মাহী ইলাহি, রাজশাহী থেকে: আর কয়েকদিন পর ঈদুল আজহা। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে আসছে ভারতীয় গরু। একটি অথবা দুটি নয়, আসছে পাল ধরে। অথচ রাজশাহীতে এবার কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত পশুর মজুত আছে। বন্যার কারণে অতিরিক্ত পশুও হাটে উঠছে। কিন্তু ভারতীয় গরুর কারণে ভালো দাম পাচ্ছেন না স্থানীয় খামারিরা। পড়েছেন লোকসানের মুখে।
উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম পশুর হাট ‘সিটি হাট’। এই হাটে গিয়ে বন্যার প্রভাব দেখা গেছে। এই পশুহাটটিতে প্রচুর সংখ্যক দেশি গরু-মহিষ উঠছে। এর পাশাপাশি দেখা গেছে ভারতীয় গরুও। তবে সব পশুরই দাম কম। বিক্রেতারা বলছেন, বন্যার কারণে এবার এমনিতেই দেশি গরুর দাম কম। তারপরেও ভারতীয় গরু দাম কমিয়েছে আরও। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
রাজশাহী আঞ্চলিক প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহী অঞ্চলে চলতি বছর কোরবানির চাহিদা রয়েছে ১০ লাখ ৫০ হাজার পশুর। এর বিপরীতে ৩৫ হাজার ছোট বড় খামারে গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ মিলে মজুত আছে ১২ লাখ পশু। চাহিদার চেয়ে প্রায় দেড় লাখ পশু বেশি রয়েছে এখানে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানী ঈদের আগে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলায় ছোট বড় প্রায় ৬৫টি পশুহাট বসে। এবার রাজশাহী ও আশপাশের এলাকাগুলো থেকে এসব হাটে প্রচুর দেশি গরু উঠছে। এর পাশাপাশি উঠছে ভারতীয় পশুও।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর এবং ওয়াহেদপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু-মহিষ আসছে। সরকারকে রাজস্ব দিয়ে এসব পশু রাজশাহীসহ আশপাশের হাটগুলোতে উঠছে। এছাড়া রাজশাহীর চর মাজারদিয়াড় সীমান্ত দিয়েও প্রতিদিন বহুসংখ্যক গরু দেশে ঢুকছে। এসব পশুর কারণে দাম নিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
গরু বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হাটে এবার হরেক জাতের ও নামের ভারতীয় গরু উঠেছে। দৃষ্টিনন্দন শিংওয়ালা হরিয়ানা গরু, মিরকাদিমের সাদা গরু, মোটাতাজা সিন্ধি গরু। এসব গরুগুলো দেখেই চিনতে পারছেন ক্রেতারা। বাহারি শিং দেখে যে কেউ বলে দিতে পারছেন এটা হরিয়ানার গরু। আর তুলনামূলক কম মোটাতাজা সাধারণ গরুগুলো কৃষকের বাড়িতে পালন করা।
রেজাউল ইসলাম নামে এক গরু বিক্রেতা বলেন, বন্যার কারণে মানুষ বাড়িতে গরু রাখতে পারছেন না। সামনে কোরবানী থাকায় ভালো দাম পাওয়ার আশায় তারা গরু হাটে তুলছেন। কিন্তু হাটে প্রচুর ভারতীয় পশুও উঠছে। এ জন্য দেশি পশুর দাম উঠছে না। তাই হতাশায় ভুগছেন খামারিরা।
হাটে বিক্রির জন্য তিনটি গরু এনেছিলেন জেলার মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ এলাকার কৃষক পাঞ্জাব আলী। তিনি বলেন, বন্যায় তাদের গ্রাম ১০ দিনেরও বেশি সময় ডুবে রয়েছে। বাড়িতে গরু-ছাগল রাখার মতো অবস্থা নেই। মাঠে চরণভূমিও নেই। তাই গরুগুলো হাটে তুলেছেন। কিন্তু ক্রেতারা তেমন দামই দিতে চাইছেন না।
সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, হাটে দেশি যে গরুর দাম ৫০ হাজার টাকা, সে রকম আকারের ভারতীয় গরু পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকায়। তাই ক্রেতাদের দেশি গরুর প্রতি ঝোঁক থাকলেও অনেকেই কিনছেন ভারতীয় গরু।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম