প্রযুক্তি, মান আর অভিনবত্বের বিচারে এখন অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশের খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প। মাত্র তিন দশক আগেও এসব পণ্যের জন্য বড় নির্ভরতা ছিল আমদানির ওপর। কিন্তু বিলিয়ন ডলারের স্থানীয় বাজারে এখন ৯০ শতাংশই দখল করে ফেলেছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন দৃষ্টি প্রসারিত হচ্ছে প্রায় দুই’শ বিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক বাজারে। যেখানে বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র এক বিলিয়ন। তাই এই প্রতিযোগিতায় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকা ইউরোপের দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে পণ্যের মান, উৎপাদন ও বিপণনে চৌকস হতে চান রপ্তানিকারকরা।
এ বিষয়ে প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা বলেন, আমরা যদি প্রোডাক্ট আমদানি করে ভ্যালু এড করে আবার রপ্তানি করি তবে দেশে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি বাড়বে, সেই সঙ্গে দেশের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে।
তবে, সেই পথ যে অতোটা মসৃণ হবে না, তার আঁচ পাওয়া যায় ব্যবসায়ীদের বিশ্লেষণে। এই খাতের সংগঠন বাপা’র তথ্য অনুযায়ী, কেবল পর্যাপ্ত নীতি সহায়তা কাজে লাগিয়ে ৮৪ শতাংশ কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করছে মালয়েশিয়া। এছাড়া থাইল্যান্ড ৮১ এবং যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ৭০ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশ আটকে আছে মাত্র ১ শতাংশে। যা বাড়াতে না পারলে কঠিন হবে প্রত্যাশিত রপ্তানি।
বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন- বাপার সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, রপ্তানি করার জন্যে পণ্যের মান যাচাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বেশ কিছু আইটেম আছে যেগুলো টেস্টের জন্যে দেশের বাইরে পাঠাতে হয়। এতে সময় এবং খরচ দুইটি বেশি প্রয়োজন হয়।
২০২০-২১ এই খাতের রপ্তানি আয় ছাড়ায় বিলিয়ন ডলার। কিন্তু, পরের তিন বছরে তা নেমে যায় বেশ খানিকটা। যার কারণ হিসেবে, নগদ সহায়তা ও বন্ড সুবিধা না থাকা এবং মূল্য সংযোজনী পণ্য উৎপাদনে নজর না বাড়ানোর কথা বলছেন বিশ্লেষকরা। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উদ্যোক্তাদের আমরা কিভাবে আরও উৎসাহিত করতে পারি সে বিষয়ে বেশি বেশি নজর দিতে হবে।
অবশ্য এই শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। কারণ পরিসংখ্যান বলছে, গেলো পাঁচ বছরে জিডিপিতে কৃষির অবদান কমলেও বাড়ছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের উৎপাদন।