ফেনীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে ডিম। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, ফেনীতে বাৎসরিক ডিমের চাহিদা রয়েছে ১৭ কোটি ১৪ লাখ। চাহিদার ভিত্তিতে ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৯ কোটি ৭৫ লাখ। বছরে ডিম উৎপাদন হয়েছে ২১ কোটি ৪ লাখ। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ফেনীতে প্রায় পৌনে ২ কোটি ডিম বেশি উৎপাদন হচ্ছে।
কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ী ও খামারিদের তথ্যমতে, ফেনীতে চাহিদার চেয়ে ডিম উৎপাদন বেশি হলেও বেশিরভাগ ডিম জেলার বাইরে বিক্রি হয়। ফলে ফেনীর চাহিদা মেটাতে ঢাকা থেকে ডিম আনতে হয়।
উৎপাদন বাড়লেও বাইরে থেকে ডিম আনার কারণ প্রসঙ্গে জেলা পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, ফেনীতে প্রায় দুই হাজার খামারে ডিম উৎপাদন করা হয়। এই জেলার ডিমের বাজার অনেক বিস্তৃত। ফেনীর ডিমের বাজার অনেক বড়। এখানকার খামারিদের উৎপাদিত ডিম খাগড়াছড়ি, চৌদ্দগ্রাম, নোয়াখালীসহ আশেপাশের জেলাতে যায়। বাইরে বিক্রি করায় নিজেদের চাহিদা মেটানোর জন্য ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে ডিম আনতে হয়।
ডিমের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লাবণী আক্তার বলেন, ডিম ৫০ টাকা হালি হওয়ার অন্যতম কারণ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। ডিম উৎপাদনে ক্ষেত্রে খাদ্যগুলো যেমন, সয়াবিন, ভুট্টাসহ আরও অনেক উপাদান বাইরে থেকে আনতে হয়। যার ফলে দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কারণে যতটা বাড়ার কথা তার থেকে বেশি বাড়ানো হয়েছে।
তবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, ব্যবসায়ীদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। ফেনীর ডিমের দর ঢাকার দরের ওপর নির্ভর করে। ঢাকা কেনা দাম অনুযায়ী ফেনীতে বিক্রি করা হয়।
ডিমের দাম কমার বিষয়ে তিনি বলেন, ডিমের দাম আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে কমে যাবে। ডিমের দাম এখন ১৩ টাকা হলেও অন্যান্য সবজির তুলনায় অনেক কম আছে। যখন বাজারে পুরোদমে সবজি আসবে তখন ডিমের দাম আরও কমে যাবে। দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিম উৎপাদনে খরচ অনেক বেড়েছে। বিদ্যুত, খাবার, কর্মচারীর খরচ বেড়েছে। যার ফলে উৎপাদনে খরচও অনেক বেশি, তাই দাম বেড়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খামার থেকে ১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে প্রতি পিস ডিম ক্রয় করতে হচ্ছে। সে অনুয়ায়ী গাড়ি ভাড়া, কর্মচারীর খরচ মিলিয়ে দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করতে হয়। ফেনীর যে সব খামারি আছে তারা ডিমের দর নির্ধারণ করে দেয়, সে অনুযায়ী আমরা ডিম বাজারে বিক্রি করি।
বাড়তি চাপ প্রসঙ্গে পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, বড় কোম্পানির কাছে ফেনীর স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জিম্মি। ফেনীতে ২ হাজার ডিম উৎপাদনকারী খামার থাকলেও ব্যবসায় লোকসানের ফলে অনেকে ব্যবসায় বন্ধ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদনকারী বড় কোম্পানিগুলো চাইলে মুরগির খাবারের দাম কমাতে পারে। এখন মুরগির খাদ্য বস্তাপ্রতি ২ হাজার ৯০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা যেটি ২ হাজার ৪০০ টাকা বিক্রি করে। পাশাপাশি মুরগির ওষুধের দাম যতটা বাড়ানো হয়েছে তার থেকেও কম রাখা সম্ভব। কোম্পানিগুলো কাছে খামারিরা এক প্রকার জিম্মি। ওষুধ ও খাদ্যের দাম কমলে ডিমের দামও নিয়ন্ত্রণে আসবে।
এ ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, খামারিরা যদি লাভবান হতেন তাহলে খামার বন্ধ হতো না। ফেনীতে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ ব্যবসায় করে লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে। কোম্পানিগুলো চাচ্ছে এ ব্যবসায় তাদের হাতে চলে যেতে। সেজন্য তারা স্থানীয় খামারিদের চাপে রাখে।