মেহেরপুর : বিভিন্ন কোম্পানির সহায়তায় বিগত কয়েক বছর ধরে মেহেরপুরের চাষিরা মাঠে কলমি শাকের বীজ উৎপন্ন করে বিক্রি করছেন। বর্তমানে মেহেরপুরের মাঠে শাক খাওয়ার জন্য চাষ হচ্ছে কলমি। অন্যান্য শাকের সাথে পাল্লা দিয়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে কলমি। দামও ভালো।
আগে খাল-বিল, পুকুরসহ বিভিন্ন জলাশয়ে অযত্নে আর অবহেলায় কলমি শাক উৎপন্ন হতো। কিন্তু বর্তমানে বাজারজাত করার জন্য আবাদি জমিতে কলমির চাষ করছে চাষিরা। মেহেরপুরের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে কলমি শাক। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এর পুষ্টিগুণ জেনে বর্তমানে বাজার থেকে কলমি শাক কিনে বাড়িতে নিয়ে রান্না করে খাচ্ছেন।
কলমি শাক আঁশজাতীয় একটি খাবার। এতে খাদ্য উপাদান রয়েছে প্রচুর পরিমানে। এটি চোখ ভালো রাখে, হজমে সাহায্য করে এবং রক্তে হিমোগ্লে¬াবিনের অনুপাত ঠিক রাখে। ভর্তা কিংবা ভাজি করে তরকারি হিসেবে খাওয়া হয় এ কলমি শাক। কলমী শাকে রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। দামে সস্তা অথচ পুষ্টিগুণে ভরপুর।
পুষ্টিমান:-প্রতি ১০০ গ্রাম কলমি শাকে জলের পরিমাণ ৮৯.৭ গ্রাম, আমিষ- ৩৯ গ্রাম, আয়রন-০.৬ গ্রাম, শ্বেতসার ৪.৪ গ্রাম, ফাইবার-১৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ০.৭১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৪৯ মিলিগ্রাম, ক্যালোরি ৩০ কিলো ।
মেহেরপুর সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার যুবক কাজল ১৫ কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে কলমি চাষ শুরু করেছেন। তিনি এতে সফলতা পেয়েছেন। তার কলমির ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে ক্ষেত যেন সবুজের চাদরে ঢাকা। ফুলও ধরেছে ব্যাপক।
কলমি চাষ সম্পর্কে মো. কাজল বলেন, ‘আমি প্রথমে এলাকার মাঠে কলমি শাকের বীজ উৎপন্ন হতে দেখি। তাই আমি ভাবলাম লালতীরসহ বিভিন্ন বীজ কোম্পানী কলমি বীজ কেনে। চৈত্রের শেষে আমি ১৫কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে কলমি চাষ শুরু করি। বর্তমানে কলমি শাক বাজারে বিক্রি করে আমার ভালোই আয় হয়।’
কাজলের সফলতা দেখে এলাকার আরো কয়েকজন চাষি তাদের বেশ কিছু জমিতে কলমি চাষ করেছেন। তারাও সফল হয়েছেন কলমি চাষে।
কাজল তার জমিতে ৪ কেজি কলমি বীজ বুনেছেন। যার দাম মাত্র চারশ টাকা। নিয়মিত তিনি ক্ষেতে সেচ দিচ্ছেন। গাছের গোড়ায় রস থাকলে ক্ষেতে সেচ দিতে হয়না। গত তিন মাসে ওই জমিতে তার মোট খরচ হয়েছে আড়াই হাজার টাকা। এর মধ্যে ৪ বার ক্ষেত থেকে কলমি কেটে বিক্রি করেছেন। খরচ বাদ দিয়ে লাভ এসেছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। একটু যত্ন নিলে আরো দু’বার ক্ষেত থেকে কলমি কাটা যাবে।
কাজল প্রতি আঁটি (এক কেজি) কলমি বাজারে পাইকারী বিক্রি করছে ১০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা প্রতি অঁটি বিক্রি করছেন ১৫ টাকায়। পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে সফলতা পাওয়ায় তিনি আরো বেশি জমিতে কলমি শাকের চাষ করবেন বলে জানান।
এদিকে যাদবপুর গ্রামের লাভলু, মনিরুল, সেন্টু, চাঁদ আলীসহ বেশ কয়েকজন চাষি বিভিন্ন বীজ কোম্পানির সহযোগিতায় কলমি শাকের চাষ করেন। তারা শাকের জন্য চাষ করেন না। বীজের জন্য চাষ করেন।
কলমী বীজ চাষি লাবলু হোসেন বলেন, ৮/১০ বছর ধরে বিএডিসি, লাল তীর, ব্রাক, মেটাল সীড, গ্যাটকো সীডসহ বিভিন্ন কোম্পানির সহযোগিতায় এলাকার বেশ কিছু চাষি কলমি শাক করে বীজ উৎপাদান করছেন। ওই বীজ ছয় হাজার থেকে সাত হাজার টাকা মণ দরে কোম্পানি কিনে নিয়েছে। বর্তমান বাজারে এ বীজের দাম কিছুটা কমে গেছে।
তিনি বলেন, কলমি বীজ উৎপাদনের জন্য ভাদ্র মাসে ইরি-বোরো ধানের মতো ক্ষেত তৈরি করে ৫/৬ ইঞ্চি লম্বা চারা জমিতে রোপণ করতে হয়। এর আগে ধানের মত বীজতলা তৈরি করে নিতে হয়। কলমী ক্ষেতে সব সময় পানি থাকতে হয়। ৪ মাসের এ ফসলে ফুল থেকে বীজ তৈরি হলে ক্ষেত থেকে বীজ কেটে রোদে শুকাতে হয়। পরে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বীজ বিক্রি করা হয়।
লাভলু বলেন, এক একর জমির কলমির বীজ তৈরি করতে চাষ, সেচ, সার ও লেবার খরচ বাবদ প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ওই জমির উৎপাদিত বীজ গেল বার ৭৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে কলমী শাকের বীজ উৎপাদনকারী অনেক চাষি বললেন, বীজ তৈরির চেয়ে কলমী শাক চাষে খরচ কম এবং লাভ অনেক বেশি। বিধায় তাদের অনেকে সামনের মৌসুমে বীজ চাষের পরিবর্তে কমলী শাক তৈরি করবেন।
ব্র্যাকসিড ফার্মের কর্মকর্তা আজাদ আলী জানান, তাদের চুক্তিবদ্ধ চাষিরা ‘সিগা’ জাতের কলমী বীজের জন্য চাষ করেছে ২০ একর জমিতে। তারা ২০ হাজার কেজি কলমী বীজ ক্রয় করবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আক্তারুজ্জামান জানান, জেলায় ৩শ একর জমিতে বীজ ও সবজি হিসেবে কলমী চাষ হচ্ছে। প্রতিবছরই কলমির চাষ বাড়ছে বলেও তিনি জানান।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন