লালমাইয়ের পাহাড়চূড়ায় বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের উদ্যান

518

comilla-forest6000
তৈয়বুর রহমান সোহেল, কুমিল্লা থেকে: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের- ‘হলুদ গাঁদার ফুল রাঙা পলাশ ফুল এনে দে এনে নইলে/ বাঁধবো না বাঁধবো না চুল….।’ প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা-বাঁইচির ঝোপ শুধু-শাঁইবাবলার ঝাড়-আর আম হিজলের বন/ কোথাও অর্জুন গাছ-তাহার সমস্ত ছায়া এখানে টেনে নিয়ে. ..’। গান ও কাব্যে উল্লেখিত ফুল ও বৃক্ষের অধিকাংশই বাংলাদেশে এখন বিলুপ্তপ্রায়। মাঝেমাঝে বাংলাদেশের কিছু কিছু অঞ্চলে এদের গুটিকয়েকের দেখা মিললেও একসাথে এত বিরল প্রজাতির বৃক্ষের সমাহার আর কোথাও চোখে পড়ে না।

বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসা এতগুলো বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণ করছে সামাজিক বনবিভাগ। সেই সাথে নেয়া হয়েছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ব্যবস্থাও। বিলুপ্তপ্রায় বিরল উদ্ভিদ রাধাচূড়া, নাগেশ্বর, আগার, নাগলিঙ্গম, কাঞ্চন, অশ্বথ, চন্দন, রক্তচন্দন, চালমুগরা, লোহাকাঠ, চাপালিশ, ধূপ, বাবলা, হরিতকি, বহেরা, হিজল, কনক, তমাল, অশোক, সিভিট, উড়ি আম, বন পেয়ারা, অর্জুন, মহুয়া, তেলশুর, পুঁটিজাম, বাঁশপাতা, কুম্ভি, পিতরাজ, পারুল, জারুল, চম্পা, টগর, বেলি, চিকরাশি, হরিয়ান, অর্জুন, লটকন, ফেন্স, বোটলব্রাশ, বাসক, রঙ্গন, করমচা, সোনালু, বট ও কৃষ্ণচূড়ার সমাহার রয়েছে এ উদ্যানে।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সালমানপুর মৌজায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে লালমাই পাহাড়ের ওপর অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে এ প্রকল্প। প্রকল্পের নামকরণ করা হয়েছে ‘লালমাই এলাকায় উদ্ভিদ উদ্যান স্থাপন প্রকল্প’।

পাহাড়ের মাথায় ইট বিছানো পথে সবুজের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে ঝরে যাবে সব ক্লান্তি। সবুজ প্রকৃতির মাঝে পাখির কিচির মিচির শব্দ শুনে আর বাড়ি ফিরতে মন চাইবে না।

comilla60000

কুমিল্লার সামাজিক বন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জনা যায়, ১৬.৪৫ একর জায়গার ওপর ২০১৫-১৬ সালে প্রকল্পের কাজটি হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে পার্ক অফিস, বাউন্ডারি ওয়াল, ক্যাকটাস হাউজ ও অর্কিড হাউজ। দর্শনার্থীদের বসার জন্য করা হয়েছে আরসিসি বেঞ্চ। নির্মাণ করা হয়েছে শৌচাগার। বিরল প্রজাতির ৭৮ প্রজাতির ১,৭৫০টি বৃক্ষ রোপনের পাশাপাশি ক্যাকটাস হাউজ ও অর্কিড হাউজের জন্য আনা হয়েছে ২৬০টি করে অর্কিড ও ক্যাকটাসের চারা। এছাড়া পুরো উদ্যান এলাকা জুড়ে রয়েছে নানা রকম বৃক্ষের সমাহার।

দেশি প্রজাতি ও বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের উপযোগী ঔষধি প্রজাতির বৃক্ষরোপন, শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করা এ বনায়নের প্রধান উদ্দেশ্য।

কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান জানান, অনেক সময় ও শ্রম দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও উদ্যান থেকে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে।
কুমিল্লা নগরীর পাশের এ উদ্যান নতুন প্রজন্মকে বিরল প্রজাতির গাছ সম্পর্কে ধারণা নেয়ার সুযোগ করে দেবে। আশা করছি ২০১৮ সালের প্রথম দিকে উদ্যানটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারবো।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম