রাবির কৃষি প্রকল্প লাভজনক হলেও ফেলে রেখেছে শতবিঘা আবাদী জমি

452

60000000nive-(1)
সালমান শাকিল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্প। ১৪-১৫ অর্থবছরে যেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় অর্ধকোটি টাকারও বেশি। গত ১ দশকে সর্বোচ্চ আয় হয় এ বছরই। বৃদ্ধি পেয়েছে তিনগুণ আয়। তবে প্রকল্পের শত বিঘা আবাদি জমি ফেলে রাখা হয়েছে। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয় যেমন একদিকে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

অন্যদিকে দিনে দিনে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে জমিগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমিগুলোর পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণের পর্যাপ্ত অভাব রয়েছে। তবে দায় এড়াতে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকার দাবি তুলছেন কর্তৃপক্ষ। বলছেন, সম্পূর্ণ জমি চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জমিগুলো লিজ দেয়ার চিন্তা করছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কৃষি প্রকল্পের আওতায় শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পূর্বপাশ থেকে শুরু করে পার্শ্ববর্তী বুধপাড়া। অন্যদিকে আইবিএ ইনস্টিটিউট থেকে রাজশাহী বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ২শ ৫০ বিঘার অধিক আবাদি জমি রয়েছে। এই জমির চাষ হচ্ছে প্রায় ১শ ৫০ বিঘা জমি। জমিগুলোতে ধান, আখ, ডালসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় পুকুর ডোবা ও বাগ বাগিচা অন্তর্ভুক্ত।

চাষ হওয়া জমি থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কৃষি প্রকল্পের আয় হয় ৭২ লাখ ৩৪ হাজার ৪৯০ টাকা। ব্যয় ২৯ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৪ টাকা। খরচ বাদে লাভের পরিমাণ প্রায় অর্ধকোটি টাকা। আর ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ব্যয় হয় ১৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। আয় হয় ২৪ লাখ ১২ হাজার টাকা। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায় ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল এই এক দশকে কৃষি প্রকল্পের আয় বেড়েছে ৩ গুণ। আর লাভ হয়েছে প্রায় ১০ গুণ টাকা।

তবে লাভজনক এই প্রকল্পে অতিরিক্ত শত বিঘা আবাদি জমি ফেলে রাখা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ আবাদি জমির প্রায় অর্ধেক। আবার ২ বছর ধরে চাষ হচ্ছে না এই জমিগুলো।

এদিকে যে জমিগুলো চাষ হচ্ছে তাতে আধুনিক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে না কৃষি প্রকল্প। লাঙল জোয়ালের চাষ পদ্ধতি এখনও চলমান। জমি চাষের জন্য ১২টি বলদই একমাত্র ভরসা। একটা ট্রাক্টর ক্রয় করলেও চালকের অভাবে অধিকাংশ সময় পড়ে থাকে। ভাড়া করা ট্রাক্টর দিয়ে জমিতে চাষ দিতে হয়। তাছাড়া চাষ উপযোগী ফসল আবাদ করাও হচ্ছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টরা। বলছেন, টাকার অংকে হিসাব করলে শ’বিঘার অধিক জমি পড়ে থাকায় আরও অর্ধকোটির বেশি টাকার সুবিধা পাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়।

একই সাথে শত বিঘা জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকা, নামমাত্র ফসল আবাদ ও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার হচ্ছে না বলেই প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় এই বিশাল অঙ্কের আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে দাবি তাদের।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের আয় ক্যাম্পাসের উন্নয়ন, মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তিসহ বহুবিধ উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এরই মধ্যে কৃষি প্রকল্পের অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহার সমাধী সংস্কার, মেডিক্যাল সেন্টারের ডিজিটালাইজেশন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর সংস্কারসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন উন্নয়ণ কাজ ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে।

কৃষি প্রকল্প থেকে বর্তমানের তুলনায় আরও লাভবান হওয়া সম্ভব জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ ইমতিয়াজ বলেন, “কৃষি প্রকল্পের আওতায় যে সকল জমি আছে তাতে সময়োপযোগী ফসল চাষ ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে চাষাবাদ, সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যা করলে কর্মচারিদের বেতন ভাতা দিয়ে এটিকে বড় ধরনের লাভজনক একটি প্রকল্প হিসাবে দাঁড় করানো সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, “মান্দাতা আমলে যেভাবে চাষ হচ্ছিল সেভাবেই রয়ে গেছে। পরিকল্পিত চাষ নেই।”

ক্ষোভ প্রকাশ করে অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, “কৃষি প্রকল্পে এমন লোকদের রাখা হয়েছে যাদের সাথে কৃষির কোনো সম্পর্ক নেই। কৃষি বিষয়ে ধারণা নেই তাদের বলে দাবি তার।”

যথাযথ পরিচর্যা, সুপরিকল্পিত ও আধুনিক চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে আরও বেশি লাভবান হওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

তবে পরিচর্যা ও আধুনিক চাষ পদ্ধতির ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষি প্রকল্প পরিচালক এমরান আলী কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, প্রায় পাঁচ বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কথা বলতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন।

তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য ও কৃষি প্রকল্পের সভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, “ফেলে রাখা হয়েছে এমনটা নয়। জমিগুলো চাষ উপযোগী তবে লোকবলের কারণে চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জমিগুলো লিজ দেয়া যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।”

আর আধুনিক চাষ পদ্ধতির বিষয়ে তিনি বলেন, “আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা কেন আধুনিক যন্ত্রপাতি বা চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করেননি সেটা তারাই ভালো জানেন।”

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তিকে দখলের হাত থেকে রক্ষা করতে ১৯৭৬ সালে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প নামে এ প্রকল্পটি চালু করে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম