মৎস্য সম্পদ: উৎপাদন বাড়লেও কমেছে রফতানি

305

দেশে মাছের উৎপাদন বাড়লেও রফতানিতে কোনো সুখবর নেই। বরং রফতানি দিন দিন কমছে। গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) বাংলাদেশ থেকে ৭০ হাজার ৯৫০ টন মাছ রফতানি হয়েছে। কিন্তু পাঁচ বছর আগেই মাছ রফতানি হয়েছিল সাড়ে ৮৩ হাজার হাজার টন।

স্বাভাবিকভাবেই রফতানির পরিমাণ কমায় মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের রফতানি আয়ও কমছে ধারাবাহিকভাবে। গত অর্থবছরে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ ৪৬ কোটি ৯ লাখ ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে, যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৬৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার।

জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, রাশিয়া ইত্যাদি দেশ বাংলাদেশের মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের প্রধান আমদানিকারক দেশ। এছাড়া কানাডা, মেক্সিকো, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, জর্ডান, ভিয়েতনাম পর্যন্ত বাংলাদেশের মাছ রফতানি হয়েছে নিয়মিত। এছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রফতানি করা হয় ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ ও মিয়ানমারে। তবে নানা প্রতিবন্ধকতায় তালিকার সবদেশে এখন আর মাছ রফতানি হচ্ছে না।

মৎস্য অধিদফতর বলছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৮৩ হাজার ৫২৪ টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানি করেছিল। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭৫ হাজার ৩৩৭ টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৮ হাজার ৩০৫ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬৮ হাজার ৯৩৫ টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৭৩ হাজার ১৭০ টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানি হয়েছে।

মৎস্য খাতের মোট রফতানির মধ্যে চিংড়ির পরিমাণই বেশি। চিংড়ি রফতানি কমায় সার্বিক মাছ রফতানি কমার মূল কারণ। এর মধ্যে গত অর্থবছরের তথ্য না মিললেও ২০১৮-১৯ সালে দেশ থেকে ৩৩ হাজার ৩৬৩ টন চিংড়ি রফতানি হয়েছে। ২০১৪-১৫ সালেও ৪৪ হাজার ২৭৮ টন চিংড়ি রফতানি হয়েছিল। তার চেয়ে বেশি চিংড়ি রফতানি হয়েছে বিগত বেশকিছু অর্থবছরে। এর মধ্যে ২০০৬-০৭, ২০০৮-০৯ ও পরের দুই অর্থবছর এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে অর্ধলাখ টনের বেশি চিংড়ি রফতানি হয়েছে।

মাছ রফতানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ খাতে কোনো বিদেশি বিনিয়োগ নেই, অথচ বিদেশি বিনিয়োগ আসার সুযোগ রয়েছে। বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার বা বেসরকারি খাতের খুব বেশি চেষ্টা নেই। এছাড়া চিংড়ির মান উন্নয়নে ও বিকল্প দেশ খুঁজতে অপ্রতুল সহায়তা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রফতানিকারক সমিতির (বিএফএফইএ) সভাপতি আমিন উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, তিনটি কারণে চিংড়ি রফতানি কমেছে। প্রথমটি হলো, দেশে এখনো চিংড়ি চাষ হচ্ছে সনাতন পদ্ধতিতেই। এতে উৎপাদন খুব কম। তার মধ্যে আবার দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চিংড়ির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সবমিলিয়ে রফতানির জন্য চিংড়ি মিলছে না। দ্বিতীয়ত, ভেন্নামি নামের এক ধরনের হাইব্রিড চিংড়ি আমাদের রফতানির বাজার ধরে নিয়েছে। যেটা আমাদের দেশে হয় না। ওইসব চিংড়ির উৎপাদন আমাদের চিংড়ি থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত। ফলে ওই চিংড়ি এখন কম দামে বিশ্ব বাজারের ৭৭ শতাংশ দখল করেছে।

আর শেষ কারণ, রফতানি কমার পরও মৎস্য খাত নিয়ে সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। অন্য মাছের জাত সুরক্ষার দোহাই দিয়ে আমাদের উন্নত জাতের চিংড়ি চাষের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে বলে জানান আমিন উল্লাহ।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৯মার্চ২০২১