রোপা পদ্ধতিতে আখ চাষ

674

86440375_1375524285953876_3357871132127526912_n

বীজতলা, পলি ব্যাগ বা অন্য কোন মাধ্যমে আখের চারা উৎপাদন করে তা নির্দিষ্ট দূরত্বে মূল জমিতে রোপণ করার পদ্ধতিকেই রোপা আখের চাষ বলে।

রোপা আখ চাষের সুবিধাঃ ১) বীজ কম লাগে, একর প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মন (২) জমিতে কোন ফাঁকা জায়গা থাকে না (৩) বেশি কুশি হয় (৪) মাড়াই যোগ্য আখ বেশি পাওয়া যায়, একর প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার। (৫) দ্রুত নতুন জাতের বীজ বর্ধন করা যায় (৬) আগাম আখ চাষ নিশ্চিত করা যায় (৭) মূল জমিতে ২ মাস সময় কম লাগে (৮) বেশি ফলন পাওয়া যায়।

জাতঃ উঁচু জমির জন্য ঈশ্বরদী-১৬, ঈশ্বরদী-২১, ঈশ্বরদী-২৬, ঈশ্বরদী-৩৩, ঈশ্বরদী-৩৫, ঈশ্বরদী-৩৬, ঈশ্বরদী-৩৭ ঈশ্বরদী-৩৮, ঈশ্বরদী-৩৯, ঈশ্বরদী-৪০ ঈশ্বরদী-৪৩, ঈশ্বরদী-৪৪ এবং মাঝারি উঁচু জমির জন্য ঈশ্বরদী-২০ ও ঈশ্বরদী-৩৪ জাত নির্বাচন করা উচিত। তবে বেলে দোআঁশ মাটিতে ঈশ্বরদী-৩৩ ও ঈশ্বরদী-৩৫ জাতে ভাল ফলন পাওয়া যায়।

বীজ তলায় চারা উৎপাদনের সময়ঃ সেপ্টেম্বর হতে অক্টোবর মাস হলো বীজ তলায় চারা উৎপাদনের উপযুক্ত সময়। বীজ তলায় সাইজ ঃ ২৪ ৪ ৬ মাপের ৮টি বীজ তলার চারা দিয়ে এক একর জমিতে রোপা আখের চাষ করা যায়। এজন্য প্রায় ২ শতক জমির প্রয়োজন হয় এবং বীজ লাগে ৩৫ থেকে ৪০মন।

বীজ তলায় সার ও কীটনাশকঃ প্রতিটি বীজ তলায় ২ মন পঁচা গোবর, ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম,টি,এস,পি ও ২৫০ গ্রাম এম, ও, পি সার এবং ২০০গ্রাম পাইরিবান-১৫ জি এর প্রয়োজন।

বীজ খ- তৈরীঃ বীজ আখ একটি কাঠ খন্ডের উপর রেখে ধারালো দা দিয়ে এক কোপে গোল করে ২ চোখ বিশিষ্ট বীজ খ- তৈরি করতে হবে।

বীজ শোধনঃ রোগ বালাইয়ের আক্রমণ থেকে আখ ফসলকে রক্ষা করার জন্য একটি মাটির চাড়িতে ২৫ লিটার পানিতে ২৫গ্রাম এমকোজিম মিশিয়ে তাতে বীজ খ-গুলো ৩০ মিনিট শোধন করতে হবে।

বীজ তলায় বীজ খ- স্থাপনঃ আখের চোখ পাশাপাশি রেখে বীজ খ- গুলো মাটির সমান্তরালে এমন ভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে প্রত্যেকটি বীজ খ-ের মাঝখানে কানি আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক থাকে। তারপর বীজ খ-গুলোর উপর বেড প্রতি ২০০গ্রাম পাইরিবান-১৫জি ছিটিয়ে আধা ইঞ্চি মাটি দিয়ে বীজ খ- গুলো ঢেকে দিতে হবে। এতে উঁই পোকার আক্রমণ হতে বীজখন্ড গুলো রক্ষা পাবে। তারপর বীজতলার উপর হালকা করে শুকনা আখের পাতা বিছিয়ে সামান্য মাটি ছিটিয়ে দিতে হবে।

চারার যত্নঃ (১) রসের অভাব হলে মাঝে মধ্যে বীজ তলায় সেচ দিতে হবে (২) বীজ তলায় রোগাক্রান্ত কোন চারা দেখা দিলে সাথে সাথে তা উঠিয়ে ফেলতে হবে (৩) চারাগুলি ৩/৪ পাতা হলে ৭ দিন পর পর চারার পাতার ২/৩ অংশ কেটে দিতে হবে।

চারা রোপণের সময়ঃ চারার বয়স ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ হলেই তা মূল জমিতে রোপণ করা উচিত। বীজ তলার চারা অবশ্যই ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে মূল জমিতে রোপণ করতে হবে।

চারা উঠানোঃ বীজ তলা থেকে চারা উঠানোর আগের দিন প্রতিটি বীজ তলায় সেচ দিতে হবে। এতে চারা উঠানো সহজ হয় ও চারা মৃত্যুর হার হ্রাস পায়। চারা উঠানোর পূর্বে চারার পাতার ২/৩ অংশ অবশ্যই কেটে দিতে হবে।

মূল জমিতে চারা রোপণঃ চারা রোপণের জন্য মূল জমিতে ৩ ফুট দূরে দূরে ৮ থেকে ৯ ইঞ্চি গভীর নালা কাটতে হবে। নালায় একর প্রতি ১১০ কেজি টিএসপি, ৬৭ কেজি জিপসাম ও ৩ কেজি দস্তা সার প্রয়োগ করে নালার মাটির সাথে কোদাল দিয়ে মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর সেচের পানি ছেড়ে নালার মাটি কাদাময় করে তাতে ১ ফুট দূরে দূরে আখের চারা লাগাতে হবে। প্রয়োজনে চারা রোপণের ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আর একটি সেচ দিতে হবে।

ফাঁকাস্থান পুরণঃ ফাঁকাস্থান পূরণের জন্য বীজ তলায় একর প্রতি এক থেকে দেড় হাজার চারা রেখে দিতে হবে। চারা রোপণের ১৫/২০ দিন পর কোথাও কোন চারা মারা গেলে ঐ চারা দিয়ে ফাঁকাস্থান পূরণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

উপরি সার ও কার্বোফুরান প্রয়োগঃ চারা রোপণের ২৫ থেকে ৩০ দিন পর একর প্রতি ৪৯ কেজি ইউরিয়া ও ৩২ কেজি এম ও পি সার চারার চারদিকে রিং পদ্ধতিতে প্রয়েগ করে চারার গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে। এ সময় সারের সাথে একর প্রতি ৮ কেজি কার্বোফুরান-৫ জি প্রয়োগ করলে বেশি ফলন পাওয়া যায়। বাকী ৯৬ কেজি ইউরিয়া ও ৬৪ কেজি এম ও পি সার দুই দফায় প্রয়োগ করতে হবে। ১ম দফা কুশি উৎপাদন পর্যায়ে একর প্রতি ৪৮ কেজি ইউরিয়া ও ৩২ কেজি এম ও পি সার এবং ১৬ কেজি কার্বোফুরা-৫জি প্রয়োগ করতে হবে। দ্বিতীয় দফায় কুশি উৎপাদন শেষ হলে একর প্রতি ৪৮ কেজি ইউরিয়া সার ও ৩২ কেজি এম ও পি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

আন্তঃপরিচর্যাঃ আগাছা দমন, সেচ প্রয়োগ, পোকা ও রোগ দমন, আখের গোড়ায় মাটি দেয়া, মরা পাতা ছড়ানো, কুশি ব্যবস্থাপনা ও আখ বাঁধা প্রভৃতি আন্তঃ পরিচর্যাগুলো সময় মত সম্পন্ন করতে হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৯ফেব্রু২০২০