যেসব কারণে ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও এটার সমাধান

116

এরকম সমস্যায় অনেকেই পড়েন। আপনার দৃষ্টিতে সবকিছু ঠিক আছে কিন্তু আপনার আশানুরূপভাবে মুরগির দৈহিক বৃদ্ধি হচ্ছে না। কিন্তু এর কারণও আপনি বুঝতে পারছেন না। তাই আজ আপনাদের জন্য থাকছে মুরগির দৈহিক বৃদ্ধি না হওয়ার কারণে ও তার সমাধান দেয়া।

যেসব কারণে ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধি ব্যাহত হয় তাহলো বদহজম উপসর্গ:

# ম্যাল এবসরবশন সিন্ড্রম (বদহজম উপসর্গ)
# সংক্রামক স্টানটিং সিন্ড্রম।
# রানটিং অ্যান্ড স্টানটিং সিন্ড্রম।
# পেইল বার্ড সিন্ড্রম
# হেলিকপ্টার ডিজিজ
# ট্রান্স মিশিবল ভাইরাল প্রোভেন্ট্রিকিউলাইটস
# হাইপো গস্নাই সিডিয়া অ্যান্ড স্পাইকিং মটোলিটি
# ভাইরাস অ্যাসোসিয়েটেড এন্টারাইটিস
# অস্টিও পোরোসিস।

অনেক গবেষক ও বিজ্ঞানী ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া সমস্যাকে সংক্রামক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং যেসব ভাইরাসকে দায়ী করা হয়ে থাকে সেগুলো হচ্ছে-

১. ক্যালসি ভাইরাস ২. রিও ভাইরাস ৩. পারডোভাইরাস ৪. করোনা ভাইরাস ৫. টোগা ভাইরাস ৬. এরিনা ভাইরাস এবং ৭. এন্টারো ভাইরাস।

তাছাড়া যেসব কারণ বা অবস্থা ব্রয়লার মুরগির দৈহিক ওজন বৃদ্ধি ব্যাহত করে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-

সুষম খাদ্যের অভাব, খাদ্যে পরিপাকযোগ্য পুষ্টি উপকরণের সম বণ্টনের অভাব, খাদ্যের স্বাদের অভাব এবং খাদ্য উপকরণের অপছন্দনীয় আকার। ব্রয়লার মুরগি পাউডার খাদ্য কম খায়, জীবনের প্রথম সপ্তাহে দ্রম্নত বর্ধনশীল জাতের বাচ্চা মুরগি অল্প খেলে কম খাওয়ার অভ্যাস হয়ে যায়। অল্প আহারের ফলে দৈহিক বৃদ্ধি কম হবে। ব্রয়লার বাচ্চাদের খবরের কাগজের ওপর খাদ্য পরিবেশন এবং এম্পল ট্রে ওয়াটারিং ব্যবস্থা করতে হবে, এর ফলে বেশি পরিমাণে খাদ্য গ্রহণে সড়্গম হবে ফলে এদের দৈহিক বৃদ্ধিও দ্রুততর হবে।

ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার লক্ষণগুলো হচ্ছে:

১। আক্রান্ত ঝাঁকের ১৫ থেকে ৪০% ব্রয়লার মুরগির আশানুরূপ দৈহিক ওজন বৃদ্ধি ঘটে না।
২। আক্রান্ত মুরগির পালকগুলো উসকো খুসকো হয়ে যায়, চলা ফেরায় অনীহা এবং আক্রানত্ম মুরগি আমযুক্ত বিষ্ঠা নির্গত করে।
৩। প্রথম সপ্তাহ পর পেট ফুলা মনে হয় এবং পালক সঠিকভাবে গজায় না।
৪। অস্টিওডিসট্রোপি, এনসেফালো ম্যালেশিয়া হলে মুরগি ঘুরপাক খেতে থাকে এবং ঘাড় বাঁকা হয়ে যেতে পারে।

এ সমস্যার প্রতিকার:

# এ রোগের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
# গবেষণাগারে বিভিন্ন পরীক্ষ-নিরীক্ষার ফলাফল সরেজমিনে কর্মরত কর্মী ও জনগণের মধ্যে আদান-প্রদান করতে হবে।
# খাদ্যের সাথে নিম্নমানের কেমিক্যাল, ককসিডিওস্টেট গ্রোথ প্রোমোটার, এন্টিবায়োটিকস, টকসিন বাইন্ডার, রাসায়নিক ব্যবহার করা যাবে না।
# পোলট্রি খামারে ব্যবহারের জন্য আমদানি করা ওষুধপত্রের গুণাগুণ পরীক্ষা করতে হবে, ম্যাঙ্গানিজ সালফেটের পরিবর্তে ম্যাগনেশিয়াম সালফেট গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে প্রত্যয়নকারীর জবাবদিহিতা থাকতে হবে।
# সুষম খাদ্যের সব উপকরণ পরিপাকযোগ্য হতে হবে এবং সমভাবে মিশ্রিত হতে হবে।
# খামার স্থাপনের স্থান নির্ধারণ ও শেডঘর তৈরি বিজ্ঞানসম্মতভাবে হতে হবে।
# খামারের এক ঝাঁক মুরগি বিক্রি করার পরে কমপক্ষে ১৪ দিন ঘর খালি রাখতে হবে। বন্য পশুপাখির যাতায়াত বন্ধ রাখতে হবে।
# যথাযথভাবে খামার ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও রোগ জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
# কাঁচা মাটির ঘর হলে প্রতি ২-৩ ব্যাচ ব্রয়লার মুরগি পালন করার পর মেঝের অর্ধ ফিট মাটি তুলে ফেলে নতুন মাটি দিতে হবে। জীবাণুনাশক যেমন- কোরিন, আয়োডিন, তুঁতে পরিমাণমতো ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
# খামারে একসাথে প্রবেশ করবে একসাথে বের হয়ে যাবে পদ্ধতিতে খামার চালাতে হবে।
# মাইকোটকসিন মুক্ত খাদ্য পরিবেশন করতে হবে।
# খামারে জৈব নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে।
# মুরগির ঘরের সব ময়লা আবর্জনা মাকড়সার জাল ঝাড়ু দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
# খামারে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
# খামারের শ্রমিক-কর্মচারী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় লোকজন রোগ জীবাণু মুক্ত হয়ে খামারে প্রবেশ করতে হবে। # যানবাহনের ড়্গেত্রেও একই নিয়ম মানতে হবে।
# মুরগিতে এন্টিবায়টিকের ও টিকার ব্যবহার নিয়মিত করতে হবে। এসব বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুসারে করতে হবে।
# মুরগির জাতের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত পরিমাণ জায়গা বরাদ্দ দিতে হবে। খামারে মুরগির ঘনত্ব গরম ও শীতকালের সাথে খাপ খাইয়ে আবাসন করতে হবে।
# মুরগির যেখানে সেখানে জবেহ এবং মৃত মুরগি যেখানে সেখানে না ফেলে পুঁতে ফেলার অভ্যাস চালু করতে হবে।
# মুরগির সমানত্মরাল বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে তবে বৃষ্টির পানি যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।
# দিন ও রাতের তাপমাত্রায় পার্থক্য থাকে তাই ব্রম্নডিং ও অন্যান্য সময়ে তা সমন্বয় করতে হবে।
# খাদ্যের সাথে পরিমিত পরিমাণে খাদ্যপ্রাণ এ, ডি, ই এবং সেনিনিয়াম ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়।
# প্রজনন মোরগ-মুরগীকে রিও কিল্ড, এভিয়ান এনসেফালোমাইলাইটিস এবং সংক্রামক ব্রংকাইটিস কিল্ড টিকা দিতে হবে।

আপনি যদি এসব বিষয় বুঝে বা যারা অভিজ্ঞ তাদের সাথে এসব বিষয় পরিষ্কারভাবে বুঝে নিয়ে কাজ করেন তো সমাধান হয়ে যাবে।