রংপুরে নগরীর বর্জ্য থেকে তৈরি হবে জৈব সার

95

রংপুর নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বর্জ্য ভাগাড়ে না রেখে কাজে লাগিয়ে জৈব সার উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক)। আগামী মাস থেকে নগরীর সাতমাথা নব্দীগঞ্জ সড়কে নাছনিয়া এলাকায় বর্জ্য থেকে জৈব সার উৎপাদনে যাচ্ছে একটি বেসরকারি সংস্থা। বাছাই করা প্রয়োজনীয় পচনশীল বর্জ্য থেকে জৈব সার উৎপাদন করে বাজারজাত করার চিন্তাভাবনা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

রি-গ্রিন নামের সংস্থাটি এরই মধ্যে সিটি করপোরেশন থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল কার্যক্রম শুরু করেছে। পুরোদমে কাজ শুরু হবে জুনের প্রথম সপ্তাহে। যদিও সাত বছর আগে নেয়া একই উদ্যোগ বাছাই করা প্রয়োজনীয় পচনশীল বর্জ্য সরবরাহ না থাকায় ভেস্তে গেছে। তবে এবার সার উৎপাদনে রয়েছে সফল হওয়ার সম্ভাবনা।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, পচনশীল বর্জ্য থেকে প্রক্রিয়াজাত করে জৈব সার তৈরি করার জন্য ২০১৬ সালে রংপুর নগরের নাছনিয়া এলাকায় প্রায় এক একর জমির ওপর এ প্ল্যান্ট গড়ে তোলা হয়। ব্যয় হয়েছে প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা। পরিবেশ অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।

প্রথমে একটি বেসরকারি সংস্থাকে জৈব সার তৈরির কাজ দেয়া হলেও তারা পারেনি। ফলে বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পটির কাজ। পাঁচ বছর পর গত ডিসেম্বরে আবার চালু করার উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। নতুন করে চুক্তি করা হয় ছিন্নমূল মহিলা সমিতির সঙ্গে। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিকে পচনশীল বর্জ্য সরবরাহ করতে না পাওয়ায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

এবার সিটি করপোরেশন থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে সার উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু করেছে রি-গ্রিন। এখন দীর্ঘ প্রায় সাত বছর বন্ধ থাকার পর এটি আবার চালু হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে এ উদ্যোগকে পরীক্ষণমূলক কার্যক্রমের অংশ বলছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

রসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মিজু বলেন, এটা আমরা পরীক্ষণমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেখছি। একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এর আগে যাদের জৈব সার উৎপাদনের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তারা ব্যর্থ হয়েছে। এখন যে সংস্থাটি কাজ করছে, তাদের আমরা মনিটরিং করছি। যদি সফলভাবে সার উৎপাদন সম্ভব হয়, তাহলে নগরবাসী উপকৃত হবেন।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, সিটি করপোরেশনের ৩৩ ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন বর্জ্যরে পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১০০ মেট্রিক টন। এর মধ্য থেকে ৩৫টি ট্রাক ও ভ্যানে করে ৬০ থেকে ৬৫ মেট্রিক টন বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব বর্জ্য নগরের নাছনিয়া এলাকার কলাবড়ি স্থানে খোলা জায়গায় ফেলা হয়। এই কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ৬৮০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী।

সংগ্রহ করা এসব বর্জ্য হলো মিশ্র বর্জ্য। এসব বর্জ্য থেকে পচনশীল বর্জ্য আলাদা করতে হবে। সেখানে সার তৈরির জন্য রাখা হয়েছে ২১টি প্রকোষ্ঠ। প্রতিটি প্রায় ২১০ বর্গফুট আয়তনের। এসবে প্রায় ১৫ টন পচনশীল বর্জ্যরে ধারণক্ষমতা রয়েছে।

এদিকে পরিত্যক্ত ময়লা-আবর্জনা থেকে জৈব সার উৎপাদন করার উদ্যোগকে কাজে লাগাতে চান সিটি মেয়র। বর্জ্য থেকে জৈব সার উৎপাদন করা গেলে একদিকে যেমন নগরবাসী আবর্জনার উৎকট দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পাবে, অন্যদিকে বর্জ্য দ্বারা জৈব সার উৎপাদনে নগরীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।

সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, বর্জ্য সংগ্রহের সময় একেবারে উৎস থেকে কীভাবে পচনশীল বর্জ্য আলাদা করা যায়, এটি নিয়ে তারা ভাবছেন। আশা করা যাচ্ছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে জৈব সার উৎপাদনে গতি ফিরে আসবে।

তিনি আরও বলেন, ময়লা-আবর্জনা থেকে জৈব সার তৈরির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আমরা পরীক্ষণমূলক উদ্যোগ নিয়েছে। যদি সেটাতে সফলতা আসে, তাহলে পচনশীল ময়লা-আবর্জনার ব্যবহার বাড়বে। এতে আমরা জৈব সার পাব, সঙ্গে সারের ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ হবে।