এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের স্থল বন্দরগুলো দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। হিলি, বেনাপোল এবং ভোমরা স্থল বন্দরে যোগাযোগ করে এই তথ্য জানা গেছে। গত আটদিন ধরে এই তিন বন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজই আনেননি এসব বন্দরের আমদানিকারকরা।
হিলি বন্দর আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতি জানিয়েছে, এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে গড়ে প্রতিদিন ২০০ ট্রাকে করে ৪,০০০ মেট্রিক টনের মতো পেঁয়াজ আসে।
কেন ভারতীয় পেঁয়াজ আনা হঠাৎ বন্ধ হলো সে বিষয়ে সমিতির সভাপতি মো. হারুন উর রশিদ জানিয়েছেন, ‘এবার দেশি পেঁয়াজ ভারতীয় পেঁয়াজের থেকে অনেক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পড়তা হচ্ছে না। ভারতের ভেতরেও পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি, বাংলাদেশে সেই তুলনায় কম। গত কিছুদিনে পেঁয়াজের একটা গাড়িও ঢোকেনি।’
ঢাকার বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকা কেজি। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে ১০ টাকা বেশি দামে। এছাড়া ‘টিসিবি পেঁয়াজ’ বলে এক ধরনের নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এর কম দাম ১৬ থেকে ১৮ টাকা কেজি।
ঢাকায় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারি আড়ৎ শ্যামবাজারের একজন কমিশনিং এজেন্ট মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সরকারের ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশ অনেক কম দামে পেঁয়াজ দিচ্ছে। টিসিবির হাতে অনেক মাল আছে। ইম্পোর্টেড পেঁয়াজ এমনিতেই কেউ খাচ্ছে না। যেটা বিক্রি হচ্ছে সেটা টিসিবির। চীন, নেদারল্যান্ডসেরও কিছু ইম্পোর্টেড পেঁয়াজ আছে। সেটাও ভারতীয় পেঁয়াজের থেকে কম দামে বিক্রি হচ্ছে।’
বেনাপোলের আমদানিকারক মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘দেশি পেঁয়াজ সবসময় জনপ্রিয় কারণ ভারতীয় পেঁয়াজে ঝাঁঝ কম। সাধারণত দেশি পেঁয়াজেরই দাম বেশি থাকে। কিন্তু এ বছর উল্টো। যেহেতু দেশিটাই কম দামে কেনা যাচ্ছে তাই ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা কম রয়েছে।’
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের দিকে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছিল। অভ্যন্তরীণ বাজারের উপরে নির্ভর করে প্রায়শই এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। ডিসেম্বরের শেষের দিকে আবার পেঁয়াজ রফতানির ঘোষণা দেয় ভারত এবং এই মাসের শুরুর দিকে আবার আমদানি শুরু হলেও দিন দশেক পরই আনা বন্ধ করে দেন আমদানিকারকেরা। তবে এ মাসের প্রথম সপ্তাহেই পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে ৫% থেকে বাড়িয়ে ১০% শুল্ক আরোপ করে বাংলাদেশের সরকার।
কমিশনিং এজেন্ট মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ‘তাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে ভারতে অভ্যন্তরীণ বাজারেও এবার পেঁয়াজের দাম বেশি। বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত পেঁয়াজ আনতে খরচ পড়ছে ভারতীয় ৩০ রুপির মতো। এরপর ডলারে কনভার্ট করে, শুল্ক দিয়ে, বাংলাদেশ অংশে প্রবেশের পর পরিবহনসহ দাম অনেক বেড়ে যাচ্ছে।’
তবে সরকারের বর্ধিত শুল্ক আরোপের কারণেও আমদানি কম হচ্ছে বলে মনে করেন বেনাপোলের আমদানিকারক মো. রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজ এমনিতেই এই সিজনের পর অর্থাৎ তিন চার মাস পর কমে যাবে। দেশি কৃষকের সুবিধার জন্য এই শুল্ক আরোপ করা হলেও শুল্ক উঠে গেলে তখন আবার ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৪ টাকার মতো কমে যাবে।’
‘ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হলে বাংলাদেশিদের পেঁয়াজ খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।’ বহু বছর ধরে এরকম একটি ধারণা বাংলাদেশে প্রচলিত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ভারতীয় পেঁয়াজের বিপক্ষে বাংলাদেশিদের এক ধরনের মনোভাব তৈরি হয়েছে। যার প্রকাশ দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।ভারত আবারও পেঁয়াজ রফতানি করতে যাচ্ছে এমন খবর প্রকাশের পরই ভারতীয় পেঁয়াজ বয়কটের ডাকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হ্যাশট্যাগ চালু হয়ে যায়।
ফেসবুকে সার্চ দিলেই দেখা যাচ্ছে #boycottindianonion এবং #ভারতীয়_পেঁয়াজ_বর্জন_করি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে অনেকেই পোষ্ট দিয়েছেন। তাতে নানা রকম বক্তব্য রয়েছে।
যেমন একজন লিখেছেন, ‘দেশি কৃষকদের বাঁচান, ভারতীয় পেঁয়াজ খাওয়া বন্ধ করুন।’
আরেকজনের পোষ্টে লেখা, ‘পেঁয়াজের ঘাটতির সময় দাদাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
ভারত বিরোধী মনোভাবের কারণে সেখানকার পেঁয়াজ না খাওয়ার আহ্বান দিয়ে অনেকেই পোষ্ট করেছেন। গলায় পোস্টার ঝুলিয়ে মেগাফোনে ভারতীয় পেঁয়াজ বয়কটের ডাক দিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন সেরকম একটি ভিডিও দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজের বিপক্ষে পোস্টার লিখে নিজের ছবি তুলে অনেকেই পোস্ট করেছেন। এরকম বহু পোস্ট দেখা যাচ্ছে ডিসেম্বরের শেষভাগ থেকে এ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৯জানুয়ারি২০২১