রাণীক্ষেত রোগ,লক্ষণ ও প্রতিরোধ

742

রাণীক্ষেত রোগঃ

মোরগ-মুরগির সংক্রামক রোগ গুলির মধ্যে রাণীক্ষেত একটি অতি মারাত্বক ভাইরাসজনিত রোগ। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই এ রোগ হয়ে থাকে।আমাদের দেশে মোরগ-মুরগির ব্যাপক মৃত্যুর জন্য এ রোগ টি বিশেষভাবে দায়ী।বছরের সব সময়ই এরোগ দেখা দিয়ে থাকে।তবে শীত এবং বসন্তকালে বা শীতের শুরুতে এ রোগের ভাইরাস মানুষের চোখের প্রদাহ বা কংজাংটিভাইটিস উপসর্গ সৃষ্টি করে থাকে।

এ রোগের জীবাণুর স্ট্রেইন ৩ টি

লেন্টোজেনিক স্ট্রেইন
মেসোজেনিক স্ট্রেইন
ভেলোজেনিক স্ট্রেইন
এই তিনটির মধ্যে ভেলোজেনিক খুবই মারাত্বক।আর অপেক্ষাকৃত দুর্বলটি হলো লেন্টোজেনিক স্ট্রেইন।সাদাহারনত লেন্টোজেনিক ও মেসোজেনিক স্ট্রেইন দ্বারা মোরগ-মুরগির রাণীক্ষেত রোগের টিকা প্রস্তুত করা হয়।

যেসকল প্রাণি রাণীক্ষেত রোগে আক্রান্ত হতে পারেঃ

সকল ধরনের মুরগি
কোয়েল
কবুতর
টার্কি
কিভাবে রাণীক্ষেত রোগ ছড়ায়?

রাণীক্ষেত রোগে আক্রান্ত বা জীবাণু বহনকারী কোনো মুরগি বাইরে থেকে খামারে প্রবেশ করলে।
আক্রান্ত খামার থেকে মানুষ বা পশুপাখির শরীরের মাধ্যমে,জামা-কাপড়,জুতা-স্যান্ডেল ও অন্যান্য আসবাবপত্রের মাধ্যমে।
বাতাসের ধূলিকণা,মশা-মাছির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
মুরগির টিকা ও অনেক সময় রোগের জীবাণু ছড়াতে বা বহন করতে পারে বা রোগ ছড়ায়।
রোগে আক্রান্ত মুরগির মৃত দেহ,খাদ্য,লিটার,বিষ্টা,পালকের মাধ্যমেও রাণীক্ষেত ছড়াতে পারে।
রাণীক্ষেত রগের লক্ষনঃ

মুরগির বয়স,স্বাস্থ্যগত অবস্থা,এবং রোগের জীবাণুর তীব্রতার উপরে রোগের লক্ষণ অতি তীব্র,মাঝারি তীব্র এবং মৃদু হতে পারে।

অতি তীব্র রোগের ক্ষেত্রে,

আক্রান্ত মুরগির প্রায় ১০০% মারা যেতে পারে।
রোগের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই হঠাত কক কক শব্দ করে উপরের দিকে লাফ দেয় এবং মারা যায়।
মাঝারি তীব্র রোগের ক্ষেত্রে,

মুরগির দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
শ্বাসতন্ত,স্নায়ুতন্ত এবং পরিপাক তন্তের নানাবিধ জটিলতা দেখা যায়।
মুরগি দিল থেকে পৃথক হয়ে যায়।
আড়ালে বসে চোখ বন্ধ করে ঝিমাতে থাকে।
খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয়।
শ্বাস কস্টের সাথে নাক মুখ দিয়ে ঘন শ্লেষ্মা বা তরল পদার্থ বের হয়।
ডানা বা পাক ছেড়ে দেয়।
স্নায়ুতন্তের জটিলতার ফলে ঘাড়,ডানা ও পা অবশ হয়ে যায় এবং ঘাড় অনেক সময় বেকে ইংরেজি “S” অক্ষরের মত হয়ে যায়।
কখনো কখনো সাদা চুনের মত পায়খানা করে।একারনে গ্রামে মানুষ এই রোগ কে “চুনাহাগা” রোগ বলে থাকে।
মুরগি ফিক ফিক করে আওয়াজ করে।
ডিম পাড়া মুরগির ক্ষেত্রে ডিমের আকার ও বর্ণ অস্বাভাবিক হয়ে যায়।কুসুম বিহীন ডিম পাড়ে এবং ডিমের উতপাদন কমে যায়।
মলদ্বারে ভিজা চুনের মত পায়খানা লেগে থাকে।
বাচ্চা মুরগির ক্ষেত্রে প্রায় ৯০-৯৫% বাচ্চা মারা যেতে পারে এবং বড় মুরগির ক্ষেত্রে প্রায় ৫০% এর অধিক মুরগি মারা যেতে পারে।
রাণীক্ষেত রোগ প্রতিরোধের উপায়ঃ

রোগমুক্ত হ্যাচারি থেকে উন্নতমানের বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে।
সচেতন খামারিকে অবশ্যই কঠোর বায়োসিকিউরিটি বা জৈব নিরাপত্তা মেনে চলতে হবে।
এরোগ থেকে রক্ষা পেতে সময়মত সঠিক পদ্ধতিতে রাণীক্ষেত রোগের টিকা বা ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৬অক্টোবর২০