মৌসুম শেষেও দেখা মিলছে না ইলিশের

285

মাছ-শিকার

জাহিদ রিপন, পটুয়াখালী থেকে: পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাব, তীব্র সমুদ্র স্রোতসহ মিষ্টি পানির প্রবাহ না থাকা মৌসুমের শেষ সময়েও গভীর সমুদ্রগামী জেলেদের জালে দেখা মিলছে না ইলিশের।

ভরা মৌসুমে আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে পটুয়াখালীর বিস্তীর্ণ উপকূলের প্রায় বাইশ হাজার গভীর সমুদ্রগামী ইলিশ শিকারী জেলে। ফলে ইলিশকে ঘিরে উপকূলীয় এ জনপদের জেলে, আড়ৎদার এবং ট্রলার মালিকদের মাঝে নেমে এসেছে জীবন জীবিকাসহ আর্থিক ক্ষতির হতাশা।

আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন এই চার মাসকে ধরা হয় ইলিশের ভরা মৌসুম। এসময় বঙ্গোপসাগর এবং উপকূলের মোহনার নদীগুলোতে জেলেদের জালে ধরা পরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। কিন্তু মৌসুমের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও জালে ধরা পড়ছে না আশানুরূপ ইলিশের। গভীর সমুদ্রে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জাল টেনেও মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ। ফলে মনোকষ্ট নিয়েই ঘাটে ফিরছে জেলেরা।

ইলিশ শূন্যতায় হাহাকার চলছে জেলে পল্লিগুলোতে। অভাব অনটন আর চরম হতাশায় পরিবার পরিজন নিয়ে পার করছে মানবেতর জীবন। এনজিও লোন আর মহাজনী দাদনের টাকা পরিশোধের ভাবনায় জেলে পরিবারে নেমে এসেছে হতাশা।
মৎস্যবন্দর আলীপুর, মহিপুর, কুয়াকাটার শতাধিক মৎস্য আড়ৎ অনেকটাই কর্মব্যস্ততাহীন। অলস সময় পার করছেন শ্রমিক জেলেরা। বাজারেও দেখা মিলছে না ইলিশের। আর দাদন দিয়ে ক্ষতির শংকায় মৎস্যব্যাবসায়ী ও ট্রলার মালিকরা।

সরেজমিনে কুয়াকাটা, আলীপুর-মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বছর মৌসুমের এ সময় মাছ নামানোর জন্য অপেক্ষায় থাকতো শতাধিক ট্রলার। সেই ঘাটে এখন নোঙর করে আছে অনেক ট্রলার। এসময় শ্রমিকরা বসে থাকার সুযোগ পেত না। সেখানে এখন তারা পার করছেন অলস সময়।

কুয়াকাটার জেলে আকরাম জানান, যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়ার কথা তার দশ ভাগের এক ভাগও মিলছে না। যাও বা মিলছে তাতে সাগরে আসা-যাওয়ার খরচ উঠছে না।

অপর জেলে শামসুল হক জানান, বলা যায় জাল ফেলে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে।

জেলে রুবেল বলেন, দাদন আর ধারদেনা শোধ করব কীভাবে, এ চিন্তায় অস্থির হয়ে আছি।

আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পরায় ক্ষতির শংকায় ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করে আলীপুর-কুয়াকাটা মৎস্য ব্যবসায়ী ও ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, আমাদের গভীর সমুদ্রগামী জেলেরা মূলত সনাতন পদ্বতিতে দিক ও স্থান নির্ণয় করে সাগরে মাছ শিকার করে থাকে। ফলে গভীর সাগরে মাছের দেখা পেলেও পুনরায় সেখানে যেতে পারছে না।
অপরদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরের পানির উচ্চতা এবং স্রোতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই স্রোতের তোড়ে জেলেরা অনুমান করতে পারছে না তারা কতটুকু অভ্যন্তরে কিংবা কোথায় রয়েছেন। এটা যদি জিপিআরএস দ্বারা সনাক্ত করা হয়, তবে পুনরায় সেখানে গিয়ে তারা মাছ শিকার করতে পারবে।

পটুয়াখালীর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, ইলিশ ধরা পরছে না তা নয়। এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায়, মিঠা পানি প্রবাহ কম থাকায় পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পরছে না।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন