রাজশাহীতে ব্যাপকভাবে কমেছে সূর্যমুখীর আবাদ

89

 

রাজশাহীতে গত চার বছরে সূর্যমুখী ফুলের চাষ কমেছে হতাশাজনক হারে। চলতি বছর পুরো জেলায় সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে মাত্র ২২ হেক্টর জমিতে। আর ২০২১ সালে জেলায় এই ফুলের চাষ হয়েছিল ১৫৪ হেক্টর জমিতে।

এমন অবস্থায় কৃষি অফিস বলছে, লাভজনক না হওয়ায় কমেছে এই ফুলের চাষ। চাষিরা অন্য ফসলে ঝুঁকেছে। একই সঙ্গে প্রণোদনাও ফ্যাক্টর ছিল। কারণ প্রণোদনার বছর সর্বোচ্চ সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। তার পরের বছরগুলোয় কমতে কমতে তলানিতে ঠেকে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে সরকারিভাবে প্রণোদনা দেয়া হয় সূর্যমুখী চাষে। সেই বছর ব্যাপক হারে রাজশাহীতে সূর্যমুখীর চাষ হয়। জেলার সর্বোচ্চ ১৫৪ হেক্টর জমিতে এই ফুলের চাষ হয়। এতে ফলন হয় ২০৪ মেট্রিক টন। পরের বছর সূর্যমুখীর চাষ কমে দাঁড়ায় ৩৯ হেক্টরে, ফলন হয় ৪৫ মেট্রিক টন।

এ ছাড়া ২০২৩ সালে জেলায় সূর্যমুখীর চাষ হয় ২৯ হেক্টর জমিতে। ২০২২ সালের তুলনায় চাষের জমি কমেছে ১০ হেক্টর। ফলন হয় ৩৮ দশমিক ৮ মেট্রিক টন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে জেলায় সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে মাত্র ২২ হেক্টর জমিতে। এ বছর জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পাঁচ হেক্টর জমিতে এই ফুলের চাষ হয়। এ ছাড়া পবা, তানোর ও মোহনপুর উপজেলায় তিন হেক্টর করে জমিতে এই ফুলের চাষ হয়েছে। বাগমারা, দুর্গাপুর এক হেক্টর করে হলেও পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় দুই হেক্টর করে জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে।

কৃষি অফিসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রণোদনার বছর ২০২১ সালে জেলায় ১৫৪ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়। সে বছর জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৬০ হেক্টর জমিতে এই ফুলের চাষ হয়। কৃষি অফিস ফলন দেখায় ৮৪ মেট্রিক টন। পবা উপজেলায় ২৪ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী উৎপাদন হয় ৩১ দশমিক ২ মেট্রিক টন। তানোরে ১৪ হেক্টর জমিতে ১৮ দশমিক ২ মেট্রিক টন, মোহনপুরে ৫ হেক্টর জমিতে ৬ দশমিক ৫ মেট্রিক টন, দুর্গাপুরে ২ হেক্টর জমিতে ২ দশমিক ৬ মেট্রিক টন, পুঠিয়ায় ৩ হেক্টর জমিতে ৩ দশমিক ৬ মেট্রিক টন, গোদাগাড়ীতে ৩০ হেক্টর জমিতে ৩৯ মেট্রিক টন, চারঘাটে ৬ হেক্টর জমিতে ৭ দশমিক ২ মেট্রিক টন এবং বাঘায় ১০ হেক্টর জমিতে ১২ মেট্রিক টন সূর্যমুখীর চাষ হয়।

অপরদিকে ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে রাজশাহী জেলায় সূর্যমুখী চাষের গড় হিসেবে দেখা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি। এই উপজেলায় ২০২২ সালে সূর্যমুখীর চাষ হয় ৯ হেক্টর জমিতে, যা ২০২১ সালের তুলনায় ২১ হেক্টর জমিতে। তার পরের বছর ২০২৩ সালে এই ফুলের চাষ হয় ৭ হেক্টর ও সর্বশেষ চলতি বছরে চাষ হয়েছে ৫ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া বাঘায় উপজেলায় এ বছর মাত্র দুই হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। প্রণোদনার বছরে এই উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছিল ১০ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া ২০২২ সালে ৩ দশমিক ৩ হেক্টর ও ২০২৩ সালে বেড়ে ৮ হেক্টর জমিতে এই ফুলের চাষ হয়।

এ বিষয়ে বাঘা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, সূর্যমুখীর চাষ কমেছে উপজেলায়। এ বছর উপজেলায় চাষ হয়েছে ২ হেক্টর জমিতে। কম লাভ হওয়ায় কমেছে এই ফুলের চাষ। চাষিরা অন্য ফসলে ঝুঁকেছেন। এ ছাড়া দুর্গাপুরে প্রণোদনার বছরে এই উপজেলায় সূর্যমুখীর চাষ হয়েছিল ২ হেক্টর জমিতে। ২০২২ সালে ৫ হেক্টর, ২০২৩ সালে এক হেক্টর এবং সর্বশেষ চলতি বছরে এক হেক্টর জমিতে এই ফুলের চাষ হয়।

গত বছর সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলেও এ বছর চাষ করেননি উপজেলার কৃষক আলমগীর হোসেন। তিনি জানান, গত বছর এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছিলেন তিনি। কিন্তু ফলন কম হওয়ায় এ বছর চাষ করেননি। তার দাবি আশানুরূপ ফলন পাননি সূর্যমুখীর। শুধু তিনি নন, এলাকার অনেকেই চাষ করেনি সূর্যমুখীর।

গোদাগাড়ীর এক চাষি জানান, এবারই প্রথম তিনি এই ফসলের চাষ করছেন। তিনি আশাবাদী এই ফসল নিয়ে। তার জমিতে মোটামুটি ফুটেছে সূর্যমুখী ফুল। তিনি আশা করছেন ফলন ভালো পাবেন।

অপরদিকে সর্বোচ্চ চাষের উপজেলা বাগমারায় সূর্যমুখী ঠেকেছে হেক্টরে। এই উপজেলায় মাত্র এক হেক্টর জমিতে এই ফুলের চাষ হয়েছে। যদিও প্রণোদনার বছরে উপজেলাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৬০ হেক্টর জমিতে এই ফুলের চাষ হয়েছিল। তবে ২০২২ সালে কমে ৫ হেক্টর এবং ২০২৩-২৪ সালে চাষ এক হেক্টরে দাঁড়ায়।

এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, সূর্যমুখীর চাষ কমেছে। ২০২১ সালে প্রণোদনা ছিল। সেই বছর বেশি এই ফুলের চাষ হয়েছিল। এর চেয়ে যে ফসলগুলো লাভজনক সেই ফসলে ঝুঁকেছেন চাষিরা।