যে কারণে দুগ্ধ খামার লোকসান হয়, বাচতে যা করবেন

348

দুগ্ধ খামার লোকসানের অন্যতম আরেকটি কারন গাভী বীজ না রাখা।
গাভী বীজ রাখলোনা, গাভী খারাপ ব্যাপারটা এমন নাও হতে পারে। যে সব কারনে গাভীর বীজ ধরতে সমস্যা হয় তা হলোঃ

১) সঠিক সময়ে এ আই কে খবর না দেয়া
২) গাভীর হিট এসেছে তা বুঝতে না পারা
৩) সঠিক সময়ে এ আই কর্মী না আসা বা দেরীতে আসা
৪) এ আই টেকনিশিয়ানের সঠিক জ্ঞ্যান বা পারদর্শিতা না থাকা
৫) সিমেন বা বীজের গুনগত মান ভাল না থাকা
৬) সিমেন বা বীজকে সঠিকভাবে নাইট্রোজেন জারে না রাখা
৭) গাভীর জরায়ুর সমস্যা থাকা

এই সব কিছু কাটিয়ে উঠে যে খামারে গাভী বাচ্চা দেবার ৩-৪ মাস পরে কনসিভ করবে সে খামার লাভবান হবে। যে খামারে গাভীর কনসিভ রেট ভালোনা আপনারা একটি ভাল মানের ষাড় পালতে পারেন। গাভীকে ছেড়ে পালুন ষাড়ের সাথে, কখন গাভী হিটে আসলো সব তথ্য আপনি খুব সহজেই পেয়ে যাবেন। ইনব্রিডির দিকে খেয়াল রাখুন, ইনশাআল্লাহ এই সমস্যা থেকে কাটিয়ে উঠবেন।

দুগ্ধ খামারে জাত উন্নয়নের জন্য জেনে রাখা অত্যাবশ্যকীয়

১) কোন বুল বা ষাড়ের সিমেন বা বীজ দিলেন তা রেকর্ড রাখুন যেন এই সিমেন যে গাভীকে দিলেন তার কোন ভবিষ্যত বংশধরের মধ্যে না পড়ে।
২) এ.আই কর্মীকে প্রশ্ন করে জানুন সে কোন কৌলিকগুন সম্পন্ন বুলের সিমেন নিয়ে এসেছে। ১০০% হলেই যে সিমেন খুব ভাল এটা কখন ধারনা করবেন না। বুলের সিমেনের পিডিগ্রি, জেনমিক হিস্ট্রি মানে সহজ কথায় বুলের মা’এর দিকের দুধ দানের সক্ষমতা কেমন জানুন।
৩) খেয়াল রাখুন আপনার গাভীর বাচ্চা যেন ৭৫% ফ্রিজিয়ানের উপর না হয়।

৪) সরকারী এ.আই কর্মী যদি সিমেনের কৌলিকগুন সম্পন্ন তথ্য না দিতে পারে আপনি নিকটতস্থ উপজেলা প্রানী সম্পদ অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ULO) সাথে যোগাযোগ করুন। ওনিও যদি তথ্য না দিতে পারে আপনি একটি অভিযোগ পত্র জেলা প্রানিসম্পদ নির্বাহী কর্মকর্তা (DLO) বরাবর লিখুন এবং একটি কপি [email protected] স্ক্যান করে পাঠিয়ে দিন।

৫) প্রাইভেট সিমেন কোম্পানীদের বুলের পিডিগ্রি এবং জেনমিক হিস্ট্রি দিতে হবে। এ. আইকে প্রশ্ন করুন। অন্ধের মত তথ্য না জেনে সিমেন ব্যবহার করে শুধু নিজের ক্ষতি করে কোম্পানীর লাভ করিয়ে দিচ্ছেন। তথ্য না দিতে পারলে সিমেন নেয়া বন্ধ করে দিন।

৬) যাদের সিমেন সংগ্রহের নাইট্রোজেন জার আছে তারা চেস্টা করুন ভাল সিমেন সংগ্রহ করে স্টকে রেখে দেবার। একটা নাইট্রোজেন জার সংগ্রহে রাখা অত্যান্ত জরুরী।

৭) আপনার গাভীকে কত পারসেন্ট সিমেন দিবেন সেটা নির্ভর করবে গাভীর বর্তমান অবস্থানের উপর। আমাদের কোন রেকর্ড নেই, ধরুন আজ থেকেই রেকর্ড রাখা শুরু করবেন। তাহলে যে গাভী ১০ লিটার দুধ দিচ্ছে ধরে নিন সেটা ৩৭.৫% ফ্রিজিয়ান , যেটা ১৫-১৮ লিটার দুধ দিচ্ছে ধরে নিন সেটা ৫০% ফ্রিজিয়ান, যেটা ২০-২৫ লিটার দুধ দিচ্ছে ধরে নিন সেটা ৭৫% ফ্রিজিয়ান। যেটা ২৫(+) দুধ দিচ্ছে ধরে নিন সেটা ৭৫% ফ্রিজিয়ানের উপরে আছে । এই ধরে নেয়াটা বিতর্কিত কিন্তু উপায় নেই, শুরুতো করতে হবে আমাদের রেকর্ড কিপিং।

৮) ৭৫% ফ্রিজিয়ান (২৫+ দুধ) উপরে হলে তখন আপনি কি করবেন এই অত্যান্ত চিন্তার বিষয়। কারন ১০০% ফ্রিজিয়ান দিলে ক্ষতি হবে নতুন প্রজন্মের আবার ৭৫% ফ্রিজিয়ান সম্পন্ন ভাল ৪০(+) দুধ দেয়া কৌলিকগুন সম্পন্ন বুল এদেশে আছে কিনা সন্দেহ আছে। দেশের নীতিনির্ধারকগন, বিশেষজ্ঞগন, আমলাগন, সাইন্টিস্টগন সবাই নিরব এই সিদ্ধ্যান্তে।
দেখা যাক……না হলে সমাধান হয়তো আমাদেরই করতে হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২১জানুয়ারি২০২১