যে কারণে কালো মুরগি পালন করবেন

608

মুরগির ঝোল কিংবা ঝাল ফ্রাই, ফ্রায়েড চিকেন বা রোস্ট যেভাবেই পাখি প্রজাতির এই প্রাণীটির মাংস খাওয়ার কথা ভাবতে পারেন একজন সাধারণ বাংলাদেশি, তাতে কালো মুরগির কথা ভাবেন না প্রায় কেউই।

কারণ খুব সাধারণ, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে কালো মুরগি পরিচিত নয়। কিন্তু এই কালো মুরগিকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে দামি মুরগি।

বাংলাদেশে এই মুরগি এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। আর পোল্ট্রি মালিকেরা বলছেন গত কয়েক বছর ধরে খামারীদের কাছে তা ক্রমে জনপ্রিয়ও হয়ে উঠতে শুরু করেছে।

কালো মুরগি কী? কী এর বৈশিষ্ট্য?

কালো মুরগির মাথার ঝুঁটি থেকে পা, অর্থাৎ এর সমস্ত অঙ্গের রং কালো। পালক, চামড়া, ঠোঁট, নখ, ঝুঁটি, জিভ, মাংস এমনকি হাড় পর্যন্ত কালো রঙের।

গবেষক, সরকারি কর্মকর্তা এবং খামারিরা জানিয়েছেন, কালো মুরগি একটি বিরল প্রজাতির মুরগি।শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাকসুদা বেগম বিবিসিকে বলেছেন, একে বাংলাদেশে কেদারনাথ ব্রিড বা কালোমাসি বলে চেনেন কৃষিবিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশে কালো মুরগি

কাদাকনাথ মুরগি প্রথম বাংলাদেশে আসে ২০১৬ সালে। বাংলাদেশে নরসিংদী জেলার কামরুল ইসলাম মাসুদ সে বছর কাজের সূত্রে ভারতে গিয়ে কালো মুরগি খেয়ে চমৎকৃত হন।

এরপর তিনি দেশে নিয়ে এসে উৎপাদন শুরু করেন।বিবিসিকে তিনি বলেছেন, “মাংসের স্বাদ দেশি মুরগির চেয়ে আলাদা এবং সুস্বাদু হওয়ায় খোঁজ খবর নিই, এরপর যখন এর গুনাগুণ সম্পর্কে জানতে পারি তখনই আমি দেশে এর উৎপাদনের কথা ভাবি।”

শুরুতে ৩০০ মোরগ ও মুরগি নিয়ে এসেছিলেন মি. ইসলাম।এখন তার খামারে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার কালো মুরগির বাচ্চা ফোটে।সাধারণত এই মুরগি বা মোরগের ওজন দুই থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত হতে পারে।এই মূহর্তে নরসিংদী ছাড়াও রাজশাহীর বাগমারায় বড় আকারে কালো মুরগির বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠেছে।

কালো মুরগির দামদর

নরসিংদীর খামারি কামরুল ইসলাম বলেছেন, এই মূহুর্তে একজোড়া কালো মুরগি ও মোরগের দাম চার হাজার টাকা।কিন্তু ২০১৬ সালে একজোড়া মুরগি ও মোরগের দাম ছিল দশ হাজার টাকা।বছরে ১২০ থেকে ১৫০টি ডিম পাড়ে একেকটি মুরগি।

তবে, এই মুরগি ডিমে তা দেয় না। বাচ্চা ফোটাতে দেশি মুরগির নিচে তা দেয়া হয়, কিংবা ইনকিউবেটরে কৃত্রিমভাবে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটানো হয়।

এক মাস বয়সের বাচ্চা ৮০০ থেকে ৯০০টাকা এবং দুই বয়সের মাস বয়সের বাচ্চা ১২০০ টাকা দামে বাজারে বিক্রি হয়।মি. ইসলাম বলেছেন, খাওয়ার জন্য মানুষ মোরগ বেশি কেনে।

কিন্তু তিনি বলেছেন, “এখনো সৌখিন হিসেবেই মানুষ খায়, এই মুরগি। কিন্তু দেশের ৬৪ জেলাতেই আমার কাছ থেকে বাচ্চা নিয়ে গেছে মানুষ, তারাও পালন করছেন, কেউ খায় কেউ আবার নতুন করে উৎপাদন করে।”

কালো মুরগির পুষ্টিগুণ

কালো মুরগি নানা ধরণের রোগ সারায় বলে মনে করেন অনেকে। যে কারণে এখনো পর্যন্ত যারা এই মুরগি কিনছেন তাদের বড় অংশের মানুষই এই কারণে কিনছেন বলে জানিয়েছেন নরসিংদীর মি. ইসলাম।ঔষধি গুনাগুণের জন্য এই মুরগির কদর অনেক বাংলাদেশে।

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাকসুদা বেগম বলেছেন, দেশি মুরগির চেয়ে এই মুরগির মাংসের স্বাদ বেশি।এছাড়া খাদ্যগুণের বিচারে কালো মুরগির মাংসে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আয়রন রয়েছে।

এছাড়া সাধারণ মুরগির তুলনায় এই মুরগির মাংসে কোলেস্টরেলের মাত্রাও অনেক কম থাকে।কোলেস্টরেল কম থাকে বলে এই মুরগি রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

এই মুরগির মাংসে ফ্যাটি অ্যাসিড উপাদান অনেক বেশি থাকে। কিন্তু প্রোটিনের মাত্রা অন্য সব মুরগির মাংস থেকে কয়েক গুণ বেশি।

জনপ্রিয় হবার সম্ভাবনা কতটা আছে?
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাকসুদা বেগম বলেছেন, এর সম্ভাবনা প্রচুর, যদিও এই মুরগির সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা খুব ধীরে বাড়ছে।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, একটি মুরগি ডিম পাড়ার উপযোগী হতে ছয় মাসের মত সময় লাগে, এ সময় পর্যন্ত খামারিকে এটি পালন করতে হয়, যেখানে অন্য ব্রয়লার বা সোনালী মুরগি হলে কয়েকবার ডিম দিত সেখানে এটির প্রজনন ক্ষমতা সীমিত।

তবে কাদাকনাথ মুরগীর উৎপাদন ব্যয় কম, এবং এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি যে কারণে খামারিরা এই মুরগির বাণিজ্যিক উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন। এখন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং কৃষি বিজ্ঞানীরা নানা ধরণের গবেষণা করছেন, যাতে দেশি কোন জাতের মুরগির সঙ্গে এর কৃত্রিম প্রজনন ঘটানো যায় কিনা, যাতে এর উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২৫ জুন ২০২১