মূল্য না পাওয়ায় পানচাষে অনিহা মাদারীপুরের চাষিদের

450

Madaripur--picture-21-07-17
জাকির হোসেন, মাদারীপুর থেকে: মাদারীপুরে পান চাষে ভাটা পড়ায় জেলার ৫ হাজার পান চাষি পরিবারে নেমে এসেছে দুর্দিন। প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি, সময় মতো অর্থ যোগান না পাওয়া, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ার কারণে জেলার পান উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে পান চাষিরা। অনেকে পান চাষ ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশা ও ব্যবসায় চলে গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এক সময় মাদারীপুর জেলার পান এলাকার চাহিদা পূরণ করেও ঢাকা পাঠানো হতো। ঢাকা থেকে এ পানের একটি অংশ বিদেশে রপ্তানি করা হতো। এখনও এ পানের সুনাম আছে। শিবচর ও কালকিনি উপজেলার বেশ কয়েকজন পান চাষির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ৭০ এর দশকে জেলার প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমিতে পান চাষ হতো। এর মধ্যে কালকিনির, বাঁশগাড়ি, রমজানপুর, ভুরঘাটা, রাজদী, পাঙ্গাসিয়া, খাঞ্জাপুর, গোপালপুর, ডাসার ও ঠেঙ্গামারা এলাকায় প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমিতে এবং শিবচরের ৫ ইউনিয়নে প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমিতে পানের বরোজ ছিল। ৭০ এর দশক থেকে ৯০ এর দশক পর্যন্ত জেলার পানের উৎপাদন ছিল আশানুরূপ।

এর পর থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পান চাষে ভাটা পড়লেও এক বছর পর চাষিরা পানের উৎপাদনে আশার আলো দেখতে পায়। কিন্তু এক বছরের মাথায় তীব্র বন্যায় তাদের সে আশা-আকাঙ্ক্ষা বানের পানিতে ভেসে যায়। মূলতঃ তখন থেকেই তাদের জীবনে দুর্দিন নেমে আসে। তারা তাদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেনি আজো।

পরবর্তীতে ১৯৯৯-২০০০ অর্থ বছরে তারা আবার আশায় বুক বেঁধে পান চাষ শুরু করেন। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় পান চাষে মন্দাভাব নেমে আসে। ফলে প্রায় ৫ হাজার পান চাষি পরিবরের ২০ হাজারের মতো মানুষ অভাব-অনটনের মধ্যে পড়ে যায়। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ভয়াবহ সিডর তাদের জীবনের সব স্বপ্ন-সাধ কেড়ে নেয়। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে তাদের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। সেই থেকে জেলার পান চাষিরা আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি।

বর্তমানে এক বিঘা জমিতে পান চাষ করতে যে পরিমান খরচ হয়, সে তুলনায় পানের মূল্য কম হওয়ায় তারা লাভবান হতে পারছে না। এছাড়া প্রয়োজনীয় বাঁশ, পাটখড়ি, তার, লোহা, খৈল, কুটা ইত্যাদি উপকরণের মূল্য গত ৪ দশকে দ্বিগুণ বেড়েছে। অথচ পানের দাম সে অনুপাতে বাড়েনি।

শিবচর উপজেলার উমেদপুর, কাঁচিকাটা, রামরায়ের কান্দি, উত্তর ও দক্ষিণ কাঁচিকাটা, চাঁন্দেরচর ও কালকিনি উপজেলার রাজদী ও ভূরঘাটার অনেক পান চাষী পান চাষ ছেড়ে দিয়ে ওইসব জমিতে হলুদ, মরিচ, বেগুন, মূলা, করলা, টমোটো, ধান, পাট, তিল, তিষি, সরিষা ইত্যাদি চাষ করতে বাধ্য হচ্ছে। মাদারীপুর সদর ও রাজৈর উপজেলায় পান চাষ তেমন একটা হয় না। যা হতো তাও নানা প্রতিকূতার কারণে অনেক চাষি পান চাষ ছেড়ে দিয়েছে।

কালকিনির এরফান খা’র চার বিঘা জমিতে পানের বরোজ ছিল- তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পান একটি লাভজনক ফসল হলেও সমস্যা রয়েছে অনেক। তারা সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পায় না। এমনকি, এসব দেখভালের জন্য তেমনভাবে কেউ এগিয়ে আসেনি।

শিবচরের আদর্শ পানচাষি কাদের ও মজিবর বলেন, সরকার ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ব্যবস্থা করলে জেলার পান চাষিরা আবার আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। কারণ পান চাষ লাভজনক বলেই বিগত দিনে বার বার ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে এবং নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেও কৃষকরা পুনরায় পান চাষে ফিরে এসেছে। কিন্তু বর্তমানে বহু চাষি পান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম