মেহেরপুরের গাছে গাছে ভরে উঠেছে আমের মুকুল

472

আমের-মুকুল

মেহেরপুর: জেলার মুজিবনগর আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল। সেই ঐতিহাসিক আমবাগানসহ সুস্বাদু আমের জেলা মেহেরপুর। উৎপাদনের দিক থেকে রাজশাহী প্রথম হলেও স্বাদের দিক থেকে মেহেরপুরের আম প্রথম।

মাটি ও আবহাওয়ার কারণে মেহেরপুরের সুস্বাদু হিমসাগর আম দেশের বাইরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে তার মাহাত্ম ছড়িয়েছে। মেহেরপুরের আমবাগানগুলোতে এখন গাছে গাছে দৃশ্যমান সোনালী মুকুলে মুকুলে ছেয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে সাথে মেহেরপুরের আমবাগানগুলোতে আমগাছে মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। আম্র মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে জেলার আম বাগানগুলো। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে আমের মুকুলের গন্ধর তীব্রতাও বাড়ছে। শীতের তীব্রতা কমে আমের মুকুল ফোটা শুরু হবার সাথে সাথে আম বাগানগুলোতে মধু সংগ্রহে মৌ মাছিদেরও ছোটাছুটি শুরু হয়েছে। মধু আহরণে আসা মৌমাছিদের গুণগুণ গানে বাগানগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে মাদকতাময় আবেগের। সেইসাথে মেহেরপুর জেলার ১১ হাজার আমচাষির ব্যস্ততা বেড়েছে।

বাগান মালিকরা বাগানের আমগাছে ওষুধ স্প্রেসহ বিভিন্ন ধরণের যত্ন-আত্মি শুরু করেছে। মৌসুমের শুরুতেই পর্যাপ্ত মুকুলের সমারোহে আমচাষিদের মনে সোনালী স্বপ্ন দোলা দিচ্ছে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাসেই প্রতিটি গাছেই পুরোপুরিভাবে মুকুল ফুটে যাবে। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন বাগান মালিক ও বাগান ব্যবসায়ীরা।

কৃষি বিভাগ জানায়, আমচাষে প্রথমে আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী। কিন্তু স্বাদে গন্ধে প্রথম মেহেরপুর জেলার আম। মেহেরপুর আম সুস্বাদু হওয়ায় এখানকার আমের চাহিদা দেশের সব জেলাতেই দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে আমের বাগান ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেহেরপুরের মুজিবনগর ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি মুজিবনগর আম্রকাননে ১২শ আমগাছ আছে। এখন মেহেরপুর জেলায় বাণিজ্যিকভিত্তিতে সব জাতের আমেরই চাষ হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর কৃষিজমিতে তৈরি করা হচ্ছে আমের বাগান। এখন যে কেউ মেহেরপুরে পা রাখলে তার প্রথমে অনুভূত হবে বাতাসে কড়া মিষ্টি গন্ধ। পাগল করা এ সুবাস গাছে গাছে বিকশিত আমের মুকুলের। শহর ছেড়ে গ্রামের পথে পা বাড়ালেই মুকুলের হাতছানিতে বিমোহিত হবেন যে কেউ।

বাগান মালিকরা বলছে, গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ দেখে মনে হচ্ছে, এবারও আমের বাম্পার ফলন হবে এ অঞ্চলে।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের আমচাষি রায়হানুল হক জানান, শীতের তীব্রতা থাকলেও আমগাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার গাছগুলোতে মুকুলের সমারোহ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আক্তারুজ্জামান জানান, মূলত তিনটি পর্যায়ে আমের মুকুল আসে। যার প্রথম পর্যায় শুরু হয়েছে। পুরোনো জাতের গাছগুলোতে মুকুল ধরেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সব গাছে মুকুল দেখা যাবে। এখানকার মাটির গুণেই হিমসাগর, লেংড়া, বোম্বাই, তিলি বোম্বাই ইত্যাদি জাতের আম খুবই সুস্বাদু। বিশেষ করে নিয়মিত জাত ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাতি, আশ্বিনা জাতের বাগান বেশি থাকলেও গবেষণাকৃত বারি-৩, বারি-৪ জাতের বাগান তৈরির ক্ষেত্রেও আগ্রহী হয়ে উঠছে অনেকে। সেই সঙ্গে নতুন নতুন বাগানগুলো তৈরি হচ্ছে বনেদি ও হাইব্রিট জাতের। নিয়মিত যত্ন নিলে আমের অফ ইয়ার বলে কিছু থাকে না। প্রতিবছরই বাগানে আম আসবে বলে তিনি জানান। জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। প্রায় ২০০ জাতের আম উৎপন্ন হয় মেহেরপুরে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন