যেসব কারণে মুরগির রানীক্ষেত রোগ হয়, জেনে নিন চিকিৎসা পদ্ধতি

734

আমাদের বাংলাদেশে হাঁস,মুরগি এবং কবুতরের জটিল এবং মারাত্মক ভাইরাস জনিত রোগ হল রানিক্ষেত। রানীক্ষেত রোগটি হচ্ছে ভাইরাস থেকে সৃষ্ট মারাত্বক সংক্রামক একটি রোগ। এই রোগ হলে খামারিরা ও পালন কারিরা অনেক ক্ষতি গ্রস্থ হয় এবং তাদের ব্যবসাতে অনেক লছ হয়ে থাকে। তাই সব খামারীর কাছেই রানিক্ষেত রোগটি একটি ভয়ানক নাম। সর্বপ্রথম মুরগির রানীক্ষেত রোগ ইংল্যান্ডের নিউক্যাসেল নামক স্থানে দেখা গিয়েছিল। তাই সেই স্থানের নাম অনুসারে এই রোগের নাম Newcastle Disease বলা হয়।

মুরগি পালন, হাঁসের রোগ, সহ বিশেষ সব কৃষি তথ্য সার্ভিস , আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল কৃষি তথ্য বিষয়ে সমস্যা ও সমধান সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে, আপনি আমাদের ওয়েবসাইট AgroHavenBD.com ভিজিট করতে পারেন এবং বিভিন্ন তথ্য জানাতে চাইলে আগ্রো হ্যাভেন বিডি ফেসবুক পেজে কমেন্ট করে জানান।

মুরগির রানীক্ষেত রোগ

প্রতিটি খামারে রানীক্ষেত রোগের কারণ হলো অসচেনতা ও অপরিষ্কার, অসচেনতার কারণে প্রায় প্রতিটি খামারে এই রানীক্ষেত রোগ টি দেখা দেয়। আক্রান্ত হাঁস-মুরগি ৩-৫দিনের মধ্যে মারা যায়। এই রোগে আক্রান্ত হলে সেই প্রাণীর ১০০% মৃত্যুর হার থাকে। রানীক্ষেত ভাইরাসজনিত রোগ। রানীক্ষেত রোগ টি (Ranikhet disease ) ফার্মের অনেক বড় ক্ষতিকারক রোগ। সংক্রামিত মুরগি শ্বসন, হজম এবং স্নায়বিক রোগের লক্ষণ গুলি দেখা যায়। আমাদের দেশে শীত এবং বসন্ত কালে প্রাদুর্ভাব আরও বেশি দেখা যায় বলে মনে হয়। সাধারণভাবে, যে কোনও বয়সের বা জাতের মুরগি সংক্রামিত হতে পারে, তবে তুলনামূলক ভাবে কম মুরগি এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।

রোগের নাম রানীক্ষেত রোগ (Newcastle Disease)
রোগের ধরণ ভাইরাল জনিত রোগ
জীবাণুর নাম রানীক্ষেত রোগ (Newcastle Disease Virus)
সংক্রামিত প্রানী মুরগি, হাঁস, কবুতর এবং পাখির সংক্রামিত হতে পারে।
প্রাণীর মৃত্যুর হার ১০০ % পর্যন্ত হয়ে থাকে
প্রাণীর সংক্রমণের বয়স ০ দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত (সকল বয়স)
রোগ প্রতিরোধ সময় মতো ভ্যাকসিন বা টিকা প্রদান
রোগের চিকিৎসা এর নির্ধারিত কোন চিকিৎসা নাই
রানীক্ষেত রোগের কারণ
রানীক্ষেত রোগের কারণ

রানীক্ষেত রোগ ছড়ানোর কারণ :

রানীক্ষেত রোগের বড় কারণ হলো সংক্রামিত বা আক্রান্ত পাখি। আক্রান্ত পাখি গুলো খামারে এসে বসে এবং মল ত্যাগ করে পরে এটি বাতাসের সাথে এটি ছড়িয়ে পড়ে পাশের খামারে। এছাড়া এই রোগটি লালা, সর্দি, কাশি এবং আক্রান্ত মুরগির মল মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। রোগের জীবাণু সংক্রামিত মুরগি বা খামার থেকে বাতাসের মাধ্যমে কাছের স্বাস্থ্যকর মুরগি বা খামারে ছড়িয়ে যেতে পারে। এই রোগটি সাধারণত আক্রান্ত ফার্মের আসবাব পত্র, যন্ত্রপাতি, যানবাহন বা লোকজনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর খামারে সংক্রামিত হয়।

তাছাড়া শীতকালে তাপমাত্রার অপ্রত্যাশিত ভাবে উঠানামার কারণে, মুরগি ক্রমাগত চাপে থাকে, ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। শীতকালে, ঘরের পর্দা বেশিরভাগ সময় দেওয়া হয়, যার ফলে ঘরের ভিতরের কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অ্যামোনিয়া গ্যাস বের হতে না পারে এবং এইভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।

রানীক্ষেত রোগের লক্ষণ
যে কোন রোগ নির্নয় করতে হলে প্রথমে তার লক্ষণ সম্পর্কে জানতে হবে চলুন জেনে আসি রানীক্ষেত রোগের লক্ষণ সম্পর্কে কিছু তথ্য।

ক্রমিক নং রানীক্ষেত রোগের বিশেষ লক্ষণ
০১ শ্বাসকস্ট হয়
০২ সবুজ পায়খান করে
০৩ পায়খানাতে দূরগন্ধ হয়
০৪ ডানা ছেড়ে দেয়
০৫ দূর্বলতা দেখা
০৬ মৃত্যুর হার বেড়ে যায়
এছাড়া আরো লক্ষণ আছে সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

রানীক্ষেত রোগের লক্ষণ গুলি বিভিন্ন ধরণের হতে দেখা যায়। খামারে মুরগিদের যদি রানীক্ষেত হয়ে থাকে তাহলে, মুরগীদের শ্বাসকস্ট হয়, সবুজ পায়খান করে, পায়খানাতে দূরগন্ধ হয়, ডানা ছেড়ে দেয়, যেখানে সেখানে মুরগি গুলা হটাত – হটাত বসে পড়ে, দূর্বলতা দেখা দেয় এবং হটাত মারা যায় এবং চোখের চারদিকে এবং মাথা ফুলা দেখা যায়।

খামারে তীব্র মারাত্মক রানীক্ষেত সংক্রমণের লক্ষণ গুলি হলো, ভেলোজেনিক স্ট্রেনের কারণে ঘটে। এই ধরনের সংক্রমণের ক্ষেত্রে, সংক্রামিত মুরগির লক্ষণ গুলি শুরুর আগেই মারা যেতে পারে। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে মুরগির কুঁচকানো মাথা, পাতলা সাদা মল, মাথার চারপাশে জল জমে যাওয়া, নার্ভাস ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি। ডানা নীচের দিকে ঝুলে পড়ে এবং হঠাৎ লাফ দিয়ে মুরগী মারা যায়। এই সময় মৃত্যুহার হার ১০০% পর্যন্ত পর্যন্ত হতে পারে।

মাঝারি সংক্রমণের ক্ষেত্রে লক্ষণ গুলি হলো, মেসোজেনিক স্ট্রেনের কারণে ঘটে। সংক্রামিত মুরগি মারাত্মক শ্বাস প্রশ্বাস জনিত জটিলতা এবং স্নায়বিক লক্ষণ গুলি (ঘাড়ের মোড়, পক্ষাঘাত, ডানা গুলি ঝুলে যাওয়া) বিকাশ ঘটে। শ্বাসকষ্টের সময় অনেক সময় দুরন্ত শব্দ হয় বা মুরগির শ্বাস নিতে সমস্যা হয়।

ডিম দেওয়া মুরগির ক্ষেত্রে অনেক সময় শেল বা পাতলা খোসা ছাড়াই ডিম দেওয়া এবং পরে ডিম দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। রানীক্ষেত সংক্রমণের ক্ষেত্রে চুনের মতো সাদা ও সবুজ মল ত্যাগ করে, ডানা নীচের দিকে ঝুলে পড়ে। এই সময় মৃত্যুহার হার ৮০% -১০০% পর্যন্ত হতে পারে। অপেক্ষাকৃত কম সংক্রমনের ক্ষেত্রে লেন্টোজেনিক ষ্ট্রেন দ্বারা আক্রান্ত হয়, এতে মৃদু আকারের শ্বাস কষ্ট জনিত লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই সময় মৃত্যুহার হার কম হতে পারে।

রানীক্ষেত রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
রানীক্ষেত রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

আপনি যদি একটি ভালো খামারি হতে চান তাহলে আপনাকে রানীক্ষেত রোগটি প্রতিরোধে করা জানতে হবে। তানাহলে আপনি আপনার খামার টিকিয়ে রাখতে পারবেনা। কারণ এই রোগের মৃত্যুর হার ১০০% পর্যন্ত। তাই খামারি হতে হলে আপনাকে রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা সম্পর্কে যানতে হবে। রানীক্ষেত রোগ যেহেতু মুরগি ঝিমায়, পানি ও খাদ্য খাওয়া কমিয়ে দেয়, তাই ভ্যাকসিনের বুষ্টার ডোজে করতে হবে।

রানীক্ষেত রোগ প্রতিরোধ : সর্ব প্রথম প্রতিরোধের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হ’ল সময় মতো ভ্যাকসিন বা টিকা দেওয়া। ভ্যাকসিন এর পর কোনো জীবাণুনাশক দিয়ে ঘর স্প্রে করা উচিত নয়, এতে আপদের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। আপনি যদি স্প্রে করেন তাহলে টিকা দেওয়ার ৩ দিন পর স্প্রে করতে পারেন।

রানীক্ষেত রোগ চিকিৎসা : রানীক্ষেত রোগ চিকিৎসা দ্বারা পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব নয়। আপনারা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রোধ করার জন্য নিচের যে কোন একটি এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে এতে আপনার মুরগি আশা করা যায় ভালো হতে পারে।

রানীক্ষেত রোগের ঔষধের নাম সমূহ :

ক্রমিক নং রানীক্ষেত রোগের ঔষধের নাম
০১ Cotra-Vet Powder (কট্রা-ভেট পাউডার)
০২ Enflox-Vet Solution (এনফ্লক্স-ভেট সলিউশন)
০৩ Moxacil-Vet Powder (মোক্সাসিল-ভেট পাউডার)
০৪ Genacyn-Vet Injection (জেনাসিন-ভেট ইনজেকশন)
০৫ Electromin Powder (ইলেকট্রোমিন পাউডার)
০৬ Cevit-vet Powder (সিভিট-ভেট পাউডার)
বিদ্রঃ ০১ থেকে ০৪ পর্যন্ত ক্রমিক নম্বরের ঔষধ যেকোন একটি ব্যবহার করতে হবে এবং সেই সাথে ০৫ ও ০৬ নম্বরের ঔষধ চালাতে হবে। তাহলে আপনার মুরগি, হাঁস, কবুতর এবং পাখির ভালো হতে পারে। ঔষধের মাত্রা বা পরিমান চিকিৎসকের কাছে শুনে নিন।

〈 আপনার রোগ সম্পর্কে বুঝতে বেশি সমস্য মনে হলে আপনি দ্রুত ভালো চিকিৎসক বা ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নিন

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৭মে ২০২২