রাঙামাটিতে লিচুর বাম্পার ফলন, ৩৫০ কোটি টাকার বাণিজ্যের আশা

162

দেশে ফরমালিনবিহীন ফলের কথা উঠলেই নাম আসে পার্বত্য চট্টগ্রামের। তার মধ্যে প্রথমে হƒদ পাহাড়ের জেলা রাঙামাটি। গ্রীষ্ম ঋতুতে মৌসুমি ফলের ব্যাপক ফলন হয় রাঙামাটিতে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি, পার্বত্য এ জেলায় চলতি মৌসুমে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে।

জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের আবহাওয়া লিচুর জন্য উপযোগী হওয়ায় এখানে প্রচুর পরিমাণে লিচুর বাগান গড়ে উঠেছে। এখানকার লিচু মিষ্টি ও বেশ রসালো হাওয়ায় সুনাম রয়েছে দেশব্যাপী। চলতি মৌসুমে রাঙামাটিতে এক হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়েছে। ফলে জেলার দুর্গম এলাকা থেকে শহরে আসা লিচু প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ট্রাকভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন। ভালো ফলনের কারণে ন্যায্যমূল্যে পেয়ে খুশি খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, রাঙামাটিতে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪০০ হেক্টর জমিতে চায়না-৩, ৪৫০ হেক্টর জমিতে চায়না-২ ও বাকি ৯৫০ হেক্টর জমিতে দেশি লিচুর চাষ হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, খুচরা বাজারে দেশি লিচু বিক্রি হয়েছে ১০০টি ১০০ টাকা করে। চায়না-২ বিক্রি হচ্ছে ১০০টি ১৮০-২১০ টাকায় এবং চায়না-৩ বিক্রি হচ্ছে ১০০টি ২৮০-৩১০ টাকায়। খুচরা বাজার থেকে ৫০ টাকা কম মূল্যে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় লিচু শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে বাজারে দাপট চলছে চায়না-৩ জাতের।

ব্যবসায়ীরা জানান, বৃষ্টি কম হওয়ায় এবার ফলন ভালো হয়েছে, পোকা আক্রমণ করতে পারেনি। বৃষ্টি বেশি হলে বাজারজাত করা যায় না, আকারে ছোট হয় ও পোকা আসে। দেশব্যাপী এবার রাঙামাটির লিচুর চাহিদা থাকায় বিগত কয়েক বছরের ঘাটতি পূরণ করা যাবে। তারা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি দামে লিচু বিক্রি করছেন। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে রাঙামাটির লিচুর বাজার শেষ হয়ে যাবে বলেও ব্যবসায়ীরা জানান।

লিচুচাষি রুপায়ণ চাকমা বলেন, আমার দুই একর পাহাড়জুড়ে ফলের বাগান আছে, যেখানে বেশিরভাগই লিচুর। আমি শুরু থেকে পরিচর্যা করায় বাগানে ভালো ফলন হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এসে বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করছেন। এতে দামও বেশি পাচ্ছি। তবে লিচু আহরণ শেষের পথে।

রাঙামাটি কলেজগেট এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, গত বছরের চেয়ে এবার উৎপাদন বেশি হয়েছে। দৈনিক ১০ হাজারের মতো বিক্রি করি। বিক্রি কম হলে মাঝে মাঝে লোকসানও হয়। তবে এবারের বাজার ভালো।

মৌসুমি ব্যবসায়ী মকিম মোল্লাহ বলেন, আমি বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করি। বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক ব্যবসায়ী এসে আমার কাছ থেকে লিচু নিয়ে যান এবং বিভিন্ন স্থানে লিচু পাঠান। প্রতিদিন আমার পাঁচ হাজারের মতো টাকা লাভ থাকছে।

এ বিষয়ে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, চলতি বছর রাঙামাটিতে এক হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এখানকার লিচু রসালো ও বিচি ছোট হওয়ায় চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত লিচু বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন, যার ফলে লিচু ব্যবসায় ৩৫০ কোটি টাকার লেনদেন হবে বলে জানান তিনি।