যশোরে মৎস্যখাতে বার্ষিক আয় প্রায় ৩২ লাখ মার্কিন ডলার

374

500
তরিকুল ইসলাম মিঠু, যশোর থেকে: যশোরের মাছ চাষীরা এক বছরে ৩১ লাখ ৯০ হাজার ৯৮০ মার্কিন ডলার আয় করেছে। আর এ ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে রয়েছে ৮৬ হাজার ৬৬৭ জন চাষি। শুধু এ বছর নয়। প্রতি বছরেই যশোরের মাছ চাষীরা দেশের চাহিদা পূরণ করে ভারতসহ বিশ্বের প্রায় সাতটি দেশে মাছ রপ্তানি করে একই পরিমানের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে।

এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এ বছরে যশোরের মাছ চাষিরা দেশের মাছের চাহিদা পূরণ করে এ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। যশোরের একাধিক মাছ ব্যবসায়ী এতথ্য নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, দেশের মাছের রেনু পোনার রাজধানী নামে খ্যাত যশোরের চাঁচড়ায় কয়েক হাজার মাছ ব্যবসায়ী রয়েছে। যশোরের প্রতি বছর প্রায় ৬২ মেট্রিক টন রেনু পোনা উৎপাদন হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীরা স্থানীয় মাছের হ্যাচারি মালিকদের কাছ থেকে একদিনের বাচ্চা ক্রয় করে তা বিভিন্ন পুকুর ও ঘেরে মাসাধিকের বেশি সময় রেখে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকে।

প্রথম দিকে এ রেনু পোনা মাছের চারা উৎপাদন শুধু চাঁচা এলাকায় থাকলে পরে তা জেলার ৮টি উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এখন জেলার ৮টি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলেও বাণিজ্যিকভাবে মাছ উৎপাদন হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে।

এ ব্যবসার সঙ্গে জেলার ৮টি উপজেলার প্রায় ৮৬ হাজার ৬৬৭ জন মাছচাষি প্রত্যক্ষও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। এসব মাছ চাষের ফলে জেলায় কয়েক লাখ বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে বলেও জানান যশোরের একাধিক মাছ ব্যবসায়ীরা।

যশোর মৎস্য অফিসের তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যশোরে কার্পজাতের (সাদা) মাছের উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৭৬৭ মে. টন। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ২২৩ মে. টন। এর মধ্যে সাদা সোনা চিংড়ি ও বাগদার উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার ৭৫১ মে. টন। গলদা চিংড়ির উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার ৩১১ মে.টন এবং বাগদার চিংড়ির উৎপাদন হয়েছে ৪৪০ মে. টন। যার সবই মংলা ও চিটাগং পোর্ট দিয়ে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়েছে।

500_063747

সারাদেশে মাছ উৎপাদনে যশোর জেলার অবস্থান দ্বিতীয়। এছাড়া মাছ আহরণে বাংলাদেশ ৪র্থ এবং উৎপাদনে ৫ম স্থান ধরে রেখেছে।

অপরদিকে, মাছচাষ ও আহরণে চীন প্রথম, থাইল্যান্ড ২য়, ভিয়েতনাম তৃতীয় এবং ৪র্থ স্থানে রয়েছে ভারত। যশোর জেলায় মাছচাষি রয়েছে ৮৬ হাজার ৬৬৭ জন। যার মধ্যে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা রয়েছে ১৭ হাজার ১১ জন। এসব মাছ উৎপাদনের জন্য জেলায় জলায়তন রয়েছে ৭৫ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪০ হেক্টর।

এর মধ্যে বদ্ধ পুকুর ও বাওড়ের জলায়তন ৪১ হাজার ৪০০ হেক্টর ও উন্মুক্ত জলাশয়ের আয়তন ১৯ হাজার ৫০৭ হেক্টর। জেলার উৎপাদিত মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, কাতল, মৃগেল, বাগদা, গলদা চিংড়ি, পাঙ্গাস ও কৈ মাছ ইত্যাদি। এই মাছ জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত মাছ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।

ডিম থেকে রেণু পোনা উৎপাদনের জন্য যশোর মোট ৮৯টি হ্যাচারি রয়েছে। এর মধ্যে মা-মাছের ডিম থেকে রেণু পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যে যশোরে সরকারিভাবে কার্প হ্যাচারি রয়েছে ১টি। এখানে রেনু উৎপাদন হয় দশমিক ২ মে. টন। বেসরকারি উৎপাদনশীল হ্যাচারি রয়েছে ৩৬টি, রেনু উৎপাদন হয় ৬১ দশমিক ৭৫ মে. টন, বাকি হ্যাচরিগুলো বন্ধ রয়েছে।

বিশিষ্ট মাছ ব্যবসায়ী গোলাম রসুল ডাবলু ও মজু মিয়া বলেন, আশির দশক থেকে চাঁচড়া বাবলা তলায় কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রথমে মাছের পোনা উৎপাদন শুরু করেন। এর পর আস্তে আস্তে চাঁচড়ার পুরা এলাকায় মাছ উৎপাদন শুরু হয়। এসব উৎপাদিত রেণু পোনা জেলার বিভিন্ন উপজেলার পুকুরেও মাছের ঘেরে মাছ উৎপাদন শুরু করে। বর্তমানে যশোরের রেণু পোনা ও বড় মাছ ঢাকাসহ সারা দেশেই সরবরাহ করা হয়। এমনকি প্রতি বছর যশোর থেকে উৎপাদিত মাছ বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।

যশোরে মাছ চাষে বিপ্লব সার্ধিত হওয়ায় এলাকার কয়েক হাজার বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, এখনো মাছ ব্যবসায়ীরা বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের বাবলা তলায় চারা মাছ কেনা-বেচা করেন। তাদের দাবি সরকার যেন তাদের একটি নির্ধারিত স্থান তৈরি করে দেন। যেখানে জেলার সব ব্যবসায়ীরা তাদের উৎপাদিত মাছ কেনা-বেচা করতে পারেন।

যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. শেখ শফিকুর রহমান বলেন, দেশের মধ্যে রেণু মাছ ও বড় মাছ উৎপাদনে যশোর জেলা শীর্ষে রয়েছে। এসব মাছ চাষের ফলে এলাকার কয়েক লাখ বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ জেলায় উৎপাদিত মাছ নিজেদের চাহিদা পূরণ করে প্রতি বছর প্রায় ৩২ লাখ মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে বলে তিনি জানান।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম