রমজানে মধুপুরের বেগুন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে

363

বেগুন
টাঙ্গাইল : জেলার মধুপুরের বেগুন এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি বেগুন চাষীরা বেগুনের দাম ভাল পাওয়ায় তারা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। অধিক লাভজনক হওয়ায় ধান ছেড়ে বেগুন চাষে ঝুঁকছেন এ উপজেলার কৃষকরা।

জানা যায়, মধুপুর উপজেলার কুড়ালিয়া ইউনিয়নের কদিমহাতীল, টিকরী, কোনাবাড়ী, কুড়াগাছা ইউনিয়নের পিরোজপুর, গোলাবাড়ী ইউনিয়নের গোলাবাড়ী গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে গত কয়েক বছর ধরে বোরো মৌসুমে তাদের জমিতে বোরো ধান চাষ না করে বেগুন চাষ শুরু করেছেন। অধিক লাভজনক হওয়ায় এলাকার প্রত্যেক কৃষকই ২০ শতক থেকে সর্বোচ্চ ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমিতে বেগুনের চাষ করেছেন। এসব এলাকায় মাঠে-মাঠে এখন কেবল বেগুনের ক্ষেত। এ এলাকার কৃষকরা হাইব্রিড ও নসিমন এবং যশোরের ইসলামপুরী ও সাদা গুটি জাতের বেগুন চাষ করেছেন।

উপজেলার মধুপুরের পোদ্দারবাড়ী গ্রামের রুহুল আমীন (৩৫) জানান, তিনি এবার কুড়ালিয়া ইউনিয়নের কদিমহাতীল গামের ২৪ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বেগুন চাষ করেছেন। তিনি হাইব্রিড ও নসিমন জাতের বেগুন চাষ করেছেন। তার বেগুন ক্ষেতে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিদিন তিনি গড়ে প্রায় ৭০০ কেজি বেগুন বিক্রি করতে পারছেন। বাজারে বর্তমানে দেড় হাজার থেকে ১৭০০ টাকা মণ দরে বেগুন বিক্রি হচ্ছে। ফলে বেগুন চাষে যা ব্যয় করেছেন তার চেয়ে লাভ হচ্ছে বহুগুণ বেশি।

শুধু রুহুল আমীন নয়। মধুপুরে এ রকম প্রায় ৪০ জন বেগুনচাষি রয়েছেন। তারাও অনুরূপভাবে ৬০০ থেকে ৮০০ কেজি বেগুন বিক্রি করে থাকেন। বেগুন চাষিদের হিসেব মতে শুধু মধুপুরেই প্রতিদিন ২০ লাখ টাকার বেগুন উৎপাদন হচ্ছে। এখানকার বেগুনসহ মধুপুরের সবজি রপ্তানী হচ্ছে বিদেশের মাটিতেও। বেগুন বিক্রি করে রুহুল আমীনের মতো অনেক চাষী স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বেগুন চাষে আশপাশের অনেক শ্রমিকেরও কর্মস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে।

হাইব্রিড ও নসিমন জাতের বেগুন রোপণ করে ৫০-৬০ দিনের মাথায় বেগুন পাওয়া যায়।

এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করতে সর্বোচ্চ খরচ পড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। সেখানে পুরো মৌসুমে বেগুন পাচ্ছেন প্রায় দেড়শ’ মণ পাওয়া যায়। দাম ভাল থাকায় কৃষকরা এবার ক পাইকারি কাঁচা তরকারি ব্যবসায়ীরা সরাসরি ক্ষেত থেকে নগদ টাকায় এসব বেগুন কিনে নিয়ে যান।

পাইকারি বেগুন ক্রেতারা জানিয়েছেন, মধুপুর থেকে প্রতিদিন ৮-১০ ট্রাক বেগুন কিনে তারা ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম ও বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকেন।

বেগুন চাষীরা জানান, বাজারে ভেজাল কীটনাশকের কারণে কৃষকের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তাদের দাবি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যদি কীটনাশক কোম্পানীগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ভেজালমুক্ত কীটনাশকের ব্যবস্থা করেন তবে বাংলাদেশ থেকে আরো কোটি কোটি টাকার সবজি বিদেশে রপ্তানী করা যাবে।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান জানান, মধুপুরে এ বছর ১২০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়েছে। আমন ধানের ফসল তোলার পর অগ্রহায়ণ মাসে জমিতে বেগুনের চারা রোপণ করতে হয়। চৈত্র মাসের শেষ দিকে গাছে বেগুন ধরা শুরু হয়। বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় এই ৩ মাস বেগুন তোলা এবং বিক্রি করা হয়। বেগুন চাষে একদিকে উৎপাদন খরচ কম।

অন্যদিকে ভালো বাজার মূল্য পাওয়ায় কৃষকরা বেগুন চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন