পরিবেশ বান্ধব বনায়নের ও ভূ-গর্ভস্থ পানির অপচয় রোধের লক্ষ্যে প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল টবের উদ্ভাবন করেছেন মানিকগঞ্জের উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ আব্দুল হালিম। উদ্ভাবিত এই টবে ৩ মাসে একবার পানি দিয়েই সতেজ রাখা যায় উদ্ভিদ। দেখতে দৃষ্টিনন্দন এবং কার্যকরি হওয়ায় দ্রুত সময়ে বেড়েছে চাহিদা।
যে টবে পানি দিতে হবে না তিনমাস
করোনাকলীন এই সময়েও তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থানের। ফলে উপকৃত হচ্ছেন এলকাবাসী। দৃষ্টিনন্দন এই টবেই অপার সম্ভাবনা দেখছেন এর উদ্ভাবক আব্দুল হালিম।
উদ্ভাবিত এই টবের বিশেষ সুবিধা হচ্ছে এতে প্রতিদিন পানি দিতে হয় না। ৩ মাসে একবার পানি দিয়েই সতেজ রাখা যায় যে কোন প্রজাতির উদ্ভিদ। বিশেষায়িত সার প্রয়োগের ফলে, ফুল ও ফলের ফলন দ্বিগুন বৃদ্ধি পায়। এই ডিজিটাল অটো টবের আরেকটি অন্যতম গুণ হলো- এতে ডেঙ্গু মশার লাভা জন্মাতে পারে না। একটি টব তৈরি করতে মাটির টেরাকোটা, পিপিসি পাইপ, সিমেন্ট (সাদা এবং কালো), কার্পেট, স্টিলের পাত, বোতল এবং আউটপুট পাইপের প্রয়োজন পরে। একটি পূর্ণাঙ্গ টব তৈরিতে সময় লাগে প্রায় একঘন্টা।
দেশের উত্তর-পশ্চিমে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার শহীদ রফিক ধল্লা সেতুর পাশে সৌদি খেজুর নার্সারীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল হালিম প্রায় দুই বছর ধরে গবেষণা করছেন। ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় রোধ করতে এই ডিজিটাল টব উদ্ভাবন করেন তিনি। ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ডিজিটাল এই টবের অনুমোদন পেয়েছেন তিনি। সেখানে দুই ধরনের টব তৈরি হয়। একটি অটো এবং অপরটি ডিজিটাল। ডিজিটাল টব অ্যাপসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত।
প্রতিটি অটো টব ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা হয়। প্রতিটির মূল্য এক হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। অ্যাপসের মাধ্যমে যে সকল টব নিয়ন্ত্রণ করা হয় সেগুলোর মূল্য কিছুটা চড়া। উৎপাদক খরচ বেশি হওয়ার কারনেই দাম বেশি জানিয়েছেন আব্দুল হালিম। আগামী দিনে শতভাগ বাণিজ্যিক আকারে বাজার তৈরি হওয়াতে দাম কিছুটা কমে আসবে বলেও জানান তিনি।
ডিজিটাল এই টবের উদ্ভাবক মুহাম্মদ আব্দুল হালিম বলেন, “টবের মাধ্যমে বিশ্বের সকল শহর এমনকি গ্রাম-গঞ্জেও ছাদ বাগানসহ বিভিন্ন জায়গায় নানা প্রজাতির গাছ রোপনের প্রচলন রয়েছে। প্রচলিত যে কোন টবে গাছের গোড়ায় পানি দিতে হয়। এসব গাছ ও উদ্ভিদের রক্ষণাবেক্ষণে প্রচলিত টবে প্রতিদিন সারা বিশ্বে কোটি কোটি লিটার পানি ব্যবহার করা হয়। পানির এই অপব্যবহার কীভাবে কমানো যায় সেই চিন্তাধারা থেকেই দীর্ঘ গবেষণার পর ডিজিটাল টবের উদ্ভাবন।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বে যেকোনো জায়গায় বসে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে এই টবে পানি দেওয়া যাবে। ডিজিটাল এই টবে যেহেতু গাছের গোড়ায় পানি দিতে হয়না তাই পানির অপচয় হয় অনেক কম। যা মাত্র শতকরা ৫ ভাগ। এই টব ব্যবহার করলে একদিকে যেমন পানির অপচয় রোধ হবে, অন্যদিকে ফুল-ফলের অধিক ফলন হবে।”
বহির্বিশ্বে মরুভূমি প্রধান দেশগুলোতেও এই টবের চাহিদা খুব দ্রুত তৈরি হবে। তার এই শিল্পকে প্রসারিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বিক সহযোগীতা কম্য করেন তিনি। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে এই ডিজিটাল টবের মাধ্যমে সৌদি আরবের খেঁজুর গাছের চারার নার্সারী করে সফল হয়েছেন এর উদ্ভাবক।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২৮ জুন ২০২১