সাধারণত একটি মাঝারি আকারের গরুর দাম ১ থেকে ২ লাখ টাকা হয়ে থাকে। ৭০০ কেজি মাংস মিলবে এমন একটা গরুর বাজারদর ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য একটি ষাঁড় থেকে প্রায় ২ কোটি টাকা আয় করেছে সরকার। যার আইডি নম্বর এফআর-২৫।
পাকিস্তানি শাহিওয়াল জাতের গাভীকে ফ্রিজিয়ান ক্রস ব্রিড থেকে এই ষাড়ের জন্ম দেশে। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সাভার কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে ষাড়টি থেকে ৬ লাখ ২৩ হাজার ৩৬০ ডোজ সিমেন সংগ্রহ করা হয়। খামারিদের কাছে প্রতি ডোজ সিমেন ৩০ টাকা দরে বিক্রি করে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৮০০ টাকা আয় করে সরকার।
সাভার কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার সূত্র জানায়, খামারিদের কাছে শাহিওয়াল-ফ্রিজিয়ান ক্রস ব্রিডের এই ষাঁড়ের সিমেনের চাহিদা ছিল বেশি।
কারণ এই ষাঁড় থেকে উৎপাদন হওয়া গাভী থেকে ১৭ থেকে ২২ লিটার পর্যন্ত দুধ মিলেছে। পাশাপাশি গাভীগুলো দীর্ঘজীবী হয়েছে। এছাড়া এর বংশধর গরুগুলো থেকে মাংসও মিলেছে বেশি। ফলে খামারিদের কাছে এই ষাঁড়ের সিমেনের কদর ছিল বেশি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাভার কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে বিভিন্ন জাতের মোট ব্রিডিং ষাঁড় রয়েছে ১৫৬টি। একটি ষাঁড় থেকে একবারে ৫০০ ডোজ সিমেন সংগ্রহ করা হয়। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন জাতের এসব ষাঁড় থেকে ২০১৯ সালে মোট ৩৬ লাখ ১৩ হাজার ডোজ সিমেন সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো মাইনাস ৯৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংগ্রহ করা হয়। এসব সিমেন ৬০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত সংগ্রহে রাখা যায়। পর্যায়ক্রমে চাহিদা অনুযায়ী সারাদেশে খামারিদের নিকট সরবরাহ করা হয়।
সিমেন বিক্রি করে ২০১৯ সালে সরকার আয় করেছে ১০ কোটি ৮৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। দেশে মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি ও খামারিদের উৎসাহিত করতে ভর্তুকি মূল্যে মাত্র ৩০ টাকা দরে সিমেন ডোজ বিক্রি করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, দেশ এখন মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন। এখন ভারতীয় গরু ছাড়াই কোরবানির চাহিদা মিটে যায়। এর প্রধান কারণ দেশে প্রাণিসম্পদ খাতের বিশাল উন্নয়ন। মাত্র একটি ষাঁড় থেকেই সরকার ২ কোটি টাকা আয় করেছে। ২ কোটি টাকা আয় বড় কথা নয়, সারাদেশে উন্নত জাতের গরু ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে মাংস ও দুধ উৎপাদন বেড়েছে, এটাই সরকারের সফলতা।
প্রাণিসম্পদ সূত্র জানায়, বাংলাদেশে গত দশ বছরে সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রাণিজাত খাদ্যের উৎপাদন ও চাহিদা বেড়েছে। বাড়তি চাহিদার যোগান নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ফলে দেশে প্রাণিসম্পদ উৎপাদন ব্যাপক হারে বেড়েছে। বর্তমানে প্রাণিসম্পদ খাতে নিট প্রাণিজ আমিষের বার্ষিক চাহিদার শতকরা ৫৭ দশমিক ৭২ শতাংশ যোগান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ এখন মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন। মাথাপিছু দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংসের বার্ষিক চাহিদার বিপরীতে ১২৬ দশমিক ২০ গ্রাম মাংসের যোগান নিশ্চিত সম্ভব হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আব্দুল জব্বার শিকদার বলেন, সরকার প্রাণিসম্পদ খাতে নজর দিয়েছে। বিশ্বের নানা দেশ থেকে উন্নত জাতের ষাঁড় সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ষাঁড়ের জাত কৃষক ও খামারি পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই কর্মযজ্ঞ চলতে থাকলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে মাংস রফতানি করা সম্ভব হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২১জানুয়ারি২০২১