লোকসানে দুগ্ধ ও গরু মোটাতাজাকরণ খামারীরা

573

করোনা ভাইরাসের কারনে দেশের এই পরিস্থিতিতে রাজবাড়ী জেলার হোটেল ও মিষ্টির কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে না পারায় চরম বিপাকে পরেছে জেলার ২ শতাধিক দুগ্ধ ও গরু মোটাতাজাকরণ খামারীরা।

দিনের পর দিন হাজার হাজার লিটার দুধ নিয়ে লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা।খামারে কাজ করা শ্রমিকেরা হতাশ হয়ে দিন পার করছেন। লোকসানের ক্ষতি নিয়ে বিপাকে পরা এসব খামারীদের মাথায় এখন ঋণের বড় বোঝা।

জেলার সবচেয়ে বড় দুগ্ধ ও গরু মোটাতাজাকরণ খামার সদরের আলীপুর ইউনিয়নের আলাদীপুর গ্রামের ‘এপিসোড এগ্রো লিমিটেড’।

রোববার (৫ এপ্রিল) সকালে এই খামারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৩ শতাধিক গাভী গরু গুলো দুধের ভারে নড়তে পারছেনা।

শ্রমিকেরা দুধ সংগ্রহে অনিহা প্রকাশ করছে। এসব গাভীর বাছুর গুলো দুধ খেয়ে শেষ করতে পারছেনা। অতিরিক্ত দুধ সংগ্রহ করে তা ড্রামে রাখা হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থানীয় দরিদ্র মানুষের মাঝে দুধ বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এপিসোড এগ্রো লিমিটেড এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন,২০১৩ সালে ব্যাংক ঋণ নিয়ে এই দুগ্ধ ও গরু মোটাতাজাকরণ খামার শুরু করি।

বর্তমানে এই খামারে ৩ শতাধিক উন্নত জাতের গাভী গরু, ২শতাধিক বাছুর ও ২শত ২০টি উন্নত জাতের ষাঁড় পালন করা হচ্ছে।

প্রতিদিন খামারে প্রায় ৯শত লিটার দুধ উৎপাদিত হয়।গত ১০ মার্চের পর থেকে জেলার সকল হোটেল ও মিষ্টির দোকান করোনা ভাইরাসের কারনে বন্ধ রয়েছে।এতে করে খামারে উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে পারছি না।

কোন কোম্পানীও দুধ কিনছে না।এতে করে প্রতিদিনের দুধ উৎপাদন লোকসান হচ্ছে।পাশাপাশি এই খামারে ২৪জন শ্রমিক কাজ করে।তাদের খাবার ও বেতন দিবো কিভাবে তা বুঝতে পারছিনা।

প্রতিদিন প্রায় দেড়লক্ষ টাকা লোকসান হচ্ছে।এরপর তো গরুর খাদ্য, ঔষুধ এর সংকট দেখা দিয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উৎপাদিত দুধ শ্রমিক ও স্থানীয়দের মাঝে বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে।

আমার মত জেলার প্রায় ২শত খামারী এখন ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে লোকসানে পরেছে।সরকারের প্রতি আমাদের আকুল আবেদন তিনি যেন খামারীদের প্রতি সুদৃষ্টি দেন।

থামারের শ্রমিক মোঃ সাদ্দাম বলেন,আমি এই খামারে ৪বছরের বেশি সময় কাজ করছি। এমন খারাপ অবস্থা আগে কখনও হয়নি। মালিক দুধ বাজারে বিক্রি করতে পারছেনা। তাই আমাদের ও বেতন দিতে পারছেনা। এখন আমরা দরিদ্র অসহায় মানুষ পরিবারের সদস্য নিয়ে বিভাবে বাচবো।

জেলা সদরের চককেষ্টপুর এলাকার তরুন গো খামারী মোঃ জাহিদ বলেন,আমার খামারে ৫টি গাভী ও ৫টি ষাঁড় গরু রয়েছে।খাদ্য সংকটের কারনে গরু গুলোকে ভালোভাবে যত্ন নিতে পারছিনা।

দুধ বিক্রি করতে চরম সমস্যা দেখা দিয়েছে।ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আমরা এখন দিশেহারা। সরকারী সহযোগীতা কামণা করছি।

রাজবাড়ী জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ফজলুল হক জানান,দেশের এই পরিস্থিতিতে খামারীরা আসলেই অসহায় হয়ে পড়েছেন। নিয়মিত মোবাইল ও এ্যাপের মাধ্যমে খামারীদের কে নানাবিধ দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তাদের কে বলা হচ্ছে উৎপাদিত দুধ দিয়ে ঘী তৈরী করে স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রি করার।পাশাপাশি ঘী সংরক্ষণ করে রাখাতে বলা হয়েছে। সরকার খামারীদের পাশে সহযোগীতার জন্য আছেন।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৮এপ্রিল২০