সুবির পাল একজন কৃষক। চাষাবাদ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিবছর নিজের জমিতে কলা, পান আর পুকুরে মাছ চাষ করেন। তখন তেমন সফল হতে পারেননি। তাই বিভিন্ন স্থানে কৃষি প্রদর্শনীতে যান। যেখানে দেখেন কৃষকের সফলতা; সেখানে কাটান বেশ কয়েক দিন। এভাবে গত কয়েক বছর আগে যশোরে এক লেবুর বাগান দেখে তিনি মুগ্ধ হন। সেখান থেকেই তার লেবু চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
সুবির ফিরে আসেন নিজ গ্রামে। এক আত্মীয়ের সূত্র ধরে একই স্থানে বেশ কয়েক বিঘা জমি তার পছন্দ হয়। মাদারীপুরের শিবচরের বহেরাতলা উত্তর ইউনিয়নের যাদুয়ার চর গ্রামের কলমখার কান্দি গ্রামে ৫ বিঘা জমিতে লিজ নিয়ে শুরু করেন লেবু চাষ। করোনায় লেবুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ বছর বেশ লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন।
এলাকা ও জমির মালিক ফারুক খান সূত্রে জানা যায়, মাত্র ৩০ মাসে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছেন সুবির পাল। চারা রোপণের মাত্র ৬ মাসের মাথায় ফল দেওয়া শুরু হয়। এখন লেবুর বাম্পার ফলনের সময়। লেবু চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে সুবির পালের। গতবছর এ বাগান থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছেন। এবার প্রায় ২৪ লাখ টাকা বিক্রি করবেন বলে আশা করেন সুবির। তাই একে লেবুর বাগান না বলে টাকার বাগান বলাই ভালো। লেবু চাষ করে লাভের মুখ দেখতে পেয়ে আরও ২টি বাগান করেন। এলাকার মাটি লেবু চাষে উপযোগী বলে দাবি করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
জানা যায়, ৫ বিঘা জমিতে লেবু চাষ করেন উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের পশ্চিম কাঁচিকাটা গ্রামের বিকাশ পালের ছেলে সুবির পাল। প্রায় আড়াই বছর আগে যাদুয়ারচর গ্রামের কলম খার কান্দির ফারুক খানের কাছ থেকে দশ বছরের জন্য লিজ নিয়ে লেবু চাষ শুরু করেন। বারো মাস ফল দেয় এমন লেবু চারা যশোর থেকে সংগ্রহ করেন। সিডলেস চায়না-৩ গাছের চারা রোপণ করেন। ৬ মাস পর্যন্ত গাছের পরিচর্যা শেষে ফুলের দেখা মেলে। এখন বাগানে বড় ধরনের ১২শ লেবুর গাছ আছে।
প্রত্যেক গাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫-৬টি লেবু সংগ্রহ করা হয়। এতে প্রায় ৫-৬ হাজার লেবু বিক্রি হয় প্রতিদিন। বাগান থেকে পাইকারি বিক্রি হয় ১৫-২০ টাকা হালি। এখন করোনাভাইরাসের কারণে লেবুর চাহিদাও বেড়েছে। এ ছাড়া কলমকাটা লেবুর চারা অহরহ বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি চারা একশ টাকা। এতে প্রতিদিন প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকা বিক্রি করা সম্ভব। বাগানে কাজ করে এলাকার প্রায় ১০-১২টি পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে।
লেবু চাষ করে লাভের মুখ দেখতে পেয়ে অন্য এলাকায় প্রায় ১০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আরও ২টি বাগান করেন সুবির পাল ও ফারুক খান। লেবুতে লাভ দেখে ফারুক খান এখন সুবির পালের সঙ্গে লেবু চাষে নিয়োজিত হয়েছেন। শুধু জমির মালিক ফারুক খানই নন। সুবির পালকে অনুসরণ করে আরও প্রায় ৩০-৩৫টি বাগান গড়ে উঠেছে। এলাকার বেকার যুবকরা গড়ে তোলেন লেবু, পেয়ারা ও আমসহ বিভিন্ন জাতের ফলের বাগান।
জমির মালিক ফারুক খান জানান, পাশের জমিতে বারো মাসে তেমন ফসল হতো না। জমিটা বেশ উঁচু। এখানে পানি ওঠে না। জমিতে আউশ ধান কিংবা পাট ছাড়া তেমন ফসল হয় না। এ কারণে পাশের জমি ইট ভাটার জন্য ভাড়া দিয়েছি। এ ৫ বিঘা জমি লিজ দিয়েছি লেবু চাষের জন্য। বাগানে যে পরিমাণ লেবু হয়, তাতে অন্য ফসলের চেয়ে প্রায় ৩০-৩৫ গুণ বেশি টাকা পাওয়া যায়।
শিবচর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অনুপ রায় বলেন, ‘স্থানীয় বেকার যুবকদের লেবু চাষের ব্যাপারে পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। লেবু চাষের জন্য এলাকার মাটি বেশ উপযোগী। তাই এলাকার মানুষের লেবু চাষে আগ্রহ বেড়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে তাদের সহযোগিতা করি।’
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৪মে২০