কক্সবাজারে মঙ্গলবার শেষ হলো সাত দিনব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল। এতে বঙ্গোপসাগরের জীবন্ত জীবাশ্ম নামে পরিচিত নীল রক্তের সামুদ্রিক প্রাণী ‘রাজ কাঁকড়া’ নিয়ে সুনীল অর্থনীতির স্বপ্ন দেখিয়েছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। রক্তের ঔষধি গুণের কারণে এই কাঁকড়া নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বে ছয়-সাত দশক আগেই গবেষণা শুরু হয়। তবে বাংলাদেশে এ বছর প্রথমবারের মতো গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কার্নিভালে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজ কাঁকড়ার নীল রক্ত মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ও ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক মূল্যবান। ঔষধি গুণের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারেও এর চাহিদা ব্যাপক।
বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে ‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’ প্রতিপাদ্যে বর্ণিল শোভাযাত্রাসহ উৎসবমুখর নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর শুরু হয় মেলাটি। মূলত কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এ উৎসবের আয়োজন করে।
মেলায় বিজ্ঞানীরা জানান, বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় এ পর্যন্ত দুই প্রজাতির রাজ কাঁকড়ার অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন তারা। এর একটি পাওয়া যায় বালুকাময় অঞ্চলে। আরেকটি পাওয়া যায় ম্যানগ্রোভ বনে।
তারা বলেন, কিছু কাঁকড়া সাগর থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে দলে দলে ডিম পাড়তে আসে উপকূলে। মূলত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে মার্চের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ে প্রচুর রাজ কাঁকড়া উপকূলে আসে। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, ৯০ শতাংশ মানুষ এই রাজ কাঁকড়া সম্পর্কে ভুল জানে। এই কাঁকড়ার গুরুত্ব কী, এটি আসলে হিংস্র কিনা, লেজে কোনো কাঁটা কিংবা বিষ আছে কিনা– এসব সাধারণ মানুষ জানে না।
বিজ্ঞানীরা বলেন, রাজ কাঁকড়া নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জেলেদের সচেতন করতে হবে। এই কাঁকড়াকে মরতে দেওয়া যাবে না, সংরক্ষণ করতে হবে। এটি প্রকৃতিতে টিকে থাকলে মানুষের জন্য ভালো। রাজ কাঁকড়া সংরক্ষণের বিষয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে।
সমুদ্র গবেষণা ইনিস্টিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ বলেন, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিওআরআই) ২০১৮ সাল থেকে সমুদ্র সম্পদ নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছে। এটি দেশের প্রথম ও একমাত্র সমুদ্রবিদ্যা বিষয়ক জাতীয় প্রতিষ্ঠান।
তিনি বলেন, পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট সামগ্রিক গবেষণা কার্যক্রম প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে। মেলায় আসা পর্যটকের জন্য সমুদ্রের অজানা রহস্য জানতে এবং বিজ্ঞানীদের গবেষণা সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে সীমিত পরিসরে গবেষণা যন্ত্রপাতি, নানাবিধ সামুদ্রিক নমুনা ও গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রদর্শন করা হয়। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে সমুদ্র স্বাক্ষরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে সমুদ্র সম্পদের ব্যবহার সম্পর্কে মানুষ জানতে পারবে। রূপকল্প অনুযায়ী ২০২৮ সালের মধ্যে বিওআরআই সুনীল অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, বিচ কার্নিভালের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, বিচ ম্যারাথন, বিচ বাইক র্যা্লি, ঘুড়ি উৎসব, সার্ফিং প্রদর্শনী, সার্কাস ও মেঘা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্যটকদের প্রাণ ছুঁয়েছে। তাদের ভ্রমণ আনন্দে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।