মুরগীর এসসাইটিস রোগের কারণ ও প্রতিকার

83

মুরগীর পানি জমা বা এসসাইটিস রোগের কারণ ও প্রতিকার

মুরগীর বিশেষত ব্রয়লার মুরগীর অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করে এমন রোগ গুলোর মধ্যে এসসাইটিস বা পেটে পানি জমা একটি অন্যতম রোগ।
এসসাইটিস বা ওয়াটার বেলি হচ্ছে এমন একটা অবস্থা যা অতিরিক্ত পরিমাণে পানি বা তরল পদার্থ জমা হয় মুরগীর শরীরে।বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে এই রোগের বিস্তার হয় এবং খামারে ক্ষতি সাধিত হয়। এবং ব্রয়লার মুরগিতেই বেশি দেখা যায়।

রোগের কারণঃ এই রোগের নানা কারণের সমন্বয়ে হয়ে থাকে-

দ্রুত শারীরিক বৃদ্ধিঃ
বর্তমানে ব্রয়লার মুরগীতে এর প্রভাব বেশি কারণ অল্প সময় খুব বেশি পরিমাণ বৃদ্ধি সাধিত হয়। দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত মাংশপেশিতে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেনের সরবরাহ প্রয়োজন। আর এই জন্যই অক্সিজেনের ঘটতি হলে এই রোগ হয়ে থাকে।
যথেষ্ট বায়ুচলাচলের অভাবঃ
অতিরিক্ত লাভের আশায় এক স্থানে বেশি পরিমাণ মুরগি লালন পালন করা হয়। এর ফলে সহজে খামারের গ্যাস বের হয়ে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ বাতাস আসতে পারেনা। ফলে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়।

ঠান্ডা অবহাওয়াঃ
বিশেষত শীতের দিনে পরিবেশ বেশ ঠান্ডা থাকে আর এর ফলে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়। কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতের দিনে মুরগীকে রক্ষার জন্য যে প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেয়া হয় তাতে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকে না। ফলে অক্সিজেনের ঘটতি এই সময়েই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
অতিরিক্ত পুষ্টিকর ফিড খাওয়ানোঃ
দ্রুত বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাওয়ানো হয়। ফলে তা মেটাবলিজমের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়।

গাদাগাদি করে থাকাঃ
গাদাগাদি করে থাকার ফলে বেশি ঘটতি দেখা যায় সব কিছুর।তাই এই রোগ হতে পারে। ডিমে তা দিতে সমস্যা হলেও এই রোগ হতে পারে।
এমোনিয়া গ্যাসঃ
এমোনিয়া গ্যাস বেশি উৎপন্ন হলে-শীতের দিনে শেডের সাথে বাইরের পরিবেশ বেশি বায়ু চলাচল হয় না। যার ফলে মুরগির বিষ্ঠা হতে উৎপন্ন এমোনিয়া নামক ঝাঝালো গ্যাসটা শেড থেকে দূর হয়না। আর এই বিষাক্ত গ্যাস থাকার কারনেও এই পেটে পানি জমা রোগ হয়ে পারে।

রোগের লক্ষণঃ
• হঠাৎ করে মারা যায়।
• মুরগীর মারা যাওয়ার সময়টা বেশি হয় ২২ দিনের পর থেকে।তাছাড়া এই রোগ ১৫ দিনের পর থেকেও লক্ষ্য করা যায়।
• আক্রান্ত পাখি সাধারণ পাখির চেয়ে ছোট, বিষন্ন এবং পালক ছড়ানো ছিটানো দেখা যায়। এর এটা বৃদ্ধি থেমে যাওয়ার কারণেই দেখা যায়।
• মাথা দেখতে ফ্যাকাশে এবং টপ কুচকিয়ে যায়।
• পাখি নড়াচড়া না করে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
• অতিমাত্রায় আক্রান্ত মুরগীর পেট ফুলে থাকতে দেখা যায়।

ময়না তদন্তঃ
মুরগির চিকিৎসার ক্ষেত্রে মুরগি কেটে নিশ্চিত হতে হয়। আর এই রোগে আক্রান্ত মুরগী কাটলে নিম্নোক্ত কারণ দেখা যায়-
• চামড়া সরানোর পরেই প্রচুর তরল পদার্থ দেখা যায়।
• পেটের আশেপাশে/এবডোমিনাল ক্যাভিটিতে বেশি পরিমাণে হলদে তরল পদার্থ দেখা যায়। এমনকি ৩০০ মিলি’র ও বেশি তরল পাওয়া যায়।
• হার্ট এর সাইজ অনেক বড় হয়ে যায়।
• হার্টের আবরণের নিচেও এই ধরনের ফ্লুইড দেখা যায়।
• লিভার বা যকৃত ফুলে যায়।
• ফুসফুস খুবই সংঙ্কোচিত এবং পানি পুর্ণ হয়ে যায়।
• কিছু কিছু মুরগী এই এসসাইটিস বৃদ্ধি পাওয়ার পুর্বেও মারা যায়।

চিকিৎসাঃ
এই রোগের তেমন খুবই কার্যকর চিকিৎসা নেই। শুধু মাত্র আনুসাঙ্গিক চিকিৎসা দেয়া হয়।

নিয়ন্ত্রণঃ কিছু বিষয় খেয়াল করলে এর প্রভাব কমানো যায়- যথা
• খুব বেশি খাবার না দিয়ে পরিমাণ মত খাবার সরবারহ করা।
• পোল্ট্রি শেডে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করা।
• শীতকালে ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে মুরগীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখা।
• শেডে যেন এমোনিয়া গ্যাস বেশি না জমা হয় সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এই বিষয়গুলো খেয়াল করে পোল্ট্রি খামার করলে নিজে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশের জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখা যাবে বলে আশা করি