মেহেরপুর: দোরগোড়ায় কোরবানির ঈদ। এ কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মেহেরপুরে এবার প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে অনেক খামারি ও ব্যক্তি পারিবারিকভাবে কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণ করেছে।
এসব পশু ইতোমধ্যে বাজারজাত শুরু হয়েছে। মানুষের স্বাস্থ্যের কথা সামনে রেখে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটা-তাজা করতে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ তত্বাবধান করছে। এসব পশুর মধ্যে আছে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া। প্রকৃতিক পদ্ধতিতে গবাদিপশু মোটাতাজা করতে কয়েকশ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসাবমতে, মেহেরপুর জেলায় ৩৬ হাজার ৫৪৩টি গরু, ৬৪০টিটি মহিষ, ৫৯ হাজার ৪৯০টি ছাগল ও ২ হাজার ২৮২টি ভেড়া মোটাতাজা করা হয়েছে। মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসাবে পারিবারিক এবং বিভিন্ন খামারে এসব গবাদিপশু মোটাতাজা করা হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলায় গরু মোটাতাজা করার বড় ফার্ম গাংনীর মালসাদহ গ্রামে ‘অ্যাপকম ক্যাটেল ফার্ম’। সরেজমিনে দেখা যায় চারটি শেডে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে।
ফার্মের মালিক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, পশুকে প্রাকৃতিক ঘাস, ভুষি, খৈল ও খড়সহ রাসায়নিকমুক্ত খাবার দেয়া হয়। কোন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য বা ট্যাবলেট গরুকে দেয়া হয় না। ক্ষতিকারক কোন ট্যাবলেট না দেবার কারণে অন্য প্রতিষ্ঠানের মতো এখানে রাতারাতি গরু মোটা হয় না। এজন্যই এ ফার্মের গরু স্বাস্থ্যসম্মত।
তিনি আরও জানান, তার ফার্মে বর্তমানে ১৮০টি গরু রয়েছে ২৭ মাস বয়সের। প্রতিটি গরু ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে কিনে ১০ মাস লালন পালন করে কোরবানিকে সামনে রেখে বিক্রি করেন। প্রতিটি গরু ৬৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়।
গাংনী পৌর এলাকার মালসাদহ গ্রামটি ঘুরে দেখা যায় গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে একটি দুটি করে গরু পালন করতে। গ্রামের আবদুল করিম ও সালেহা বেগম অভিন্ন সুরে বলেন, গত ১০-১২ বছর ধরে তারা একটি দুটি করে গরু মোটাতাজা করে নিজেরা স্বাবলম্বী হয়েছেন। তারমতো গ্রামের অধিকাংশ পরিবার গরু পালন করেই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল জানান, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে নিষিদ্ধ ডেক্সামেথ্যাসন ট্যাবলেট খাইয়ে মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি চালু ছিল। জেলা প্রাণিসম্পদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ উদ্যোগ নিয়ে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পশু পালনে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে খামারিদের।
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলায় ‘মুজিবনগর এগ্রো লিমিটেড’ ফার্মে দেখা যায় শতাধিক গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি সৌদিতে দীর্ঘদিন থেকেছেন। চারবছর আগে দেশে ফিরে এসে গবাদিপশুর ফার্ম দিয়েছেন। ফার্মে ১০ জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান করেছেন। বর্তমানে তার ফার্মে ৬৭টি গরু প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, জেলার অনেক খামারি শুভবুদ্ধির পরিচয় দিচ্ছে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পশু পালনে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিরা তাদের উৎসাহিত করেছে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পশু পালনে। এর ফলে খামারগুলোতে অনেক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিএসএস।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন