আমরা অনেক সময় দেখি ইনকিউবেটরে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার আগেই মৃত্যু হচ্ছে। অনেক সময় বাচ্চা ডিম একটু ফুটো করেই মারা যায়। বিষয়টা এখানে ভ্রুণের মৃত্যু। ডিমের ভিতর বাচ্চার মৃত্যুর অনেক কারণই থাকে। অনেক কারণের মধ্যে যে কারণগুলির জন্য ডিমের ভিতর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চা মারা যায় সে কারণগুলি সম্পর্কে আজকের প্রতিবেদন।
প্রথমত যে ডিমে বাচ্চা মারা গিয়েছে আপনি সেই ডিমটি ভেঙে দেখুন। লক্ষ্য করুন বাচ্চাটি অল্প কিছুদিন হলো মারা গিয়েছে। যেহেতু ডিমের বাচ্চা বড় হয়ে মারা গিয়েছে, তাই সহজেই বোঝা যায় ডিমের ভিতর বাচ্চা বড় হবার সাথে সাথে এমন কিছুর অভাব ঘটেছে যার কারণে বাচ্চা ফুটার আগেই মৃত্যু হয়েছে।
ভ্রুণ যখন বড় হতে থাকে তখন সেই ভ্রুপের বৃদ্ধির সাথে সাথে সবকিছুই নিখুঁত পরিমাণে প্রয়োজন হয়। মনে রাখা উচিৎ ভ্রুণকে শুধুমাত্রা স্বাভাবিক নিয়মে বৃদ্ধি করলেই সেই ভ্রুণ বড় হয়ে নিরাপদে ডিম থেকে বের হতে পারবে। যদি কোনো কিছু স্বাভাবিকের চেয়ে ব্যতিক্রম হয় তবেই সমস্যা জটিল আকার ধারণ করতে থাকে।
আদ্রতা:
যদি বেশি আদ্রতা হয় তবে ডিমের ভিতর তরল পূর্ণই থাকে এবং ডিমের খোসা শক্ত হয়ে যায় ফলে ভ্রুণের অক্সিজেন গ্রহণে বিঘ্ন ঘটে এবং সময়মতো ডিমটি পরিমাণ মতো খালি না হওয়াতে ভ্রুণ ডিমের ভিতরেই মারা যায়।
আদ্রতা যদি কম হয়, তবে ডিমের ভিতর তরল দুর্তো শুকিয়ে যায় ফলে ভ্রুণের বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে, ফলে ভ্রুণের মৃত্যু হয়।
আদ্রতা কম থাকলে ডিমের খোসা ভঙ্গুর হয়ে যায়। এতেও ডিমের সাথে যুক্ত থাকা ভ্রুণের রক্তের শিরাগুলি বিচ্ছিন্ন হতে পারে, এতেও অক্সিজেন গ্রহণে বিঘ্ন ঘটে।
তাপমাত্রা:
ভ্রুণের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। তাপমাত্রা যদি বেশি হয় তবে সমস্যা হবে। কারণ ভ্রুণ যখন বড় হয় তখন ভ্রুণে কিছু তাপ নিজে থেকেই তৈরি হয়। ডিমের ভিতর বাচ্চার তাপের সাথে ইনকিউবেটরের তাপের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে হয়। যদি ইনকিউবেটরের তাপ বেশি হয় তবে সেই তাপ পরিবাহিত হয়ে ভ্রুণের থেকে যে তাপ তৈরি হয় সেই তাপে বিঘ্ন ঘটিয়ে ভ্রুণ স্বাভাবিক তাপকে ভেদ করে ভ্রুণকে ইনিউবেটরের ভিতরের তাপের মতো উত্তাপ্ত করে তোলে। এই তাপে ভ্রুণের সমস্যা হয় এবং মৃত্যু ঘটে।
সেই জন্য ইনকিউবেটরে ডিম ফোটার আগে শেষের সপ্তাহে তাপ একটু কমিয়ে ভ্রুণের সহনশীল তাপ দেয়া হয়। তাপ যদি খুব কম হয় সেক্ষেত্রে ডিমের তাপ কমে গিয়ে ভ্রুণের তাপও যদি শোষিত হতে থাকে, তবে ভ্রুণের মৃত্যু হতে পারে।
শেষের সপ্তহে ডিম ঘুরানো বন্ধ করে ডিমকে স্থিরভাবে রাখতে হয়, যাতে বাচ্চা সঠিকভাবে কোনো সমস্যা ছাড়া সময়মতো বের হতে পারে।
এসব বিষয় থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ইনকিউবেটরে সঠিক আদ্রতা বজায় রাখতে হবে। সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে হবে এবং প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খুব নিখুঁতভাবে যত্ন নিতে হবে।
ডিম ফোটার আগে গভীরভাবে এই বিষয়গুলিতে লক্ষ্য রাখতে হয় এবং এই আবহাওয়া একদম নিরবচ্ছিন্ন রাখা হয় বলেই খুব প্রয়োজন ছাড়া শেষের সপ্তাহে ইনকিউবেটরের দরজা খোলা নিষেধ।
মাত্র ২ মিনিটের ভুলেই সকল ডিম নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর এসব বিষয় মাথায় রেখেই ডিম ফুটানোর বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। সতর্কতার সাথে ডিম ফুটাতে হবে তাহলে ডিমের ভ্রুণের ক্ষতি হবে না আপনি পাবেন সুস্থ সুন্দর বাচ্চা।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন