১। রানীক্ষেত রোগঃ রানীক্ষেত মুরগির ভাইরাস জনিত তীব্র ছোঁয়াচে রোগ । রোগের লক্ষণঃ ক। প্রথমদিকে আক্রামত্ম পাখি দলছাড়া হয়ে ঝিমাতে থাকে। খ। শরীরে কাপুনি হয় এবং ঘন ঘন শ্বাস গ্রহন করে। গ। সাদাটে সবুজ পাতলা পায়খানা করে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। ঘ। মুখ হা করে থাকে, কাশতে থাকে, নাক মুখ দিয়ে শেস্নষ্মা ঝরে। ঙ। শরীর শুকিয়ে যায়। চ। মাথার ঝুটি ও গলার ফুল কালচে হয় এবং চোখ মুখ ফুলে যায়।ছ। ডিমপাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যায়, ডিমের খোসা পাতলা ও খসখসে হয় এবং অপুষ্ট ডিম উৎপাদন হয়। রোগ প্রতিরোধঃ প্রতিরোধই এ রোগ দূরীকরনের একমাত্র উপায়। তাই সময়মত পাখিদের টিকা প্রদান করতে হবে। টিকাঃ (বিসিআরডিবি) ১/৩ দিনের সুস্থ মুরগির বাচ্চাকে। আরডিবি টিকাঃ ৬ সপ্তাহের মুরগিকে।
২। বসন্ত রোগঃ হাঁস মুরগির বসমত্ম বা ফাউল পক্স ভাইরাস জনিত ছোঁয়াচে রোগ। সব প্রজাতির পাখি এতে আত্রানত্ম হতে পারে। রোগের লক্ষণঃ ক। আক্রামত্ম পাখির মুখমন্ডলে বসমেত্মর গুটি দেখা যায়। খ। আক্রামত্ম পাখির ক্ষুধামন্দা, দৈহিক ওজন হ্রাস ও ডিম উৎপাদন কমে যায়। গ। আক্রান্ত হাঁস-মুরগির জিহবায় ক্ষত দেখা যায়। রোগ নিয়ন্ত্রণঃ রোগ প্রতিরোধের জন্য যথাসময়ে হাঁস-মুরগির টিকা প্রযোগ করতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরী এবং মশা-মাছি নিয়ন্ত্রণ জরুর। রোগ থেকে আরোগ্য লাভকারী পাখীতে আজীবনের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মে। টিকাঃ ২১ দিন বয়সের বাচ্চা।
৩। বার্ড ফ্লু রোগঃ ভাইরাস জনিত তীব্র ছোঁয়াচে রোগ। এ রোগ পাকি থেকে মানুষে সংক্রমিত হতে পারে। রোগের লক্ষণঃ ক। শ্বাস কষ্ট হয়। খ। নাক দিয়ে পানি পড়ে। গ। তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ঘ। ডিমপাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যায়। ঙ। আক্রান্ত হওয়ার ২/৩ দিনের মধ্যেই খামারে ব্যাপক হারে পাখি মারা যায়। চ। অনেক সময় ঘাড় ও মাথা বাঁকা হয়ে যেতে পারে। রোগ প্রতিরোধঃ জীবনিরাপত্তা বা বায়োসিকিউরিটিই এ রোগ দূরীকরনের একমাত্র উপায়। সবসময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, অতিথি পাখি থেকে হাঁস মুরগি দূরে রাখতে হবে।
৪। গামবোরো রোগঃ গামবোরো বাচ্চা মুরগির মারাত্নক সংক্রামক রোগ। এ রোগকে বার্ড এইডস বা পোল্ট্রি এইডসও বলা হয়। রোগের লক্ষণঃ ক। পালক উসকোখুশকো হযে যায়। খ। সাদা রংয়ের শ্লেষ্মাযুক্ত মল ত্যাগ করে যা মলদ্বারের চারপাশে আঠার মতো লেগে থাকে। গ। পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার কারনে পানিশুন্যতা দেখা দেয়। ঘ। পাখি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় ও দুর্বল হয়ে পড়ে। ঙ। আক্রান্ত মুরগি বেঁচে গেলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না। রোগ প্রতিরোধঃ প্রতিরোধই এ রোগ নিয়ন্ত্রনের একমাত্র পন্থা। এ জন্য খামারে সবসময় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। সময় মত টিকা প্রয়োগ করতে হবে। টিকাঃ ব্রয়লার ৮ দিনের এবং লেয়ার ১৪ দিনের বাচ্চা।
৫। ডাক পেস্নগঃ হাঁসের প্লেগ বা ডাক প্লেগ একটি তীব্র প্রকৃতির ভাইরাস জনিত সংক্রামক রোগ। রোগের লক্ষণঃ ক। নাক দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরে। খ। পালক উসকোখুশকো হয় ও পাখা ঝুলে থাকে। গ। চলাফেরায় অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। ঘ। পাতলা পায়খানা হয় যা পাখির লেজের আশেপাশে লেগে থাকে। ঙ। ঘাড় মাথা বাঁকা করে উপরের দিকে চেয়ে থাকে । এটি ডাক প্লেগের একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ। চ। অনেক সময় মৃত হাঁসের পুরুষাঙ্গ বেরিয়ে আসে। রোগ প্রতিরোধঃ প্রতিরোধই এ রোগ নিয়ন্ত্রনের একমাত্র উপায়। এ জন্য খামারে সবসময় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। সময় মত হাঁস-মুরগিকে টিকা প্রদান করতে হবে। টিকাঃ ২৮ দিনের হাঁসকে।
৬। হাঁস-মুরগির কলেরাঃ হাঁস মুরগির কলেরা বা ফাউল কলেরা হাঁস-মুরগির একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া জনিত একটি সংক্রামক রোগ। রোগের লক্ষণঃ ক। সবুজ রঙের পাতলা পায়খানা করে। অনেক সময় পায়খানা ফেনাযুক্ত হয়। খ। নাক ও মুখ দিয়ে পানি পড়ে। গ। পাথার ঝুঁটি একেবারে কালো হয়ে যায়। ঘ। মাথা বাঁকা করে বসে থাকে এবং পা খোঁড়া হয়ে যায়। প্রতিরোধ ও দমনঃ প্রতিরোধই এ রোগ নিয়ন্ত্রনের একমাত্র উপায়। এজন্য খামারে সবসময় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। সময় মত টিকা প্রদান করতে হবে। অয়েল এডজুভেন্টঃ ৬০ দিনের হাঁস-মুরগিকে। এলাম অধঃপতিত টিকাঃ ৬০ দিনের মুরগিকেই।
৭। পিজিয়ন পক্সঃ কবুতরের একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। টিকাঃ ৪/৬ দিনের কবুতর ও মুরগিকে।
পরজীবীজনিত রোগঃ হাঁস-মুরগি বিভিন্ন ধরনের বহিঃপরজীবী ও অমত্ম ঃ পরজীবী (গোলকৃমি, পাতাকৃমি ও ফিতাকৃমি) দ্বারা আক্রামত্ম হয়। এ ছাড়া নানা ধরনের প্রটোজোয়া ও কীট পতঙ্গ (উকুন, আঠালি, মাছি, মাইট) এদের আক্রমন করে থাকে। প্রতিরোধঃ পরজীবীর শ্রেণী সনাক্ত করে সুনির্দিষ্ট ঔষধ প্রয়োগ করা।