নিয়াজ আহমেদ সিপন, লালমনিরহাট থেকে: এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে দ্বিগুণ হয়েছে বেগুনের গুণ। প্রতিমণ বেগুন ক্ষেতেই বিক্রি হচ্ছে এক হাজার সাতশ টাকায়। গুণ বাড়ায় বড্ড খুশি লালমনিরহাটের বেগুন চাষিরা।
গেল সপ্তাহে প্রতি মন বেগুন বিক্রি হয়েছে আটশত থেকে এক হাজার টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার সাত শত টাকা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বাম্পার ফলনের সাথে চাহিদা ও দাম বৃদ্ধিতে বেশ লাভবান হচ্ছেন বেগুন চাষিরা। কৃষকরা বিগত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছেন এ বছর।
লালমনিরহাটের সবজি এলাকা বলে খ্যাত আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রাম। এ গ্রামে মাঠের পর মাঠ সবজি ক্ষেত। গত দুই বছর টানা বৃষ্টির কারণে অকালে গাছ মরে যাওয়ায় বেগুনে কিছুটা লোকসান গুনতে হলেও এ বছর লোকসান পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
বড় কমলাবাড়ি গ্রামের বেগুন চাষি আব্দুল গনি জানান, গত বছর দুই দোন জমিতে বেগুন চাষ করেছিলেন। কিন্ত ঘন বৃষ্টিতে গাছ মরে যাওয়ায় তেমনটা লাভবান হন নি। এ বছর ৪০/৪৫ হাজার টাকা খরচে মাত্র এক একার জমিতে বেগুন চাষ করেন। প্রতি সপ্তাহে ২০/২৫ মণ বেগুন বিক্রি করছেন তিনি। বর্তমানে ক্ষেতেই বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১৫০০-১৭০০ টাকা দরে। এতে তার প্রতি সপ্তাহে ২৫/৩০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে বেগুন বিক্রি থেকে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে লক্ষাধিক টাকার বেগুন বিক্রির আশা তার।
ভেলাবাড়ি হাজিগঞ্জ এলাকার চাষি দেলোয়ার মাস্টার জানান, পানি জমে না এমন উঁচু জমিতে বেগুনের চারা রোপন করতে হয়। এরপর সার কীটনাশক ও পরিচর্যা করলে আগাম বেগুনে লাভবান হওয়া যায়। বাজারে বেগুনের চাহিদা থাকায় বেশ মুনাফা আসছে এ বছর। এ বছর চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রিতে যেমন ঝামেলা নেই। অনুরুপ ভাবে মুনাফাও অনেক বেশি। এলাকার ব্যাপারীরা ক্ষেত থেকে বেগুন কিনে সারা দেশে বিক্র করছেন। বেগুন চাষকে কেন্দ্র করে দিনমজুর কৃষি শ্রমিকরাও পড়েছেন কাজের ব্যস্থতায়।
স্থানীয় ব্যাপারীরা সারা দিন গ্রামে গ্রামে বেগুন কিনে ট্রাকে ভরিয়ে রাতে পাঠিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। পরদিন সকালে টাটকা সবজি বিক্রি করে ট্রাকেই টাকা পাঠাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
বেপারী নাসির উদ্দিন জানান, সারা দিন ক্ষেত থেকে বেগুন কিনে ট্রাকে ভরে রাতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পাঠান। পারদিন সকালে বেগুন বিক্রি হলে ট্রাক চালকের মাধ্যমেই চলে আসে টাকা। কোন ঝামেলা ছাড়াই কয়েক বছর ধরে চলছে তার এ ব্যবসা।
মূলত এ বেগুন চাষের মাধ্যেমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি আয় বেড়েছে এ জনপদের। সবজি চাষে ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন অনেকেই। কিছুদিন আগেও যাদের পেটের ভাত নিয়ে চিন্তা ছিল তারাও এখন বাড়ি গাড়ির মালিক। পাল্টে গেছে জীবন যাত্রার মান। বেগুনের গুণ বাড়ায় হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানান, এ বছর আগাম জাতের ১১০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়েছে। মৌসুম চলমান থাকায় রোপন চলবে এপ্রিল পর্যন্ত। গত বছর এ জেলার এক হাজার ৪৭০ হেক্টর জমি থেকে ২৬ হাজার ৪৬০ মে. টন বেগুন উৎপাদন হয়েছে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিদু ভূষণ জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর আগাম জাতের বেগুনে বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকায় বেশ মুনাফা পাচ্ছেন জেলার বেগুন চাষিরা।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন