যশোরের বারীনগর সাতমাইল পাইকারি বাজারে প্রতি পিস ফুলকপির দাম ১২ থেকে ১৫ টাকা। ৯ কিলোমিটার দূরে যশোর শহরের খুচরা বাজারে একই কপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সাতমাইল থেকে সবজি কিনে যারা রাজধানীর কাওরান বাজারে বিক্রি করেন তারা প্রতি পিস ফুলকপির দাম পান ১৪ থেকে ১৬ টাকা। একই ফুলকপি মাত্র দুই কিলোমিটার দূরের হাতিরপুল বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে।
অথচ একই পাইকারি বাজার থেকে একই দামে ফুলকপি কিনে গোড়ানের সিপাহিবাগ বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছেন প্রতি পিস ২০ থেকে ২৫ টাকা।
ফুলকপির মতো প্রায় সব সবজিই বাজারভেদে অস্বাভাবিক মূল্য ব্যবধানে বিক্রি হলেও অনেকটাই নির্লিপ্ত বাজার পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। তাদের এই নীরবতার সুযোগে সবজির ‘গুড়’ গিলে খাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। গাধার খাটুনি খেটেও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের লাখ লাখ কৃষক। রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি কাটা হচ্ছে মফস্বলের ভোক্তাদের পকেটও। ভরা মওসুমেও সবজির গলাকাটা দাম নিয়ে জনমনে অস্বস্তি থাকলেও সব কিছু চোখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া সাধারণ মানুষের কিছুই করার নেই।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজির দামের ব্যাপারে নিয়মকানুনের কোনো বালাই নেই। পাইকারি বাজারের সাথে খুচরা বাজারের মিল নেই। মিল নেই এক বাজারের দামের সাথে অন্য বাজারের। এমনকি পাশের দোকানের দামের সাথেও অনেক সময় মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সকালে এক রকম দাম, বিকেলে অন্য রকম। যে যার মতো করে দাম হাঁকছেন, আদায় করছেন।
অপেক্ষাকৃত ধনী মানুষজন যে বাজার থেকে কেনাকাটা করেন সেখানে গলাকাটা দাম নেয়া হলেও দরিদ্র্য এলাকাগুলোয় সবজির দাম অনেকটাই সহনীয়। মূলত দোকান ভাড়া, কর্মচারী বেতন, জীবনযাত্রার মান, চাঁদাবাজির পরিমাণ প্রভৃতির ওপর নির্ভর করে খুচরাপর্যায়ে বাজারভেদে সবজির দাম কমবেশি হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
যদিও বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, একই পণ্য এক বাজারে পাঁচ টাকা, আরেক বাজারে ২০ টাকা, এটা শুধু যে ব্যবসায়ীদের খরচের ওপর নির্ভর করে হচ্ছে তা নয়। অনেকটাই খুশিমতো লাভ করার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্রেতা ও বাজার বিশ্লেষক মনে করছেন, দামের তারতম্য হলেও এসব পণ্য সবাইকেই কিনতে হয়। এই সুযোগে বাজারগুলোতে সব দোকানি মিলে একটি নির্দিষ্ট দাম ঠিক করে নেন। এখানে প্রকৃত লাভের চিন্তার চেয়ে অতিমুনাফার লোভ বেশি কাজ করে। এ কারণে ঢাকার ভেতরে ভোক্তারা অনেকটা জিম্মি হয়ে আছেন। অনেক ক্ষেত্রে সরবরাহ বাড়লে দাম কমার যে যুক্তি দেখানো হয় সেটাও এখানে খুব ধীরে এবং কম পরিমাণে কাজ করে।
রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কাওরান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাঁধাকপি ১২ থেকে ১৫ টাকা, লাউ ২০ থেকে ২৫ টাকা, শিমের কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, বেগুন ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং মুলা বিক্রি হচ্ছে ৭ থেকে ৮ টাকা কেজি দরে। সামান্য দূরত্বে বড়লোকের বাজার হিসেবে পরিচিত হাতিরপুল বাজারে প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি বেগুন ও শিম। ৭ টাকার মুলা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বিক্রি করতে দেখে অনেকে হতাশ হলেও বিক্রি কিন্তু কম হচ্ছে না। পাইকারি বাজার থেকে ২০ টাকায় কেনা লাউ ৬০ টাকায় বিক্রি করতেও দ্বিধা করছেন না এখানকার বিক্রেতারা। অথচ একই পণ্য নিম্নবিত্তের বাজার হিসেবে পরিচিত পাওয়া খিলগাঁও বউবাজার, গোড়ানবাজার, সিপাহিবাগ বাজার, মুগদা রেলওয়ে ফুটওভার ব্রিজসংলগ্ন ভ্যানের সারিতে বিক্রি হচ্ছে অর্ধেক দামে।
নিয়মানুযায়ী পচনশীল পণ্য পাইকারি দামের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করে খুচরা বাজারে বিক্রি করার কথা। কিন্তু সব পণ্যের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। সারা দেশের বাজার মনিটরিং করার দায়িত্ব জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের হলে সবজির দাম নিয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের তেমন মাথাব্যথা নেই। তাদের দাবি- প্রতিষ্ঠানটি সাধারণত দ্রুত পচনশীল নয় এমন পণ্যের মান, দাম ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে থাকে।
অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্করের ভাষায়, ‘‘দ্রুত পচনশীল পণ্যগুলো নিয়ে আসলে কাজ করার সুযোগ কম। এগুলো নিয়ে মনিটরিং করা যায় না। এগুলোর দাম চাহিদা ও সরবরাহের ওপরই নির্ভর করে। তবে অনেকেই অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করেন, এটা সত্য। আমরা আলোচনা করব, দেখি এ বিষয়ে মনিটরিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় কি না।
যশোর অফিস থেকে শেখ জালাল উদ্দিন জানান, সেখানকার কৃষকেরা সবজির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। বাজারে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়া ও খুচরা ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। ফলে উৎপাদক আর ভোক্তা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- পথেঘাটে চাঁদা আর পরিবহন খরচ দিয়ে তারাও লাভবান হতে পারছেন না। ফায়দা লুটছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
নিয়মানুযায়ী পচনশীল পণ্য পাইকারি দামের চেয়ে ২০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি দাম নেয়ার বিধান থাকলেও তা মানছেন না যশোরের খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা কোনো কোনো পণ্য ২০০ শতাংশ বেশি লাভে বিক্রি করছেন। ফুলকপি ১৫ টাকা দামে কৃষকদের কাছ থেকে কিনে মাত্র ৯ কিলোমিটার এসেই তা ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি করছেন। তিন টাকার মূলা বিক্রি করছেন ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা। ফলে দাম না পেয়ে কৃষকেরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ ও উৎপাদন হয় যশোরে। সবজির ভাণ্ডার খ্যাত যশোরের বারীনগর, হৈবতপুর, খাজুরা, চুড়ামনকাঠি ও আমবটতলাসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠ সবজির সমারোহ। এ বছর যশোর জেলায় প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়েছে। গড় হিসাবে প্রতি বছর যশোরে উৎপাদন হয় প্রায় তিন লাখ ২১ হাজার ৯০৩ টন সবজি।
যশোরে কাঁচা পণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার সাতমাইল। দেশের বিভিন্ন জেলাসহ যশোর শহরের খুচরা বিক্রেতাদের অনেকেই সবজি ক্রয় করতে আসেন সাতমাইল বাজারে। যশোর থেকে এ বাজারের দূরত্ব মাত্র ৯ কিলোমিটার। আশপাশের শত শত কৃষক প্রতিদিন এ বাজারে মাল উঠান। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, পাইকারি বাজার থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে এলেই প্রতি কেজি সবজি বিক্রি হয় কয়েক গুণ বেশি দামে।
সাতমাইল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ টাকা দরে। ৯ কিলোমিটার দূরে যশোর শহরে খুচরা বাজারে একই বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৫০ টাকায়। কৃষকের বিক্রি করা ৩ টাকা কেজির মুলা ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা দিয়ে। কেজিপ্রতি ১৩ টাকা যাচ্ছে ব্যবসায়ীর পকেটে। শিম প্রতি কেজি কৃষক বিক্রি করছেন ২২ থেকে ২৫ টাকা, খুচরা বাজারে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। গতকাল এ বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে।
কৃষকেরা এর অর্ধেক দামও পাচ্ছে না বলে জানান চুড়ামনকাঠির কৃষক খুবাইয়ের হোসেন। তিনি বলেন, কৃষকের উৎপাদিত সবজির সুবিধা যাচ্ছে ফড়িয়াদের পকেটে। ‘এত যে খোঁজখবর নেন, লেখালেখি করেন, ফল কি? আমরা মাঠে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করি লাভবান হন ব্যবসায়ীরা। আপনারা খামাখা জিজ্ঞাসা করে সময় নষ্ট করেন কেন’- সবজির দাম নিয়ে চাষিদের জিজ্ঞাসা করলেই আক্ষেপের সুরে তারা এসব কথা বলেন।
পণ্য সরবরাহের ঘাটতি আছে কি না জানতে চাইলে যশোরের পাইকারি ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, বর্ষার কারণে এবার কিছুটা কাঁচা সবজির উৎপাদন কম হয়েছে তবে ঘাটতি নেই। এমন অস্বাভাবিক মুনাফা করার কারণ জানতে চাইলে কাঁচাবাজারের বিক্রেতা হোসেন বলেন, সাতমাইল বাজার থেকে এখানে আনতে পরিবহন খরচ তেমন নেই- এ কথা সত্যি। কিন্তু আমাদের তো খরচ অনেক বেশি। দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, পানি-বিদ্যুতের অত্যধিক মূল্য এবং বিভিন্ন ধরনের চাঁদা পরিশোধ করতে গিয়ে পণ্য বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
সাতমাইল বাজার ঘুরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ভোলা, বরিশালে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যশোরের সাতমাইল থেকে সবজি নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে তাদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পুলিশ ও ফেরিতে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। যাকে বলে চাঁদা। না দিলে পচনশীল এ পণ্য পার করতে বিলম্ব করে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডুর সবজি ব্যবসায়ী জানেআলম জুলু বলেন, ২৫ বছর ধরে যশোরের সাতমাইল থেকে সবজি নিয়ে বিক্রি করেন তিনি। জুলু বলেন, চট্টগ্রামে সবজি পৌঁছতে প্রতি কোজিতে আট টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে রয়েছে গাড়ি ভাড়া, শ্রমিক খরচ। তবে ঘাটে টিকিটে এক হাজার ৪০০ বাদে আরো দুই হাজার ৫০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ঘুষ দিলে পরিবহনের সারিতে সবজির গাড়ি পার করতে দেয়। আর পথে-ঘাটে তো দুয়েক পয়সা দিতে হয়। সাতইমাইল বাজার থেকে সবজি নিয়ে ঢাকায় যান জহির মিয়া। তিনিও একই অভিযোগ করেন।
ভোলায় সবজি বিক্রি করেন মহসিন আলী। তিনি বলেন, ভোলার কালাবদর ফেরি পার হতে টিকিট এক হাজারের সাথে ৫০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। পুলিশকেও চাঁদা দিতে হয় বলে জানান তিনি।
বরিশালের সবজি ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, পরিবহন খরচ ছাড়াও পথে অনেক খরচ আছে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার যশোরের বাজারে প্রতি কেজি মুলা সাড়ে তিন টাকা, শিম ২২ টাকা, ফুলকপি ২০ টাকা, বেগুন ১৮ টাকা করে ক্রয় করেছি। বৃহস্পতিবার বরিশালের পাইকারি বাজারে বিক্রি করেছি প্রতি কেজি বেগুন ২২ টাকা, ফুলকপি ২৫ টাকা, শিম ২৫ টাকা।
তিনি জানান, এ পণ্য বরিশালে নিতে প্রতি কেজিতে প্রায় ছয় টাকা খরচ হয়েছে। খরচের তালিকা উল্লেখ করেই তিনি বলেন, পথের চাঁদাবাদ। নিট খরচ হচ্ছে গাড়িভাড়া ১৬ হাজার।
এ ছাড়া শ্রমিক (লোড-আনলোড, প্যাকিং) খাজনায় গুনতে হয় মণপ্রতি ২০ টাকা। তিনি বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা খুব বেশি লাভবান হচ্ছেন এ কথা ঠিক নয়। খুচরা বাজারে দাম বেশি হতে পারে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর যশোরের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখ বলেন, তথ্য আইনানুযায়ী ভোক্তার অধিকার আছে খুচরা ও পাইকারি বাজারে দামের পার্থক্য কত তা জানার। বাজারে প্রতিটি দোকানে মূল্যতালিকা থাকা আবশ্যক। কিন্তু বাজারে তা নেই।
তিনি বলেন, এসব পণ্যের কোনো দাম নির্ধারণ করা না থাকায় কিছু ব্যবসায়ী অধিক মূল্যে বিক্রি করছেন। আর মূল্য নির্ধারণ না থাকায় আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে খুচরা ও পাইকারি বাজারের দামের পার্থক্য খুব বেশি যাতে না হয় তার জন্য জেলা মার্কেটিং অফিসার প্রতিদিন বাজারে নজর রাখেন।
এ ব্যাপারে জেলা মার্কেটিং অফিসার মনোয়ার হোসেন বলেন, নিয়মানুযায়ী পচনশীল পণ্য পাইকারি দামের চেয়ে ২০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করে খুচরা বাজারে বিক্রি করার কথা। কিন্তু সব পণ্যের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না।
আমাদের বগুড়া অফিস থেকে আবুল কালাম আজাদ জানান, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে সবজির ভরা মওসুমেও বগুড়ার ভোক্তারা ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সবজি কিনতে পারছেন না। পাইকারি বাজারের দামের সাথে খুচরা বাজারের পার্থক্য বেশি হওয়ায় ভোক্তারা সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থার দুর্বলতাকে এ জন্য দায়ী করছেন খুচরা ক্রেতারা।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, শীতকালে বগুড়া জেলায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার হেক্টর জমি সবজি চাষের আওতায় এসেছে। বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর, গাবতলীসহ শিবগঞ্জ উপজেলায় সবজি সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে।
বগুড়ার মহাস্থান হাট উত্তরাঞ্চলের অন্যতম সবজি হাট। এখান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সবজি কেনাবেচা করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, মহাস্থানে সবজি কম দামে কিনলেও গাড়ি ভাড়া, রাস্তায় চাঁদাবাজির কারণে খরচ অনেক বেশি হয়ে যায়। বগুড়া শহরের বড় পাইকারি বাজার রাজাবাজার। এখানে পাইকারি দামে যে সবজি কেনা হয় তা প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয় অন্য খুচরা বাজারে।
জানা গেছে, মহাস্থান হাটে বর্তমানে মুলার দাম সবচেয়ে কম। এখানে প্রতি মণ মুলা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। তবে খুচরা বাজারে দাম কেজিতে ১৫-২০ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য সবজি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে- প্রতি কেজি ফুলকপি ১৮-২০ টাকা, খুচরা ৪০ টাকা; করলা পাইকারি ৩০ টাকা খুচরা ৪০ টাকা; শিম পাইকারি ৪০ টাকা, খুচরা ৫০-৬০ টাকা; বেগুন পাইকারি ৩০ টাকা, খুচরা ৪০ টাকা; পটোল পাইকারি ২৫-৩০ টাকা, খুচরা ৪০ টাকা দরে। অর্থাৎ প্রতিটি সবজি কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এ দামে খুশি চাষিরা। এ মুহূর্তে চাষের খরচ বাদ দিয়ে তাদের লাভ থাকছে ভালোই।
এ ব্যাপারে বগুড়ার শিবগঞ্জ মোকামতলা টেপাগাড়ী গ্রামের সবজি চাষি মিজানুর রহমান জানান, তিনি দেশি-বিদেশি মিলে ১৭ প্রকার শাকসবজি চাষ করেছেন। সবজির মধ্যে ফুলকপি, শিম হলো তীব্র শীতের সবজি, শীত যত বেশি হবে এগুলোর ফলন তত ভালো হবে। কিন্তু এবার শীতের তীব্রতা কম হওয়ায় কপি ও শিমের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
অনেক সময় স্থানীয় কৃষকদের পাইকারি ক্রেতাদের সিন্ডিকেটে পড়তে হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন স্থানীয় কৃষকেরা। বাজারভেদে সবজির দাম পরিবর্তন হয়ে থাকে। বেশির ভাগ সবজি উৎপাদন হয় বিন্নাবাইদ, চরবেলাব, বারৈচা, নারায়ণপুর এলাকায়। পাইকারি সবজি বিক্রয়ের জন্য সবচেয়ে বড় বাজার হলো জঙ্গী শিবপুর, বারৈচা, বেলাব, নারায়ণপুর, যোশর, শিবপুরবাজার। যেখান থেকে সবজি চলে যায় রাজধানীর কাওরান বাজারসহ অন্যান্য জেলা শহরে।
সবজি ব্যবসায়ী কামাল জানান, তিনি সবজি চাষের সাথে সাথে স্থানীয় বাজার থেকে পাইকারি সবজি ক্রয় করে অন্য ব্যবসায়ীদের সাথে মিলে ট্রাকভর্তি করে নোয়াখালীতে সবজি পাঠান। এ জন্য প্রতি ট্রাকের ভাড়া ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা দিতে হয়। পথে চার-পাঁচ জায়গায় পুলিশকে টাকা দিতে হয়। আরেকজন ব্যবসায়ী জানান, অনেক ব্যবসায়ী নরসিংদী থেকে ঢাকার কাওরান বাজারের আড়তে সবজি পাঠান।
বিএসএমআইএবি’র সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ড. গৌতম দেব
মাশরুম চাষে সফল মাগুরার প্রতিবন্ধী বাবুল
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন