নিয়াজ আহমেদ সিপন, লালমনিরহাট থেকে: পণ্যের যোগান কম হলে দাম বাড়ে-এটি অর্থনীতির এক সহজ সূত্র। কিন্তু লালমনিরহাটের সীমান্তবর্তী পশুর হাটে ঘটনাটি ঠিক উল্টো চিত্র। গরুর আমদানির সাথে দামও অনেক কম। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরুর চাহিদা কম তাই দামও কম।
গত মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) বিকেলে সদর উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা দুরাকুটি পশুহাটে আগত খামাড়ি ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর কোরবানির হাটে যে গরু লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তা বর্তমান বাজারে ৭০/৭৫ হাজার টাকায় ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। বাজারে গরুর খুব বেশি আমদানি নেই সীমান্তের পশু হাটে। সীমান্তের কঠোর নজরদারীর ফলে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ রয়েছে এমন খবরে বেপারীরা ভিড়ছেন না সীমান্তের হাটগুলোতে।
একই সঙ্গে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আগাম গরু কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে, লোকসান ঠেকাতে অধিক দামে গরু বিক্রির আশায় ঈদের আগাম বাজারে গরু তুলছেন না খামাড়ি ও কৃষকরা। এসব কারণে লালমনিরহাটে এবারে গরুর বাজার খুবই সস্তা বলে দাবি করছেন তারা।
খামাড়িরা জানান, দফায় দফায় বাড়ছে গো-খাদ্যের দাম। ভূষির বাজার প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ৮শ টাকার ভূষির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১২শ ৫০ টাকায়। খড় মেলানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কাঁচা ঘাস সব খামাড়ির ভাগ্যে জোটে না। ফলে গরুর ক্ষুদ্র ও মাঝাড়ি খামাড়িরা গরু নিয়ে পড়েছে অনেকটাই বিপাকে।
গত কয়েক মাসে খাদ্যের ব্যয় বিবেচনায় রেখে বর্তমান বাজারে তুলছেন না তাদের গরু। এছাড়াও স্থানীয় ক্রেতাহীন বাজারে চাহিদা কম। ঈদের দু’এক সপ্তাহ আগে স্থানীয় ক্রেতারা কোরবানির পশুর জন্য বাজারে ভিড়লে চাহিদা অনুযায়ী গরুর দামও বৃদ্ধি পাবে। সেই আশায় এখন বাজারে তুলছেন না তাদের খামাড়ের গরু ছাগল।
এ ছাড়াও বাহিরের বড় বড় ব্যবসায়ীরা বিগত বছরের তুলনায় আগাম গরু কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাদের দাবি গরুর দাম কিছুটা কম হলেও ঈদের বাজার ধরতে এখনও অনেক সময় বাকি রয়েছে। ঈদ পর্যন্ত গরু মহিষকে খাওয়াতে অনেক খরচ। বিশেষ করে গরুর প্রধান খাদ্য খড় দুষ্প্রাপ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে। একটি বয়স্ক গরুকে দৈনিক ৮০/৯০ টাকার খড় খাওয়াতে হয়। ঈদের বাজার ধরা পর্যন্ত খাদ্যের খরচ মিটিয়ে লাভ করা কষ্টকর হবে। তাই ব্যবসায়ীরা আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
ক্ষুদ্র খামাড়ি আলম মিয়া, মোছাদ্দেক হোসেন ও আব্দুস সালাম জানান, খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরু পালনে খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু সেই অনুযায়ী বাড়েনি গরুর দাম। এই বাজারে গরু বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে। খাদ্যের দাম বাড়ায় বড় বড় ব্যবসায়ীরা আগাম বাজারে গরু কিনছেন না। তবে ঈদের দু’এক সপ্তাহ আগে স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি বড় বড় ব্যবসায়ীরা বাজারে ভিড়লে গরুর দাম বৃদ্ধি পেলে তখন বাজারে তুলবেন তাদের গরু ছাগল।
গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্গাচাষি মোকলেছার রহমান অন্যের কাছে বর্গা নেয়া গরুটি বিক্রি করতে দুরাকুটি হাটে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু দাম কম বলায় আবার ফিরে নিয়ে যান। তিনি জানান, মুনাফা তো দুরের কথা। যে দাম বলে তাতে খাদ্যের খরচ উঠছে না। ঋণ করে হলেও ঈদ পর্যন্ত রাখতে হবে। ঈদের বাজারে চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে তখন লোকসানের ঝাঁকি থাকবে না বলেও দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী এরশাদ ও ইছাহাক আলী জানান, খাদ্যের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে গরুর আমদানির সাথে দামও কম। গত বছরের লাখ টাকার গরু বর্তমান বাজারে ৭০ হাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তবে এ গরু ঈদ পর্যন্ত রাখতে খাদ্যে ব্যয় হবে ২০/২৫ হাজার টাকা। তাই আগাম বাজারে চাহিদাও কমে গেছে এ বছর। বিগত বছর গুলোতে এমন সময় সারাদেশের বড় বড় ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বাড়ত এসব হাটে। তারা গরু কিনে ট্রাকে ভড়ে নিয়ে যেত সারা দেশে। কিন্তু এ বছর খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীরা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে চাহিদা কমে যাওয়ায় দামও কমে এসেছে।
কুমিল্লা লাকসাম থেকে লালমনিরহাটের দুরাকুটি হাটে আসা গরু বেপারী সুরুজ মিয়া জানান, প্রতি বছর সীমান্তের এসব পশুর হাট থেকে আগাম গরু কিনে খামাড়ে রেখে সারা দেশের ঈদের বড় বড় কোরবানির হাটে বিক্রি করেন তিনি। কিন্তু এবার গো-খাদ্যের খরচ বেড়ে যাওয়ায় গরু কেনার সাহস করতে পারছেন না। গত বছরের তুলনায় দাম অনেকটা কম হলেও ঈদ পর্যন্ত গরু রাখলে খরচ বেড়ে যাবে কিন্তু সে অনুযায়ী গরুর মুল্য বৃদ্ধির আশংকা কম বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন