এম. ওবাইদুল্লাহ, রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীতে জমে উঠেছে শীতকালীন ফুলের চারা বিক্রি। চারা সংগ্রহে ভীড় বাড়ছে সরকারী ও ব্যক্তি মালিকানাধীন নার্সারীগুলোতে। পুরো মৌসুম জুড়ে কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্যের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজশাহী নার্সারী মালিক সমিতির হিসেবে, রাজশাহীতে নার্সারী রয়েছে ৩৮টি। এর মধ্যে ১৫টি বড়। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে এসব নার্সারীতে শুরু হয়েছে শীতকালীন ফুলের চারা বিক্রি। চলবে মার্চ পর্যন্ত। প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার চারা বিক্রি হয়। এবারো সেই টার্গেটেই এগুচ্ছেন বাণিজ্যিক এসব নার্সারী মালিক। এর বাইরেও সীমিত চারা বিক্রি করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দুটি নার্সারী।
নার্সারী মালিকদের হিসেবে, একেকটি বড় নার্সারী এক মৌসুমে চারা বিক্রি করে অন্তত ১০ লাখ টাকার। চারা সংগ্রহকারীদের অধিকাংশই শৌখিন বাগান মালিক। নগরীর নওদাপাড়া পোস্টাল একাডেমীর সামনের মেসার্স লিজা নার্সারীতে চারা নিতে এসেছিলেন জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার বালিয়াঘাট্টা এলাকার কলেজ শিক্ষক কামরুজ্জামান শহীদ। শখের বসেই কয়েক বছর ধরে বাগান করেন তিনি। প্রতিবছর তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টার থেকে ফুলের চারা সংগ্রহ করেন। কিন্তু এবছর এসেছেন রাজশাহীর এ নার্সারীতে। তার ভাষ্য, নানান জাত ও দাম কম হওয়ায় তিনি এখানে এসেছেন। চারাও পেয়েছেন মনমত, সবমিলিয়ে সন্তুষ্ঠ তিনি।
নার্সারীতে ডালিয়া ফুলের চারা বাছাই করছিলেন নার্সারী মালিক তাজুল ইসলাম। ডালিয়া চারা তার নার্সারীতে উৎপাদন হয়না। শুধু তিনিই নন, রাজশাহী অঞ্চলে এ ফুলের চারা নেই। যোগান নিশ্চিত করতে এবছর তিনি ভারত থেকে চারা আমদানি করছেন। বাছাই করে সরবরাহ করছেন ক্রেতাদের মাঝে। তবে শীতকালীন অন্যান্য সব ফুলের চারা রয়েছে তার নার্সারীতে। রকম ভেদে প্রতিটি চারার দাম পড়ছে ৩ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। তিনি ছাড়াও ছয়জন কর্মী কাজ করছেন। এ মৌসুমে তিনি অন্তত ২০ লাখ টাকার চারা বিক্রি করবেন। গত বছরও বিক্রি করেছিলেন ২০ লাখ টাকার শীতকালীন ফুলের চারা। বীজের উচ্চ মূল্যের কারণে চারার দাম বাড়তি বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাজশাহী নার্সারী মালিক সমিতির সভাপতি শাহেদুজ্জামান জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণ ছাড়া কোন ধরণের সরকারী পৃষ্টপোষকতা পাননা তারা। পাননা সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণও। এসব সুবিধা পেলে এ বাণিজ্য আরো ছড়িয়ে দেয়া যেতো। রাজশাহীতে সরকারী উদ্যোগে ফুলের চারা উৎপাদন করছে কোর্ট হর্টিকালচার সেন্টার ও কাশিয়াডাঙ্গা হর্টিকালচার সেন্টার। এর মধ্যে কোর্ট হর্টিকালচার সেন্টার গত বছর শীতকালীন ফুলের চারা বিক্রি করেছে ২০ হাজার টাকার। বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২৫০টি চারা। এর প্রায় অর্ধেক এক হাজার ৩০২টি চারা বিক্রি হয়েছে কাশিয়াডাঙ্গা হর্টিকালচার সেন্টার।
তবে এবছর চারার উৎপাদন বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কাশিয়াডাঙ্গ হর্টিকালচার সেন্টারের নার্সারী তত্তাবধায়ক রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় তারা বাণিজ্যিক চারা উৎপাদনে যেতে পারছেননা। তবে এটি তারা আদর্শ নার্সারী হিসেবেই গড়ে তুলেছেন। একই ভাষ্য কোর্ট হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ ফৌজিয়া ফেরদৌসের। তিনি বলেন, তাদেরও সীড বেড সীমিত। এছাড়া বীজ আমদানি নির্ভর। ফলে চারার উৎপাদন বাড়ছেনা। এছাড়া যেসব চারা উৎপাদন হয় সেগুলোও বিক্রি নেই প্রচারণার অভাবে। সব মিলিয়ে এখনো বাণিজ্যিক হতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। তবে প্রতি বছরই চারা উৎপাদন ও বিপনন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেবে, রাজশাহী অঞ্চলে এ বছর বাণিজ্যিক ফুলের চাষ হচ্ছে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৬ হেক্টর, নওগাঁয় ৩ দশমিক ৩৬ হেক্টর ও নাটোরে ৮ হেক্টার। গত বছরের চেয়ে এ বছর বেড়েছে ফুল চাষ। এর বাইরের রয়েছে বিপুল পরিমাণ শৌখিন ফুল বাগান। ফুল চাষীদের সব ধরণের তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা।