তেঁতুল খেতে কে না পছন্দ করে? ছোট বড় সবার, তেঁতুল দেখলেই জিভে জল চলে আসে। আচ্ছা, কখনো কি দেখেছেন এমন এক তেঁতুল যার রং লাল? সত্যিই অবাক করার মতোই লাল রঙা তেঁতুল। আমরা সাধারণত তেঁতুলের ভেতরের অংশ সাদা রঙেরই দেখে থাকি।
লাল রঙা তেঁতুলের বাইরের দিকটাও সাধারণ তেঁতুলের মতোই। তবে তা ভাঙলেই লাল টকটকে তেঁতুল। বিষ্ময়কর এই তেঁতুল নিয়ে মানুষের জল্পনা কল্পনারও শেষ নেই। আর তাইতো একদল মানুষ এই সিঁদুর রঙা তেঁতুলের অলৌকিক গুণ রয়েছে বলে ভাবে। তাদের ধারণা, এই তেঁতুল পরম সৌভাগ্যের প্রতীক। মনোবাসনা পূরণে এই তেঁতুল কার্যকরী!
কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার হিজলাবট গ্রামেই দেখা মিলবে লাল তেঁতুল গাছের। এলাকাবাসীর মতে, গাছটির বয়স ২০০ বছর কিংবা তারও বেশি। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন তেঁতুল গাছ এটি। যার তেতুঁলের রং টকটকে লাল। এই লাল রঙা তেঁতুল গাছটি দেখলেও অবাক হতে হয়!
বটগাছের মতো বিশালাকার এই তেঁতুলগাছ। আকারে প্রায় ২৫ফুট ব্যাসার্ধ ও লম্বায় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ ফুট। এই গাছের জন্ম কবে তাও কারো জানা নেই। স্থানীয়দের মতে, সেখানে রয়েছে নীলকুঠি। ধারণা করা হয়, এই গাছটির বয়স নীলকুঠির চেয়েও বেশি। সেখানে তিনটি গাছ রয়েছে। তার মধ্যে একটি গাছের তেঁতুলের রং ভিতরে সাদার বদলে লাল।
এই লাল তেঁতুল গাছ আমাদের দেশে দুর্লভ। ওই গ্রামের স্থানীয় বয়ষ্করাও ছোটবেলা থেকেই এই গাছগুলোকে একই রকমের দেখে আসছেন। তাদের মতে, এই গাছগুলোর বয়স ২০০ বছর বা তারও বেশি। ঝড়ে ভেঙ্গে গিয়ে বড় গাছটি এখন ছোট হয়ে গিয়েছে আগে আরো বেশি বড় ছিল।
অবাক করা বিষয় হলো, স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা লাল তেঁতুল গাছকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে। তারা এর পূজা করে। জানা যায়, অনেকেই এই গাছের তেঁতুল মনোবাসনা পূরণ হবার জন্য খায়। রহস্যজনক বিষয় হলেও সত্যিই যে, যদি কেউ এই গাছের ক্ষতি করে তার নাকি বিপদ হয়।
তাই এলাকাবাসী এই রক্তলাল তেঁতুল গাছের ডাল কাটতে এমনকি পাত ছিঁড়তেও ভয় পায়। অনিষ্ঠ হয় তাই কেউ এই গাছের ডাল কাটতেও ভয় পায়। আরো অবাক করার বিষয় হলো, এই চারাও অন্য কোথায় ফলে না। কোথা থেকে এই তেঁতুল গাছ এসেছে তা কারো জানা নেই। তবে বাংলাদেশে বোধ হয় এমন লাল রঙা তেঁতুল গাছ একটিও নেই। ভারতে এমনই একটি গাছ রয়েছে। যেটা পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাট এলাকায়।
সেখানকার স্থানীয়দের মতে, ওই লাল তেঁতুল গাছটির বয়স প্রায় ৫০০ বছর। ওই গাছটিকেও অলৌকিক ভাবা হয়। গাছটির সঙ্গে জড়িত রয়েছে একজন মুসলিম পীরের কাহিনী। সেই পীর নাকি এই লাল রঙা তেঁতুল দিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করতেন। শুধু তাই নয় কবিরাজ হিসেবে পানি, তেল পড়া দিয়ে তিনি নাকি বহু মানুষের রোগ নিরাময় করেছিলেন।
সেখানকার আশপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে এই পীরবাবার কথা। শুধু মুসলিম নয়, দূরদূরান্ত থেকে নানা ধর্মের মানুষ আসতে শুরু করেন তার কাছে। পীরবাবার মৃত্যু হলে তেঁতুল গাছের নীচেই তাকে সমাহিত করা হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এরপর থেকে সেই গাছে লাল তেঁতুলের ফলন শুরু হয়।
এরপর থেকে সেখানকার নাম দেয়া হয় আজগুবি তলা। লাল তেঁতুল খেতেও নাকি চমৎকার। এর টক-মিষ্টি স্বাদ অন্যান্য তেঁতুলের থেকেও শতগুণ ভালো। এমনটাই দাবি এলাকাবাসীর। ভারতের ওই লাল তেঁতুল গাছ থেকে যদি তেঁতুল মাটিতে পড়ে তবেই নাকি তারা সেটি খায়।
গাছ থেকে পাড়ার অনুমতি নেই কারো। এই নিয়ম মেনে চলেন এলাকার সবাই। প্রতি শুক্রবার দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা তীর্থযাত্রীরা মনোবাসনা পূরণে কেউ ঢিল বাঁধেন, কেউ গরুর দুধ দিয়ে পুজা দেন। ধারণা করা হয়, নদীয়া থেকে সেই পীরের কোনো মুরীদের মাধ্যমেই খোকসার হিজলাবটের লাল তেঁতুলের আগমন ঘটে।
এই লাল তেঁতুলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা খুবই ভালো। কারণ খাদ্য ও ওষুধ শিল্পে এই লাল বায়ো কালারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। খাবার প্রক্রিয়াজাতকরণে ও কনফেকশনারিতেও এই লাল রংটি ফুড কালার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, এর বীজ থেকে তৈরি তেল টেক্সটাইল ও পেইন্ট শিল্পে বেশ কার্যকরী। এই গাছের চাষে বেশি পানিরও প্রয়োজন হয় না। খরাপ্রবণ অঞ্চলেও এই লাল তেঁতুল গাছের ভালো ফলন হয়ে থাকে। এদিকে বিজ্ঞানীরা অবশ্য লাল তেঁতুলের অলৌকিকতা মেনে নেননি।
ভারতের কৃষি বিজ্ঞানী জয়ন্ত তরফদার জানিয়েছেন, তেঁতুল লাল হওয়ার কারণ এর ভিতরে থাকা বিশেষ লাল রঞ্জক বা পিগমেন্ট। ঠিক যেমনটা বীটরুটের মধ্যে থাকে। তাই এই গাছের তেঁতুল ফল লাল রঙের হয়ে থাকে। তবুও এই বিষয়ে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
ডেইলি বাংলাদেশ।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৫অক্টোবর২০