যেভাবে শীতকালীন টমেটো চাষে শতভাগ সফলতা আসে

481

আমাদের দেশে এখন মৌসুমে ও অমৌসুমে প্রচুর পরিমাণে টমেটো চাষ হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা বিশ্বেই সবজি ফসলের মধ্যে আলু ও মিষ্টি আলুর পরেই সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় টমেটো।

সময়: শীতকালীন টমেটো চাষের জন্য কার্তিকের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ (অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ ) পর্যন্ত বীজতলায় বপনের উপযুক্ত সময়।

বীজ ও বীজতলার মাটি শোধন: টমেটো চাষ করা হয় চারা তৈরি করে। এজন্য বীজতলায় বীজ বুনে সেখানে চারা তৈরি করে নিতে হয়। টমেটো চাষে সফলতার জন্য কেনা বীজ বা ঘরে রাখা বীজ প্রথমে শোধন করে নিতে হবে। সম্ভব হলে বীজতলায় বোনার আগে অংকুরোদগম পরীক্ষাও করে নেয়া উচিত।

একবার ফেলার পর বীজতলায় সেসব বীজ না গজালে বা কম গজালে কিংবা গজানো চারা রোগগ্রস- হলে ক্ষতি হবে। বীজের মধ্যে অনেকসময় রোগজীবাণু লুকিয়ে থাকে। যেমন আগাম ধ্বসা বা আর্লি ব্লাইট রোগ, মোজেইক ভাইরাস, ছত্রাকজনিত ঢলেপড়া ইত্যাদি রোগের জীবাণু বীজে থাকতে পারে।

মাটিতে ফেলার পর পানি পেয়ে সেসব রোগজীবাণু সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে চারা মারা যায়। আবার অনেকসময় বীজতলার মাটিতেও কিছু রোগজীবাণু থাকতে পারে। যেমন চারা ধ্বসা বা ড্যাম্পিং অফ রোগের জীবাণু। এসব রোগজীবাণুও চারাকে আক্রমণ করতে পারে। সেজন্য বীজতলার মাটিও শোধন করে নিলে ভাল হয়।

ভাল জাতের টমেটোর নাম: বাহার, বিনা টমেটো-৪, বিনা টমেটো-৫, বারি টে টো-২ বা রতন, বারি টমেটো-৩, ৪, হাইব্রিড এর মধ্যে সবল, মিন্টু, বারি টমেটো-৫ খুব ভাল ফলাফল দিচ্ছে।

চারা তৈরি: সরাসরি জমিতে বীজ বুনেও টমেটো চাষ করা যায়। তবে দ্রুত ভাল ফলন পাওয়ার জন্য আলাদাভাবে চারা তৈরি করে সেই চারা মূল জমিতে লাগাতে হবে। এজন্য রোদযুক্ত উঁচু জায়গায় পরিস্কার করে ভালভাবে মাটি চাষ দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হবে। চাষের পর মাটি সমতল করে ১ মিটার চওড়া করে বেড বানাতে হবে। বেড খুব বেশি লম্বা না করে ৩-৫ মিটার করা ভাল। এতে পরিচর্যার সুবিধে হয়।

ছিটিয়ে বীজতলায় বীজবপন করা যায়। ছিটিয়ে বপনের জন্য সাধারণত প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্য ১০০-১৫০ গ্রাম বীজ লাগে। বীজ থেকে চারা গজাতে ৬-১৪ দিন লাগে। শীতকালীন টমেটো চাষের জন্য বীজ বুনতে হবে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে। আগাম চাষের জন্য শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে বীজ বুনতে হবে।

জমি তৈরি: জমি ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হয়। গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষের জন্য ২০-২৫ সেন্টিমিটার উঁচু এবং ২৩০ সেন্টিমিটার চওড়া বেড তৈরি করতে হয়। সেচ দেওয়ার সুবিধার্থে ২টি বেডের মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার নালা রাখতে হয়।

সার প্রয়োগ: ইউরিয়া ও পটাশ সমান দু’ভাগ করে চারা লাগানোর ১৫দিন এবং ৩৫দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। একর প্রতি ইউরিয়া ৮০-১০০ কেজি, টিএসপি ৬০-৮০ কেজি, এমপি ৬৮-৯২ কেজি, জিপসাম ২০-৩০ কেজি, বোরন ১-২ কেজি এবং ৪ টন গোবর প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ দেয়া : শুষ্ক মওসুমে চাষ করলে পানি সেচ দেয়া প্রয়োজন। ফসল ও মাটির অবস্থা বিবেচনা করে তিনবার সেচ দেয়া যেতে পারে।

যত্ন: মরা পাতা ছাঁটাইসহ ‘অ’ আকৃতি বাঁশের খুটি টমেটো গাছের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি কাজ। এ ছাড়া প্রয়োজনে সেচ দেয়াও যেতে পারে। ভাইরাস রোগ দেখা দিলে গাছ তুলে ফেলতে হবে। অন্যান্য রোগ প্রতিকারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। তেমনি পোকামাকড় দেখা দিলেও সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। টমেটো গাছের বৃদ্ধির কোন ধাপে কি কি রোগ বা পোকার আক্রমণ হতে পারে তা অধ্যায় ৩-এর তালিকা থেকে দেখে নেয়া যেতে পারে।

ফসল সংগ্রহ : জাত ও লাগানোর সময়ের উপর নির্ভর করে ২-৪ মাসের মধ্যেই ফসল তোলার সময হয়। টমেটো পাকা ও কাঁচা উভয়ই অবস্থায়ই তোলা যায়। তবে দূরে পাঠানোর জন্য একেবারে পাকা টমেটো তোলা উচিত নয় এবং পাকানোর জন্য বা টমেটোর ভাল রঙ আনার জন্য কৃত্রিম হরমোন ব্যবহারও ঠিক নয়। প্রতি হেক্টরে ফলন ২০-৪০ টন।

এছাড়া টমেটোর বিভিন্ন রোগ ও পোকামকড় দমনব্যবস্থাসহ কৃষির বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করবেন।

যেভাবে শীতকালীন টমেটো চাষে শতভাগ সফলতা আসে শিরোনামে লেখাটির তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৯অক্টোবর২০