বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ডিমও। দেশের বাজারে দুই সপ্তাহ থেকে ডিমের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এই সময়ে খামারি বা উত্পাদন পর্যায় থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা বাজারে একযোগে দাম বেড়েছে।
বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে মুরগির ডিম বিক্রি করা হচ্ছে ১৩০ টাকা ডজন দরে, যা সর্বোচ্চ রেকর্ড। এই ডিম চলতি মাসের ১০ তারিখে বিক্রি করা হয়েছে ১১০ টাকা ডজন দরে।
নিম্ন আয়ের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণের অন্যতম উৎস ডিম। ক্রেতারা বলছে, মাছ ও মাংসের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে নিত্যদিনের খাবারের তালিকায় জায়গা নিয়েছিল ডিম। কিন্তু সেই ডিমের দামও এখন আকাশচুম্বী। তাই কেউ ডিম কম কিনছে, কেউ বা ক্ষোভে ডিম কেনা বন্ধই রেখেছে। খামারিরা বলছেন, পশুখাদ্যের দাম গত এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে খামারিরা ক্ষতির মুখে আছেন। তাই ডিমের দাম বাড়ানো হয়েছে।
গতকাল সোমবার পোলট্রি খামারি, আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে এবং রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব পর্যায়েই ডিমের দাম বেড়েছে। তবে খামার থেকে খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজনে দামের পার্থক্য ২৫ টাকা, প্রতি হালিতে পার্থক্য ১০ টাকা।
গাজীপুরের শ্রীপুরের পোলট্রি খামারি ও উপজেলা পোলট্রি মালিক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল মতিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডিমের দাম বেড়েছে পশুখাদ্যের দাম বাড়ায়। গত বছর এই সময়ে প্রতি কেজি পশুখাদ্যের দাম ছিল ২৫ থেকে ২৮ টাকা, এখন তা ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এ কারণে আমাদের ডিম উত্পাদন খরচ অনেক বেড়েছে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘এখন আমার খামারে ছয় হাজার ডিম পাড়া মুরগি রয়েছে। এসব মুরগি থেকে দৈনিক সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার ডিম পাচ্ছি। আজ (গতকাল) প্রতিটি ডিম পাইকারি ৮ টাকা ৭০ পয়সা দরে বিক্রি করেছি। ’
আব্দুল মতিন জানালেন, পোলট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধির পর লোকসানের কারণে অনেকেই খামার করা ছেড়ে দিয়েছে। পাঁচ বছর আগে শ্রীপুর উপজেলায় পাঁচ হাজার খামার ছিল, কমতে কমতে বর্তমানে আছে মাত্র দেড় হাজার। তখন এই উপজেলায় দৈনিক ডিম উত্পাদন হতো ৩০ লাখ, খামার কমে যাওয়ায় এখন হচ্ছে মাত্র ১০ লাখ।
দাম বেড়ে যাওয়ায় কোনো কোনো ক্রেতা ডিম না কিনেই ফিরে যাচ্ছে বলে জানালেন ভাটারা নতুন বাজারের খুচরা ডিম ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন সর্বোচ্চ দামে ডিম কিনে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ডিম কিনতে এসে ১৩০ টাকা ডজন, ৪৫ টাকা হালি শুনেই অনেক ক্রেতা চলে যাচ্ছে। ফলে বিক্রি কমে গেছে। ’
পুরান ঢাকার হোসেনি দালান এলাকার ঈসমাইল স্টোরের খুচরা ব্যবসায়ী ঈসমাইল হোসেন বললেন, ‘ডিমের ডজন ১৩০ টাকার নিচে বিক্রি করলে লাভ হয় না। বাড়তি দামে কিনলে তো বাড়তি দামে বিক্রি করতে হবে। ’
নতুন বাজার থেকে ডিম কেনার সময় কথা হয় ক্রেতা আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মাছ-মাংসের দাম বাড়ার কারণে ডিম দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছিলাম। সেই ডিমের হালিও ৪৫ টাকা হয়ে গেছে। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষদের ডিম খাওয়াও ছাড়তে হবে। ’
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, পশুখাদ্য তৈরির ৮০ শতাংশ উপাদান আমদানি করে আনতে হয়। বিশ্ববাজারে এসব উপাদানের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও দাম বেড়েছে।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মনজুর মোরশেদ খান বলেন, ‘পশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধি, রানিক্ষেত রোগে মুরগি মারা যাওয়া এবং খামার বন্ধ হয়ে ডিমের উত্পাদন কমে যাওয়া—এই তিন কারণে বাজারে ডিমের দাম বাড়ছে। ’
ফার্মসএন্ডফার্মার/৩১মে ২০২২