)

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৯অক্টোবর২০