রাজধানীর হাটগুলোতে পর্যাপ্ত পশু, আজ থেকে বিক্রি বাড়তে পারে

395

গরু

কোরবানির পশুতে ভরে উঠেছে রাজধানীর হাটগুলো। নির্ধারিত জায়গা ছাড়িয়ে আশপাশের খালি জায়গায়ও রাখা হয়েছে অনেক পশু। বিক্রি চলছে স্বল্পপরিসরে। আজ থেকে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইজারাদাররা বলছেন, মহাসড়কে যানজটে আটকে থাকা গরুর ট্রাকগুলো আজকের মধ্যেই ঢাকার হাটগুলোতে চলে আসবে। এখন বেশি দাম হাঁকানো বিক্রেতারা তখন দাম কমাতে বাধ্য হবেন।

ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, গত বছর যে গরু ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে, এবার সে গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৭০-৮০ হাজার টাকা। এক লাখের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে দেড় লাখ টাকা। ফলে অনেকে বাজার ঘুরেও গরু কিনতে পারছেন না।

তবে বেপারিরা বলছেন, পশু পালনে খরচ বেশি হয়েছে। খাদ্য, ওষুধ, পরিবহন ও রাস্তার খরচ মিলে পশুর দাম বেশি পড়েছে। তাছাড়া বিক্রি তেমনভাবে শুরু না হওয়ায় বাজার যাচাই করতে দাম একটু বেশিই চাওয়া হচ্ছে।

শনিবার সকালে বছিলা হাটে দেখা যায়, পুলিশ আবাসনের জন্য নির্ধারিত খালি জায়গা পশুতে ভরে উঠেছে। পাশে রায়েরবাজার কবরস্থানের জন্য অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের আবাসনে নির্ধারিত জায়গাও পশুর দখলে। এখন আশপাশ ও সড়কের পাশের খালি জায়গায়ও পশু বাধা হচ্ছে।

এলাকাবাসী বলছেন, আজকের মধ্যে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ থেকে বছিলা ব্রিজ পর্যন্ত সড়ক গরুর দখলে চলে যেতে পারে। হাট ইজারাদার ও পশু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ হাটে অন্তত দুই লাখ গরু উঠেছে। তিন দিন ধরে টুকটাক বিক্রিও চলছে। আজ থেকে বিক্রি বাড়ার আশা করছেন তারা।

কুষ্টিয়ার মিরপুরের বাসিন্দা ও পশু ব্যবসায়ী মো. আবদুল কাদের এদিন সকালে বছিলা হাটে ১৮টি গরু নিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, গরুগুলো হাজারীবাগ হাটের জন্য নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু বেড়িবাঁধ হয়ে যাওয়ার সময় বছিলা হাটের ইজারাদারের লোকেরা তাদেরকে জোর করে এ হাটে নিয়ে এসেছেন।

তিনি বলেন, আমার সবই ষাঁড়গরু। আকৃতিও বেশ বড়। প্রতিটি ষাঁড়ে ৪-৫ মণ মাংস হবে। ৬০-৯০ হাজার টাকার মধ্যে দাম রয়েছে।

ঝিগাতলা হাজারীবাগ হাট বেড়িবাঁধ ছাড়িয়ে কোম্পানিঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। জামালপুর সদরের বাসিন্দা ও পশু ব্যবসায়ী সলেমান মিয়া যুগান্তরকে বলেন, প্রতিবছর এ হাটে গরু ওঠাই আমরা। এবার ভেতরে কিছুটা ছোট করায় বেড়িবাঁধে হাট সম্প্রসারিত হয়েছে।

শনিবার সকাল পর্যন্ত হাটে প্রায় এক লাখ গরু উঠেছে। ক্রেতা কম, দামাদামি কম হচ্ছে। যারা দামাদামি করছেন, তাদের মধ্যে কেনার উদ্দেশ্যও কম। এ কারণে বিক্রেতারাও দাম কিছুটা বাড়িয়ে বলছেন। আশা করছি সন্ধ্যা বা রোববার সকাল থেকে পুরোদমে হাটে বিক্রি জমে উঠবে।

তেজগাঁও ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট কলেজ মাঠের অস্থায়ী পশুর হাটে দেখা গেছে প্রায় ১০ হাজার গরু উঠেছে। এ হাটের কিছু শেড শনিবারও পশুশূন্য দেখা গেছে। তবে ইজারাদাররা জানিয়েছেন রোববারের মধ্যে হাট পশুতে ভরে উঠবে। ব্যবসায়ীরা জানান, বৃহস্পতিবার থেকেই বিক্রি শুরু হয়েছে।

ট্রাকে ট্রাকে নতুন পশু ঢুকছে। এ হাটে শনিবার পর্যন্ত সর্বোচ্চ দামের গরু ছিল সাড়ে চার লাখ টাকার। ঝিনাইদহের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মো. ছলিম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, বাড়িতে পালা দুটো ষাঁড় নিয়ে এসেছি। একটি সাড়ে চার লাখ টাকা এবং আরেকটি চার লাখ টাকা বলছি। তবে দুটো গরু সাত লাখ টাকা হলে বিক্রি করে দেব।

শনির আখড়া সংলগ্ন দনিয়া কলেজ মাঠে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় এক লাখ গরু উঠেছে। এ হাটেও স্বল্পপরিসরে বিক্রি শুরু হয়েছে। শ্যামপুর বালুর মাঠ পশুর হাটে প্রায় ৫০ হাজার কোরবানি পশু উঠেছে। এ হাটে ট্রলারে ট্রাকে করে পশু আসছে।

গোলাপবাগ মাঠে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩০ হাজার কোরবানির পশু উঠেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও হাট ইজারাদাররা। মিরপুর-১২ নম্বর হাট আয়তনে খুবই ছোট। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার গরু উঠেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। উত্তরা দিয়াবাড়ী হাটে অন্তত ২ লাখ কোরবানির পশু উঠেছে। আর খিলক্ষেত বনরূপা হাটে গরু উঠেছে লক্ষাধিক।

এসব হাট ঘুরে ইজারাদার, বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩০ হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ টাকার মধ্যেই বেশি গরু উঠেছে। তবে এক লাখ ১০, ২০, ৩০ হাজার টাকারও অনেক গরু রয়েছে। প্রায় প্রত্যেক হাটেই কিছু গরু রয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দামের।

গণমাধ্যম ও ক্রেতাদের দৃষ্টি কাড়তে বাস্তব মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দাম হাঁকছেন এর বিক্রেতারা। গাবতলীসহ কয়েকটি হাটে ৪ থেকে শুরু করে ১২, ১৫ এমনকি ২০ লাখ টাকাও হাঁকা হচ্ছে কোনো কোনো গরুর দাম।

রাজধানীর হাটগুলোতে গরুর সঙ্গে ছাগলও উঠেছে বেশ। ৮ হাজার থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকা দামের ছাগলের সংখ্যা বেশি। এর চেয়ে বেশি দামের কিছু ছাগলও দেখা গেছে। ৩০, ৪০, ৫০, ৬০, ৭০, ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত খাসির দাম হাঁকাতে দেখা গেছে।

গাবতলী হাটে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন আকৃতির মহিষ। গরুর চেয়ে মহিষের দাম কিছুটা বেশি। ৫০ হাজার টাকার নিচে মোটামুটি আকারেরও মহিষ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ৬০, ৭০, ৮০, ৯০ হাজার টাকায় হৃষ্টপুষ্ট মহিষ পাওয়া যাচ্ছে। এর চেয়েও বেশি দামের কিছু মহিষ উঠেছে গাবতলী হাটে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন