ভারত থেকে ডিম আমদানির প্রভাব পড়েছে যশোরের বাজারে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার তদারকি না করার কারণে দামের ক্ষেত্রে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে রয়েছে বিস্তর ফারাক। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ভারত থেকে ৬২ হাজার ডিম আমদানি করার খবরেই যশোরের বাজারে ডিমের বাজারে দাম কমতে থাকে। পাইকার পর্যায়ে এক লাফে প্রতি ডজনে ১৫ থেকে ২০ টাকা কমে যায়। তবে খুচরা বাজারে দাম তেমন একটা কমেনি।
গতকাল যশোর বড়বাজার, রেল বাজার, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড বাজার ঘুরে দেখা গেছে পাইকার পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৬ টাকা দরে। অথচ খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন বাদামি কালারের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানান, যশোরে প্রতিদিন ১০ লাখেরও বেশি ডিম বিক্রি হয়। এসব ডিমের জোগান আসে আফিল লেয়ার ফার্ম, চাঁদ অ্যাগ্রো ও পাবনার কয়েক ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে। ভারত থেকে আমদানি করা ডিম যশোরের বাজারে সরবরাহ না হলেও ডিমের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ডিমের দাম কমানোর কারণে ভোক্তা পর্যায়ে দাম কমে আসে। তবে এর বড় প্রভাব পাইকার বাজারে পড়লেও খুচরা দোকানগুলোতে বেশি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে।
যশোর শহরের খালধার রোড, বরফকল মোড়ের আনিছ এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম বলেন, রোববার আফিল লেয়ার ফার্মের ডিম প্রতি পিস সাড়ে ৯ টাকা দরে কিনে এনে সেটি ১০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ মাত্র এক সপ্তাহ আগে এই ডিম আমরা ১২ টাকা দরে কিনতে হয়েছে। তিনি বলেন, ডিমের বাজার সব সময় ওঠানামা করে। সামনে যদি আমদানি ডিম বাজারে না আসে তাহলে আবার দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে একই দিনে শহরের রেল রোড ডিমের পাইকার দোকান বিসমিল্লাহ অ্যাগ্রোতে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে পাইকার দরে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা ৫০ পয়সা দরে। অন্য দোকানের তুলনায় ডিমের দাম বেশি কেন নেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ওই দোকানের বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, আমাদের দোকানের ডিম অধিকাংশ যশোরের বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে আনা হয়। যে কারণে আপাতত একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। খুব দ্রুত আরও দাম কমে যাবে বলে তিনি দাবি করেন।
তবে পাইকার বাজারে ডিমের দাম কমে গেলেও শহরের ছোট খাটো যেসব বাজার রয়েছে সেসব বাজারে মুদি দোকানগুলোতে প্রতি পিস ডিম সাড়ে ১১ টাকা থেকে ১২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শহরতলির জামরুল তলা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি দোকানে প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ একই ডিম শহরের বড়বাজার এলাকার খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১০ থেকে ১১ টাকা।
এ বিষয়ে আফিল অ্যাগ্রো লেয়ারের ম্যানেজার আকতারুজ্জামান বলেন, রোববার তাদের প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত ডিম প্রতি পিস সাড়ে ৯ টাকা দরে সরবরাহ করা হয়েছে। শনিবার সরবরাহ করা হয়েছিল প্রতি পিস ৯ টাকা।
পাইকার ও খুচরা পর্যায়ের এ দামের বিস্তর ফারাকে ভোক্তা পর্যায়ে চরম অসন্তোষ রয়েছে। গতকাল বিকালে শহরের বড়বাজারে কথা হয় কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে। তারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সরকারি তদারকির অভাবে ডিমের বাজারের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। শরিফুল ইসলাম নামে একজন ক্রেতা বলেন, একই বাজারে একই পণ্য একেক দোকানে একেক ধরনের দাম। এটা কখনও মেনে নেয়া যায় না। সরকার যদি কঠোর হস্তে দমন করত তাহলে বাজার পরিস্থিতি এমন থাকত না বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে জেলা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ডিমের বাজারে যে পরিস্থিতি আগে ছিল তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। পাইকার ও খুচরা পর্যায়ে দাম কমতে শুরু করেছে। আমরা আশা করছি খুব দ্রুত আরও দাম কমে যাবে। তবে এ বিষয়ে কেউ সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে তাদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।