লাভজনক উপায়ে টার্কি পালন পদ্ধতি

830

maxresdefault (1)

লাভজনক উপায়ে টার্কি পালন পদ্ধতি আমরা অনেকেই জানি না। টার্কি সহনশীল জাতের, এরা যেকোনো পরিবেশে দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। সাধারণ খাবার খেতে এরা অভ্যস্ত, তবে উন্নত খাবার দিলে ডিম ও মাংসের পরিমাণ বেশি পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেই লাভজনক উপায়ে টার্কি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে-

লাভজনক উপায়ে টার্কি পালন পদ্ধতিঃ
টার্কি পালনের সুবিধাঃ

এদের মাংস উৎপাদন ক্ষমতা অনেক, টার্কি ব্রয়লার মুরগির থেকে দ্রুত বাড়ে ঝামেলাহীনভাবে দেশি মুরগির মতো পালন করা যায়। অল্প পুঁজিতে একটি আদর্শ টার্কির খামার করা যায়।
টার্কি পালনে তুলনামূলক খরচ কম, দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি ঘাস, লতা-পাতা খেতেও পছন্দ করে।
টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি, চর্বি কম,
অনেক এ চর্বির জন্য গরু কিংবা খাসির মাংস খেতে পারেন না। তাই গরু কিংবা খাসির মাংসের বিকল্প হতে পারে।
পালন পদ্ধতিঃ

আমরা টার্কি দুই ভাবে পালন করতে পারি-

১। মুক্ত চারণ পালন পদ্ধতি

২। নিবিড় পালন পদ্ধতি

মুক্ত চারণ পালন পদ্ধতিঃ

মুক্ত চারণ পদ্ধতিতে এক একর ঘেরা জমিতে ২৩০-২৬০টি পূর্ণ বয়স্ক টার্কি পালন করা যায়। রাতে পাখিপ্রতি ৫-৪ বর্গফুট হারে জায়গা লাগে। চরে খাওয়ার সময় তাদের শিকারি জীবজন্তুর হাত থেকে বাঁচাতে হবে। ছায়া ও শীতল পরিবেশ জোগানর জন্য খামারে গাছ রোপণ করতে হবে। চারণভূমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করতে হবে এতে পরজীবীর সংক্রমণ কম হয়।

সুবিধাঃ

টার্কি পাখি ঘাস, লতা-পাতা খেতেও পছন্দ করে, তাই খাবারের খরচ ৫০ শতাংশ কম হয়।
অল্প টাকা বিনিয়গে খরচের তুলনায় লাভ বেশি পাওয়া যায়।
মুক্ত চারণ ব্যবস্থায় খাবারঃ

টার্কি খুব ভালোভাবে আবর্জনা খুঁটে খায় বলে এরা কেঁচো, ছোট পোকামাকড়, শামুক, রান্নাঘরের বর্জ্য ও উঁইপোকা খেতে পারে, যাতে প্রচুর প্রোটিন আছে ও যা খাবারের খরচকে ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এছাড়া শিম জাতীয় পশুখাদ্য খাওয়ানো যায়। চরে বেড়ানো পাখিদের পায়ের দুর্বলতা ও খোঁড়া হওয়া আটকাতে খাবারে ঝিনুকের খোলা মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ২৫০ গ্রাম হিসাবে ক্যালসিয়াম দিতে হবে। খাবারের খরচ কম করার জন্য শাকসবজি কুঁচি কুঁচি করে কেটে দিতে হবে ফলে, খাবারের ১০ শতাংশ পরিমাণ পূরণ করা যেতে পারে।

নিবিড় পালন পদ্ধতিঃ

গরম অঞ্চলগুলোতে খামার করলে ঘরগুলো লম্বালম্বি পূর্ব থেকে পশ্চিমে রাখতে হবে। খোলা ঘরের প্রস্থ ৯ মিটারের বেশি হওয়া চলবে না। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত ঘরের উচ্চতা ২.৫ থেকে ৩.২ মিটারের মধ্যে থাকতে হবে। বৃষ্টির ছাঁট আটকাতে ঘরের চালা সামান্য কিছুটা বাড়িয়ে রাখতে হবে। ঘরের মেঝে সস্তা, টেকসই, নিরাপদ ও আর্দ্রতারোধক বস্তু যেমন কংক্রিটের হওয়া বাঞ্ছনীয়।

কম বয়সি এবং প্রাপ্ত বয়স্ক পাখির ঘরের মধ্যে অন্তত ৫০ থেকে ১০০ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং পাশাপাশি দুটি ঘরের মধ্যে অন্তত ২০ মিটার দূরত্ব থাকতে হবে। ডিপ লিটার পদ্ধতিতে টার্কি পালনের সাধারণ পরিচালনা ব্যবস্থা মুরগি পালনেরই মতো, তবে বড় আকারের পাখিটির জন্য যথাযথ বসবাস, ওয়াটারার ও ফিডারের জায়গার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

নিবিড় পালন ব্যবস্থায় খাদ্যঃ

নিবিড় পালন ব্যবস্থায় টার্কি মুরগিকে ম্যাশ ও পেলেট (ট্যাবলেট) দুইভাবেই খাবার দিতে হবে। মুরগির তুলনায় টার্কির শক্তি, প্রোটিন ও খনিজের প্রয়োজন বেশি। সেজন্য টার্কির খাবারে এগুলোর আধিক্য থাকতে হবে। খাবার মাটিতে না দিয়ে ফিডারে দিতে হবে। যেহেতু পুরুষ ও মাদির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শক্তির (এনার্জি) পরিমাণ আলাদা, তাই ভালো ফল পাওয়ার জন্য তাদের পৃথকভাবে পালন করতে হবে। টার্কিদের সব সময় অবিরাম পরিষ্কার পানির প্রয়োজন। গ্রীষ্মকালে ওয়াটারারের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হবে এবং আপেক্ষতৃক ঠাণ্ডা সময়ে খাবার দিতে হবে। পায়ের দুর্বলতা এড়াতে দিনে ৩০-৪০ গ্রাম হারে ঝিনুকের খোসার গুঁড়া দিতে হবে এবং খাবারে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হলে তা আস্তে আস্তে করতে হবে।

সবুজ খাদ্যঃ

নিবিড় পদ্ধতিতে ড্রাই ম্যাশ হিসাবে মোট খাদ্যের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সবুজ খাবার দেয়া যায়। সব বয়সের টার্কির জন্য টাটকা লুসার্ন প্রথম শ্রেণীর সবুজ খাদ্য। এছাড়া খাবারের খরচ কম করার জন্য ডেসম্যান্থাস ও স্টাইলো কুচি করে টার্কিদের খাওয়ান যেতে পারে।

টার্কি মুরগি দ্রুত বড় হয়ে যায় এবং ব্রয়লার মুরগির মতো খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। এগুলোর পালন মুরগির মতো খুব সহজ। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে টার্কি পালন-ব্যবসা করলে ভালো মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।

রোগবালাইঃ

টার্কি পাখির তেমন বড় কোনো রোগবালাই নেই। চিকেন পক্সের টিকা নিয়মিত দিলে এ রোগ এড়ানো সম্ভব। অতি বৃষ্টি বা বেশি শীতের সময় মাঝে মাঝে ঠান্ডা জনিত রোগ দেখা যায়, রেনামাইসিন জাতীয় ওষুধ দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে নিয়োমিত টিকা দিলে এসব রোগ থেকে সহজেই টার্কিকে রক্ষা করা যায়। অন্যান্য পাখির তুলনায় রোগবালাই কম এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে খামারে ঝুঁকি অনেক কমে যায়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৯ফেব্রু২০২০