লাভজনক হানিডিউ তরমুজ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা

854

83792690_1364095280430110_4834237913602457600_n

হানিডিউ তরমুজ

তরমুজ গ্রীষ্মকালীন একটি জনপ্রিয় ফল। গরমে তরমুজ দেহ ও মনে শুধু প্রশান্তিই আনে না এর পুষ্টি ও ভেষজগুণ রয়েছে অনেক। এখন দেশে এসেছে হানিডিউ তরমুজ। আকারে দেখতে স্বাভাবিক তরমুজের থেকে ছোট ও রং গাড়ো হলুদ। ভেতরটাও শরীরের রঙের প্রতিফলন। সম্প্রতি দেশে হলুদ বর্ণের এই তরমুজের আবাদ শুরু হয়েছে।

পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার মোঃ শরিফুল ইসলাম এই তরমুজ আবাদ করে চমক সৃষ্টি করেছেন। এছাড়াও দেশে আরও অনেক চাষিই এই তরমুজের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। হানিডিউ তরমুজের স্বাদ ও বর্ণের কারণে ইতোমধ্যে এর প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে ‍সারাদেশে।

হানিডিউ তরমুজ চাষ

জমি তৈরি

প্রয়োজনমতো চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। জমি তৈরির পর মাদা প্রস্তুত করতে হবে। মাদাতে সার প্রয়োগ করে হানিডিউ তরমুজের চারা লাগানো উচিত।

বীজ বপন সময় / উৎপাদন মৌসুম

বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আবহাওয়া হানিডিউ তরমুজ চাষের উপযোগী। বীজ বোনার জন্য ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম পক্ষ সর্বোত্তম।

বপন / রোপণ পদ্ধতি

সাধারণ তরমুজের বীজ মাদায় সরাসরি বপন পদ্ধতি প্রচলিত থাকলেও হানিডিউ তরমুজের চারা তৈরি করে মাদাতে রোপণ করা উত্তম।

বীজ বপন

সাধারণত প্রতি মাদায় ৪-৫টি হানিডিউ তরমুজের বীজ বপন করা হয়। বপনের ৮-১০ দিন আগে মাদা তৈরি করে মাটিতে সার মিশাতে হয়। দু মিটার দূরে দূরে সারি করে প্রতি সারিতে দু মিটার অন্তর মাদা করতে হয়। প্রতি মাদা ৫০ সেমি. প্রশস্ত ও ৩০ সেমি. গভীর হওয়া বাঞ্চনীয়। চারা গজানোর পর প্রতি মাদায় দুটি করে হানিডিউ তরমুজের চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে।

চারা রোপণ

বীজ বপণের চেয়ে হানিডিউ তরমুজ চাষের জন্য চারা রোপণ করা উত্তম। এতে বীজের অপচয় কম হয়। চারা তৈরির জন্য ছোট ছোট পলিথিনের ব্যাগে বালি ও পচা গোবর সার ভর্তি করে প্রতি ব্যাগে একটি করে বীজ বপন করা হয়। ৩০-৩৫ দিন বয়সের ৫-৬ পাতাবিশিষ্ট একটি চারা মাদায় রোপণ করা হয়।

বীজের পরিমাণ

প্রতি একরে ৩৫০-৪০০ গ্রাম হানিডিউ তরমুজের বীজের প্রয়োজন হয়।

সার প্রয়োগ

হানিডিউ তরমুজের জমিতে নিম্নোক্ত হারে সার প্রয়োগ করা উচিৎ-

সারঃ একর প্রতি:

মাদা তৈরি কালে দেয়
গোবর/কম্পোস্ট ৮ টন সব
টিএসপি ৪০ কেজি সব
মুক্তাপ্লাস ৫ কেজি সব
ম্যাগপ্লাস ৯-১০ কেজি সব
হেসালফ ৩ কেজি সব
ফুরাডান ১০-১২ কেজি সব
পরবর্তী পরিচর্যা হিসাবে মাদায় দেয়

১ম কিস্তি- (চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর)- ইউরিয়া- ৪০ কেজি- এমপি ৩২ কেজি

২য় কিস্তি- (প্রথম ফুল ফোটার সময়)- ইউরিয়া- ২৫ কেজি- এমপি ৩২ কেজি

৩য় কিস্তি- (ফল ধারণের সময়)- ইউরিয়া- ২৫ কেজি- এমপি ৩২ কেজি

৪র্থ কিস্তি- (ফল ধারণের ১৫-২০ দিন পর)- ইউরিয়া- ২৫ কেজি- এমপি ৩২ কেজি

বীজের অঙ্কুরোদগম

শীতকালে খুব ঠাণ্ডা থাকলে হানিডিউ তরমুজের বীজ ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে গোবরের মাদার ভেতরে কিংবা মাটির পাত্রে রক্ষিত বালির ভেতরে রেখে দিলে ২-৩ দিনের মধ্যে বীজ অঙ্কুরিত হয়। বীজের অঙ্কুর দেখা দিলেই বীজ তলায় অথবা মাদায় স্থানান্তর করা ভালো।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা

শুকনো মৌসুমে হানিডিউ তরমুজের ক্ষেতে সেচ দেয়া খুব প্রয়োজন। গাছের গোড়ায় যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রতিটি গাছে ৩-৪টির বেশি ফল রাখতে নেই। হানিডিউ তরমুজ গাছের শাখার মাঝামাঝি গিটে যে ফল হয় সেটি রাখতে হয়। চারটি শাখায় চারটি ফলই যথেষ্ট। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে ৩০টি পাতার জন্য মাত্র একটি ফল রাখা উচিত।

পরাগায়ন

সকালবেলা স্ত্রী ও পুরুষ ফুল ফোটার সাথে সাথে হানিডিউ তরমুজ গাছের স্ত্রী ফুলকে পুরুষ ফুল দিয়ে পরাগায়িত করে দিলে ফলন ভালো হয়।

পোকামাকড় ও রোগবালাই

হানিডিউ তরমুজ পাতার বিটল পোকা

প্রথম দিকে পোকাগুলোর সংখ্যা যখন কম থাকে তখন পোকা ডিম ও বাচ্চা ধরে নষ্ট করে ফেলতে হবে। পোকার সংখ্যা বেশি হলে রিপকর্ড ১০ইসি/ রিজেন্ট ৫০ এসসি ০১ মিলি/লিটার মাত্রায় অথবা মিপসিন ৭৫ ডব্লিউপি ২.৫গ্রাম/লিটার বা হেক্লেম ৫ এসজি ১০ গ্রাম/১০লিটার মাত্রায় যেকোন একটি ৫-৭ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।

হানিডিউ তরমুজের জাব পোকা

এ পোকা গাছের কচি কাণ্ড, ডগা ও পাতার রস শুষে খেয়ে ক্ষতি করে। এ পোকা দমনের জন্য হেমিডর অথবা প্রিমিডর (ইমিডাক্লোপ্রিড) ৭০ ডব্লিউজি ০২গ্রাম/১০লিটার অথবা নোভাস্টার (বাইফেনথ্রিন+এবামেকটিন) ৫৬ ইসি/টলস্টার ২.৫ ইসি ০২ মিলি/লিটার স্প্রে করতে হবে।

হানিডিউ তরমুজের ফল ছিদ্রকারী পোকা

স্ত্রী পোকা ফলের খোসার নিচে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে কীড়াগুলো বের হয়ে ফল খেয়ে নষ্ট করে ফেলে এবং ফলগুলো সাধারণত পচে যায়। এ পোকা দমনের জন্য রিপকর্ড/রিজেন্ট/হেক্লেম স্প্রে করতে হবে। ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/৩ফেব্রু২০২০