লেবু চাষে ভাগ্য বদলাবেন যেভাবে

1533

লেবু চাষে আছে ব্যাপক সম্ভাবনা।তাই নিজের আবাদী জমিতে বানিজ্যিক ভাবে লেবু চাষ করে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরন করার পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব।এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশ হবে স্বাবলম্বী।

পুষ্টির চাহিদা পূরন এবং খাদ্য তালিকায় বৈচিত্রতা নিয়ে আসার জন্য আমাদের দেশের নানান ধরনের শাকসবজি ও ফলমূলের চাষ করা হয়।এসব ফলমূলের মধ্যে লেবু অন্যতম।লেবু একটি টক জাতীয় জনপ্রিয় ফল।সারা দেশে সমানভাবে সমাদৃত এই ফলটি।যে কোন খাবারের অনুষ্টানে লেবু ছাড়া যেন চলেই না।লেবু সালাদে ব্যবহার,সরবত তৈরি করা সহ নানান খাবারে টক স্বাদ আনতে লেবু ব্যবহার করা হয়।বাংলাদেশের সব জেলাতেই কম বেশি লেবুর চাষ হয়ে থাকে।সারা বছরেই লেবুর চাহিদা থাকে।তাই বারো মাসী লেবু চাষ করে নিজে স্বাবলম্বী হতে পারেন।বানিজ্যিক ভাবে লেবু চাষ করতে হলে খুব বেশি মূল ধনের প্রয়োজন নেই।তবে নিজের আবাদী জমি হলে ভালো।শুধু নিজের পরিবারের চাহিদা মিটানোর জন্য উঠোন কিংবা আশে পাশের পরিত্যক্ত জায়গায় শুরু করা যায়।বড় পরিসরে শুরু করতে চাইলে নিজের আবাদী জমিতে অথবা জমি লিজ নিয়ে শুরু করতে হবে।বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই লেবু চাষের জন্য উপযোগী।

লেবুর জাত নির্বাচন–
আমাদের দেশে অনেকে জাতের লেবু আছে।তবে তাঁর মধ্যে কিছু জাতের লেবু আছে অনেক উন্নত জাতের।এর মধ্যে আছে বাউ কাগজি লেবু-১,বাউ লেবু-২ (সেন্টেড এলাচি) এবং বাউ লেবু-৩ (সেমি সিডলেস)অন্যতম।

উপযুক্ত জমি ও মাটি–
হালকা দো-আঁশ ও নিকাশ সম্পন্ন মধ্যম অম্লীয় মাটিতে লেবু ভাল হয়।

লেবু চাষ বা রোপনের সঠিক সময়–
বছরের যেকোন লেবু চাষ করা যায়।তবে লেবু চাষের জন্য সর্বোত্তম সময় হল বৈশাখ মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত। এই সময় লেবু গাছ লাগালে অনেক ভালো ফলন পাওয়া যায়।

চারা তৈরি–
লেবুর চারা বীজ থেকে উৎপন্ন হয়।তবে গুটি কলম ও কাটিং করেও লেবুর চাষাবাদ করা সম্ভব।

চারা রোপনের পদ্ধতি–
লেবুর ডালের কাটিং সংগ্রহ করে নির্বাচিত জমিতে ভালো করে চাষ করে মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে।তারপর রোপনের জন্য গর্ত কর‍তে হবে।একটি গর্ত হবে অন্যগর্ত থেকে তিন মিটার দূরে।প্রতিটি গর্তের আকার হবে ০.৫ মিটার ×০.৫ মিটার× ০.৫ মিটার।গর্ত প্রস্তত করার পর আবার দুই ভাগ দো-আঁশ মাটি,এক ভাগ গোবর,৩০গ্রাম টিএসপি সার,৩০-৪০গ্রাম পটাশ সার,১০-১৫ গ্রাম পাথর চুন,২০০গ্রাম হারের গুড়া বা ১ কেজি কাঠের ছাই দিয়ে গর্ত ভর্তি করে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে ১০-১২ দিন।এরপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন এভাবেই রেখে দিতে হবে।যখন মাটি ঝুরঝুরে হবে তখন একটি সুস্থ সবল লেবুর কাটিং গর্তে রোপন করতে হবে।কাটিং সোজা করে লাগিয়ে গাছের গোড়ায় হাত দিয়ে মাটি চেপে উঁচু করে দিতে হবে।যাতে গাছের গোড়ায় পানি না জমে।একটি কঞ্চি দিয়ে লেবুর কাটিংটি বেঁধে দিতে হবে।খেয়াল রাখতে হবে মাটি শুকিয়ে গেলে পরিমান মত পানির সেচ দিতে হবে।রোপনের জন্য ৬ মাস বয়সের কাটিং নির্বাচন করতে হবে।কাটিং গুলো রোগ পোকা থেকে মুক্ত হওয়া উচিত।

লেবু গাছে কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক প্রয়োগ–
ভাল ফলন পেতে হলে লেবু গাছে নিয়মিত কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।বর্ষা আসার পূর্বে সাতদিন অন্তর অন্তর কয়েকবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে ভালো হয়।তবে খেয়াল রাখতে হবে যখন গাছে ফুল বা ফল আসবে।তখন কীটনাশক স্প্রে ব্যবহার করাই ভাল।

অঙ্গ বা ডাল-পালা চাটাই–
লেবু গাছকে সঠিকভাবে বাড়তে দিতে হলে এর অবাঞ্চিত ডালপালা গুলো ছাটাই করে দিতে হবে।লেবু গাছের শুকনো এবং রোগাক্রান্ত ডাল গুলো কেটে গাছকে পরিষ্কার করে রাখতে হবে।গাছের বয়স দুই বছর হওয়ার পর লেবু গাছের ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে ২/৩ ডাল রেখে বাকি গুলো কেটে ফেলা দরকার।এ ডাল গুলো এমনভাবে রাখতে হবে যাতে নতুন কুঁড়ি দিয়ে চারদিকে বিস্তার লাভ করতে পারে।

সঠিক পরিচর্যা–
লেবু গাছের গোড়া থেকে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।শুকনা মৌসুমে সেচ দিতে হবে।লক্ষ্য রাখতে হবে বর্যার মৌসুমে যাতে পানি জমে গাছের গোড়া স্যাত স্যাতে না হয়।সেই জন্য প্রয়োজনে নালা করে পানি চলে যাওয়ার পথ তৈরি করে দিতে হবে।সঠিক সময়ে উপরি সার প্রয়োগ করতে হবে।

লেবুর ফলন–
একটি পূর্ন বয়স্ক লেবু গাছ থেকে কমপক্ষে ১৫০-২০০ টি লেবু পাওয়া যায়।এছাড়াও কিছু জাতের লেবু গাছ আছে যেগুলো থেকে সারা বছর ফলন পাওয়া যায়।লেবু সাধারণত পরিপক্ক হলে সংগ্রহ করতে হয়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৯এপ্রিল২০